কমলনগরে মব তৈরি করে বিয়ে ও কাবিন: ইউপি সদস্য ও কাজীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা

Sanchoy Biswas
কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ৭:১৪ অপরাহ্ন, ১৩ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৭:১৪ অপরাহ্ন, ১৩ নভেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে এক তরুণীর সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিবাহের চুক্তিতে কাবিন রেজিস্ট্রি করেছিলেন মাইনউদ্দিন নামের এক যুবক। কিন্তু কাবিনের কয়েক মাস পর যখন তিনি স্ত্রীকে ঘরে তোলার বিষয়ে কথা বলতে তরুণীর বাড়িতে যান, তখনই ঘটে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।

অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় হাবিবুর রহমান, আবদুল মান্নান, ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম ও বাবুল দেওয়ানের নেতৃত্বে একদল যুবক সেখানে মব তৈরি করে মাইনউদ্দিনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। পরে অনৈতিক সম্পর্কের মিথ্যা অভিযোগ তুলে গভীর রাতে কাজী ডেকে ফের কাবিন ও বিয়েতে বাধ্য করা হয়। পুরো ঘটনার ভিডিও ধারণ করে তা ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়, যাতে বলা হয়- অনৈতিক কাজে ধরা পড়ে বিয়ে করেছে যুবকটি।

আরও পড়ুন: রূপগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদী বাঁচাতে ছয় দফা অঙ্গীকার বাস্তবায়নে জামায়াতের র‌্যালি

এতে দুই পরিবারের সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়। পরে ভুক্তভোগী মাইনউদ্দিন গত রবিবার (৯ নভেম্বর) আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি লক্ষ্মীপুর জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) কে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত।

বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সকালে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন টিটু।

আরও পড়ুন: দেবীদ্বারের কৃষিতে ফিরেছে সবুজ হাসি

মামলা সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী মাইনউদ্দিন উপজেলার হাজিরহাট বাজারে ইবনে সিনা পপুলার ডেন্টাল চিকিৎসালয়ের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন। অভিযুক্ত হাবিব ও আবদুল মান্নান ওই চিকিৎসালয়ে প্রবেশ করে প্রথমে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। ভুক্তভোগীর শোর চিৎকারে অভিযুক্তরা তখন পালিয়ে যায়। এতে ভুক্তভোগী মাইনউদ্দিনের উপর ক্ষিপ্ত হয় তারা।

পরবর্তীতে এ ঘটনার দুই মাস পর মাইনউদ্দিন বিবাহের দিনক্ষণ ধার্য করার জন্য পূর্বের কাবিন রেজিস্ট্রি করা হবু স্ত্রীর পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাত করতে তাদের বসতঘরে যান। এই সুযোগে অভিযুক্তরা গুজব রটিয়ে স্থানীয়দের জড়ো করে মব সৃষ্টি করে। পরে মাইনউদ্দিনকে মারধর করে হুজুর ও কাজী ডেকে পুনরায় কাবিন ও বিবাহে বাধ্য করে। এবং অনৈতিক কাজে তারা ধরা পড়েছে বলে ভিডিও করে তা ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়।

তারা অসৎ উদ্দেশ্য সামাজিকভাবে মান-সম্মান ক্ষুণ্ণ করায় ভুক্তভোগী মাইনউদ্দিন ইউপি সদস্য ও কাজীসহ ৮ জনকে আসামী করে আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) তদন্তের নির্দেশ দেন।

ভুক্তভোগী তরুণীর মা নাজমা বেগম বলেন, "মাইনউদ্দিনের সঙ্গে আমার মেয়ের বিবাহের কাবিন রেজিস্ট্রি কয়েক মাস আগে করা হয়েছিল। ঘটনার দিন মাইনউদ্দিনকে বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করার জন্য আমি খবর দিয়ে আনি। এরপর স্থানীয় ইউপি সদস্য বাবুল, সিরাজ ও হাবিবের নেতৃত্বে এলাকায় গুজব ছড়িয়ে শত শত মানুষ জড়ো করে। পরে মাইনউদ্দিনকে মারধর করে আমাদেরকে জিম্মি করে ফেলে। এক পর্যায়ে কাজী ডেকে পুনরায় কাবিন ও বিবাহ রেজিস্ট্রি করে।"

চর ফলকন ইউনিয়নের কাজী (নিকাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার) মোঃ শফি উল্লাহ বলেন, "স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ সিরাজ আমাকে ফোন করে ঘটনাস্থলে নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে দেখি এক-দেড় শত মানুষ উপস্থিত। পরে সকলের সম্মতিতে আমি কাবিন রেজিস্ট্রি করি।"

অভিযুক্ত স্থানীয় চর ফলকন ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফারুক হোসেন বাবুল দেওয়ান ও একই ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার সিরাজুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।

লক্ষ্মীপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি মোঃ শাহাদাত হোসেন টিটু বলেন, "মামলাটি হাতে এসেছে। তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।"