ড. ইউনূসের তিন-শূন্য তত্ত্ব: বৈশ্বিক স্লোগান, জাতীয় নীরবতা

প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর উচ্চাভিলাষী দৃষ্টিভঙ্গি—তিন-শূন্য তত্ত্ব—নিয়ে বিশ্বকে মুগ্ধ করেছেন। শূন্য দুর্নীতি, শূন্য সহিংসতা, শূন্য দারিদ্র্য এই তিনটি লক্ষ্য নিয়ে তাঁর ধারণা আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে তা নিয়ে আলোচনা চলছে, গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হচ্ছে, নীতিনির্ধারক মহলে এটি গুরুত্ব পাচ্ছে। বিদেশে ড. ইউনূস একজন বৈশ্বিক পরিবর্তনের দূত হিসেবে স্বীকৃত।
কিন্তু বাংলাদেশের ভেতরে—যেখানে এই তত্ত্বের জন্ম—রয়েছে শুধু নীরবতা। আর এই নীরবতা বিপজ্জনক।
আরও পড়ুন: অপরাজনীতির হাত থেকে জাতিকে রক্ষার জন্য শক্ত নেতৃত্ব চাই
তত্ত্ব আছে, প্রয়োগ নেই
বছরের পর বছর ড. ইউনূস বিশ্বমঞ্চে এই স্বপ্নের কথা বলে বেড়িয়েছেন। আজ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতার শীর্ষে। স্বপ্নদ্রষ্টা আর বাইরে নেই এখন তিনি ক্ষমতার আসনে।
আরও পড়ুন: রাজনৈতিক অর্থনীতির সংস্কার, সময়ের বড় দাবি
তাহলে কোথায় সেই তিন-শূন্য তত্ত্বের বাস্তবায়ন?
যদি কোথাও এই কাঠামো বাস্তবায়নের উপযুক্ত ক্ষেত্র থাকে, তা বাংলাদেশই। যদি কখনো এর সময় হয়, তবে সেটি এখনই।
কিন্তু বাস্তবতা হলো মাসের পর মাস কেটে যাচ্ছে, অথচ বাংলাদেশে এই তত্ত্ব নিয়ে কোনো ঘোষণা নেই, কোনো নীতির খসড়া নেই, নেই এমনকি স্পষ্ট প্রতিশ্রুতিও।
তিনি কি নিজেই আস্থা হারিয়েছেন?
তাহলে প্রশ্ন উঠবেই ড. ইউনূস কি তাঁর নিজের তত্ত্বের উপর আস্থা রাখেন? যদি রাখেন, তবে কেন তিনি এটি বাংলাদেশে প্রয়োগ করছেন না—যেখানে দুর্নীতি, সহিংসতা ও দারিদ্র্য প্রতিদিনের দুঃসহ বাস্তবতা?
নাকি এ তত্ত্ব আসলে কেবল প্রদর্শনীর জন্য, শ্রোতৃমণ্ডলীর করতালির জন্য, আন্তর্জাতিক সম্মেলনের জন্য? ইউরোপ-আমেরিকার সেমিনারে আলোচনার বিষয় হতে পারে, কিন্তু ঢাকা শহরের রাস্তায় কার্যকর নয়?
যদি তাই হয়, তবে তা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বরং গোটা বিশ্বের জন্য এক ভয়াবহ বার্তা।
আর কোনো অজুহাত নয়ঃ-
বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতি, রাজনৈতিক সহিংসতা ও দারিদ্র্যের অভিশাপে জর্জরিত। তিন-শূন্য তত্ত্ব সরাসরি এই সমস্যাগুলোর সমাধান দাবি করে।
অন্য দেশে এই তত্ত্ব হয়তো স্বপ্নের মতো, কিন্তু বাংলাদেশে এর সুযোগ বাস্তব। কারণ এখানে তত্ত্বও আছে, তত্ত্ববিদও আছেন, এবং তিনি ক্ষমতার শীর্ষে।
এমন এক সমন্বয়ের পরও যদি প্রয়োগ না হয়, তবে আর কোনো অজুহাত গ্রহণযোগ্য নয়।
উত্তরাধিকার হুমকির মুখেঃ-
ইতিহাস নির্মম। যারা সুযোগ পেয়ে সেটিকে নষ্ট করে, তাদের ক্ষমা করে না।
যদি ড. ইউনূস এই তত্ত্ব বাস্তবায়ন না করেন, তবে এর ফলাফল হবে দ্বিমুখী:
• বাংলাদেশের জন্য: আরেকটি প্রতারণা, আরেকটি অপূর্ণ প্রতিশ্রুতি।
• ড. ইউনূসের জন্য: বিশ্বাসযোগ্যতার পতন—দেশে যেমন, বিদেশেও তেমনি।
কারণ তখন প্রশ্ন উঠবে: যদি তিন-শূন্য তত্ত্বের প্রণেতাই তাঁর দেশে তা প্রয়োগ করতে না পারেন, তবে এর প্রকৃত মূল্য কোথায়?
চূড়ান্ত প্রশ্নঃ-
বাংলাদেশ প্রস্তুত। সমস্যাগুলো পরিষ্কার। সমাধানের কাঠামো হাতের নাগালে। তত্ত্ববিদ ক্ষমতায়।
এখন একটাই প্রশ্ন বাকি:
ড. ইউনূস কি তাঁর তিন-শূন্য তত্ত্ব বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করবেন, নাকি এটিকে বিদেশি করতালির জন্য একটি স্লোগান হিসেবেই রেখে দেবেন?
দেশবাসী অপেক্ষায়। বিশ্ব তাকিয়ে আছে। আর ইতিহাস কোনো নীরবতাকে উত্তর হিসেবে মেনে নেবে না।