চরে স্কুল মাঠের মাটি কেটে ‘শিশুপার্ক’, ঝুঁকিতে স্থাপনা

Sadek Ali
আমানুল্লাহ আমান, রাজশাহী
প্রকাশিত: ২:৪৪ অপরাহ্ন, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৫:৩৬ পূর্বাহ্ন, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে চর এলাকার দুটি বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ থেকে মাটি তুলে গভীর গর্ত করার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের তত্ত্বাবধানেই এসব মাটি উত্তোলন হয়েছে বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের। তবে প্রশাসনের দাবি, ওই মাঠের মাটি কেটে নিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে একটি শিশুপার্ক। এ নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় মাস খানেক আগে গোদাগাড়ীর চর আষাড়িয়াদহের কানাপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন মাঠের মাটি কেটে অন্যত্র ফেলা হয়। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্বয়ং দাঁড়িয়ে থেকে মাঠ থেকে মাটি তুলে স্কুলের আর একটি খাল ভরাট করান। এতে স্কুলের মাঠে প্রায় গভীর গর্ত তৈরি হয়। কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে সেই গর্ত এখন গভীর পুকুরে রূপ নিয়েছে। ফলে চারপাশের মাটি ধসে পড়ছে এবং সরকারের অর্থায়নে নির্মিত বিদ্যালয়ের দুটি ভবনও ঝুঁকিতে পড়েছে।

আরও পড়ুন: নাজিরপুরে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা

স্থানীয় বাসিন্দা আঙ্গুর হোসেন বলেন, হঠাৎ করে এখানে এত বড় গর্ত খোঁড়া হলো কেন, মানুষ কিছুই জানে না। স্কুলের বাচ্চারা যে কোনো সময় পড়ে গিয়ে প্রাণ হারাতে পারে। দুই স্কুলের পাশে এই খনন কাজ খুব বিপজ্জনক। আমরা চাই, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য সচিব মো. সামিম বলেন, গভীর সেই গর্তে ইতোমধ্যে দুই শিশু পড়ে গিয়ে মৃত্যুমুখে পড়েছিল। স্থানীয়দের সহায়তায় প্রাণে রক্ষা পেলেও ভবিষ্যতে বড় ধরনের প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া বিদ্যালয়ের দুটি ভবনও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

আরও পড়ুন: পিরোজপুর জেলা বিএনপির নতুন কমিটিকে জামায়াতের শুভেচ্ছা

চর আষাড়িয়াদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আফতাব উদ্দিন বলেন, আমি ইউএনও স্যারকে বলেছিলাম, স্যার এখান থেকে মাটি না তুলে অন্য জায়গা থেকে মাটি আনলে ভালো হয়। তখন তিনি আমাকে বলেন, ‘আমি আপনাকে বলছি যে, এখানে পরবর্তীতে মাটি ভরাট করে দিব। তাহলে আপনার সমস্যা কোথায়?’

তিনি আরও বলেন, এটা তো আমার অফিসকে অবগত না করে পারমিশন দিতে পারি না। তখন তিনি (ইউএনও) বলেন, ’আমি ইউএনও বলছি। আপনি আমার ওপরে আস্তা রাখতে পারছেন না?' আমার জায়গা থেকে আমি যথেষ্ট চেষ্টা করেছিলাম যে অন্য কোথা থেকে এনে সেখানে মাঠে ফেলা হোক।

এ বিষয়ে কানাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আজগর আলী বলেন, আমাকে চেয়ারম্যান সাহেব বলেছেন, ‘সরকারি কাজের জন্য এখানকার মাটি তোলা লাগবে।' আমি তাকে বলেছিলাম এখান থেকে না নিয়ে অন্য জায়গা থেকে ব্যবস্থা করার জন্য। তবে তিনি আমার কথা শুনেননি। তিনি ইউএনও মহোদয়ের কথা বলে এখান থেকে মাটি তোলার কথা বলেছেন। তারপরও তিনি এখান থেকে মাটি তুলেছেন, আর প্রথমে আমি জানতাম জায়গাটা গভীর কম হবে কিন্তু পরে দেখলাম জায়গাটা বেশ গভীর হয়ে গেছে। যার ফলে আমার প্রতিষ্ঠান একটু হলেও ঝুঁকিতে আছে।

জানতে চাইলে চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আশরাফুল ইসলাম ভোলা বলেন, আমরা স্কুলের জায়গাতে একটা শিশু পার্ক করবো। সেজন্য বন্যার কারণে কোথাও মাটি পাচ্ছি না। তাই স্কুলের ওই জায়গা থেকে মাটি নিয়ে সেই জায়গাটা রেডি করেছি। স্কুলেরই জায়গা, স্কুলেরই পার্ক। দুই স্কুলের শিক্ষকসহ সকলের সাথে আলোচনা করে সেখান থেকে মাটি তুলেছি। আমরা এটা বুঝিয়ে দিব, কারণ আমরা তো অঙ্গীকারবদ্ধ। সেখান থেকে মাটি তুলে তো অন্য কোথাও নিয়ে যাচ্ছি না।

স্কুল মাঠ থেকে মাটি তোলার সুযোগ আছে কি না প্রশ্নে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বলেন, ‘হ্যাঁ আছে তো। ইউএনও স্যার নিজে উপস্থিত থেকে এ কাজ করিয়েছেন। মাটি তোলার সময় ইউএনও স্যার দাঁড়িয়ে ছিল।’

তবে এ বিষয়ে জানতে গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফয়সাল আহমেদকে মুঠোফোনে কল দিলে প্রথমে পুরো বিষয়টি অজানা বলে দাবি করেন। জেনে জানাচ্ছি বলে কল কেটে দেন। কিছুক্ষণ পর কল দিয়ে তিনি আবারও পুরো বিষয়টি জানতে চেয়ে বলেন, ‘ওটা স্পটে গিয়ে বলতে পারবো কি অবস্থা।’

এরপর তিনি আবারও কল দিয়ে বলেন, আমরা চর আষাড়িয়াদহে একটা শিশু মিনি পার্ক করবো। আমরা স্কুলের সামনে একটা নিচু জায়গা নির্ধারণ করছি। বর্ষার জন্য যারা কাজ করা যাচ্ছে না, তাই একটু মাটি দিয়ে যেন খেলনাগুলো বসাতে পারি। আমরা যখন প্রকল্প নিয়ে যাবো তখন সেখানে ভরাট করে দিব, এরকম পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু চেয়ারম্যান সাহেব মনে হয় গভীর বেশি করে ফেলছে। এটা আমরা চেয়ারম্যান সাহেবকে বলেছি ব্যবস্থা নিতে, ব্যবস্থা নিবেন উনি।