তথ্যের স্বচ্ছতা ও জনঅংশগ্রহণের ঘাটতি: টেকসই ইউনিয়ন পরিষদ গঠনের প্রধান অন্তরায়

দেশের উন্নয়ন, দুর্যোগ মোকাবিলা এবং স্থানীয় উন্নয়ন কার্যক্রমে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ অপরিহার্য। তবে নানা সীমাবদ্ধতা ও দুর্বলতার কারণে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রমে জনগণের অংশগ্রহণ কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছাতে পারছে না। এতে শুধু উন্নয়ন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয় না, বরং দুর্যোগ মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে। ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রমে যে চ্যালেঞ্জগুলো বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে এবং সেগুলোর সমাধানের জন্য কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে, তা নিয়ে এই প্রতিবেদনে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
মাঠপর্যায়ে সঠিক তথ্যের অভাব এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে পড়ার ফলে জনগণ নিজেদের অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে অবগত হয় না। কেন্দ্রীয় পর্যায়ের তথ্য স্থানীয় পর্যায়ে সঠিকভাবে পৌঁছায় না, যা জনগণের আস্থা নষ্ট করে। ইউটিলিটি সার্ভিস, সরকারি প্রকল্প বা উন্নয়ন কাজের বিষয়ে সঠিক তথ্য জনগণের কাছে না পৌঁছালে তাদের অংশগ্রহণও সীমিত হয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন: লক্ষ্মীপুরে পিআর পদ্ধতিকে জুলাই জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে জামায়াতের মানববন্ধন
স্বজনপ্রীতি ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রমের ক্ষেত্রে বড় একটি অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যোগ্য ব্যক্তির পরিবর্তে স্বজন বা পরিচিতদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, যা জনগণের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করে এবং তাদের আগ্রহ কমিয়ে দেয়। জনগণ যখন দেখে যে শুধুমাত্র স্বজনপ্রীতির কারণে কাজ পাচ্ছে, তখন তারা কার্যক্রম থেকে দূরে সরে যায় এবং অংশগ্রহণে আগ্রহ হারায়।
বরাদ্দ সংকট এবং আর্থিক সমস্যা ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রমে আরও এক বাধা সৃষ্টি করছে। পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকা, বিশেষত উন্নয়ন বা দুর্যোগ মোকাবিলার ক্ষেত্রে, কার্যক্রমের সফল বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না। এই সমস্যা আরও ঘনীভূত হয় যখন মাঠপর্যায়ের লজিস্টিক সাপোর্ট ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলোর অভাব থাকে।
আরও পড়ুন: অস্ত্র প্রশিক্ষণের ভাইরাল ভিডিওর দুই সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করেছে মুন্সীগঞ্জ পুলিশ
এদিকে, লজিস্টিক সাপোর্টের অভাবও আরও একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বা সাধারণ স্থানীয় উন্নয়ন কাজের জন্য যথাযথ লজিস্টিক ব্যবস্থা না থাকলে কার্যক্রম প্রভাবিত হয়। জনগণের অংশগ্রহণ তখন সম্ভব নয়, কারণ তারা দেখে যে সঠিক সহায়তা বা পরিবহন ব্যবস্থা নেই।
এ সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ইউনিয়ন পরিষদকে সচেতনতা বৃদ্ধি, তথ্যের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং জনগণের অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। জনগণের অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদে নিয়মিত ক্যাম্পেইন, প্রশিক্ষণ, এবং সেমিনার আয়োজন করা উচিত। এছাড়া, ইউনিয়ন পরিষদের সকল কার্যক্রম এবং বরাদ্দ সম্পর্কিত তথ্য জনসম্মুখে প্রকাশ করা জরুরি। এতে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।
স্বজনপ্রীতি দূর করতে এবং যোগ্যতা ভিত্তিক পদায়ন ও বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে জনগণের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি হয় এবং তারা অংশগ্রহণে আগ্রহী হয়। এই পদক্ষেপটি জনগণের অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি করবে এবং তাদের ভূমিকা আরও সক্রিয় করে তুলবে।
প্রয়োজনীয় বরাদ্দ নিশ্চিত করতে ইউনিয়ন পরিষদের উচিত সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে পর্যাপ্ত অর্থায়ন নিশ্চিত করা, যাতে কার্যক্রমটি নির্বিঘ্নে চলতে পারে। পাশাপাশি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় লজিস্টিক সাপোর্ট নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সমন্বয় বাড়ানো প্রয়োজন।
ইউনিয়ন পরিষদে নিয়মিত অংশগ্রহণমূলক কার্যক্রম চালু করতে হবে, যেখানে জনগণ সরাসরি তাদের সমস্যা ও চাহিদাগুলি তুলে ধরতে পারবে। এতে জনগণ তাদের ভূমিকা এবং দায়বদ্ধতা অনুভব করবে, যা কার্যক্রমে তাদের অংশগ্রহণ আরও বাড়াবে।
এই পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করলে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রমের প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধি পাবে এবং তারা উন্নয়ন প্রক্রিয়ার সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হবে, যার ফলে সমাজের সার্বিক উন্নয়ন এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হবে।