আনন্দের ঈদযাত্রায় বিষাদের ছায়া
ঢাকা -টাঙ্গাইল সড়কে দুর্ঘটনায় দুই পুত্রসহ পিতার মৃত্যু মর্মান্তিক

সড়ক দুর্ঘটনায় ঈদের আনন্দযাত্রা মর্মান্তিক বিষাদে পরিণত হয়েছে। সড়ক পথের যাত্রায় প্রতিদিন ওই বাড়ছে দুর্ঘটনা। নিরাপদ সড়ক যাত্রা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা একেবারেই ভেঙে পড়েছে। কোথাও কোন শৃঙ্খলা নেই। মঙ্গলবার সকালের ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কে দুর্ঘটনায় দুই পুত্রসহ তার মর্মান্তিক মৃত্যু সর্বত্রই সুখের ছায়া ফেলেছে। আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে সড়ক যাত্রীরা। দুর্ঘটনার পাশাপাশি আছে ডাকাতি ও চিন্তাই এর ঘটনা।
আমাদের টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান দুর্ঘটনার খবরে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় অর্থোপেডিক ওয়ার্ডের একটি শয্যায় শুয়ে আছেন মাকসুদা বেগম নামে বয়স্ক মহিলা । তাঁর হাতে স্যালাইন চলছে। পাশের শয্যায় বসে আছেন ছেলের স্ত্রী মরিয়ম। কোলে রয়েছে তাঁর দুই শিশুসন্তান। তখনো মাকসুদা ও মরিয়ম জানেন না যে দুর্ঘটনায় আহত হয়ে তাঁরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, সেই দুর্ঘটনায় মারা গেছেন তাঁদের পরিবারের তিনজন।মঙ্গলবার সকালে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের করটিয়া বাইপাস এলাকায় মাইক্রোবাস দুর্ঘটনায় মাকসুদার স্বামী আমজাদ মণ্ডল এবং দুই ছেলে রাহাত ও অতুল মণ্ডল ঘটনাস্থলেই মারা যান। আমজাদ মণ্ডলের বাড়ি শেরপুর সদর উপজেলার কামারচর গ্রামে। তিনি পরিবার নিয়ে ঢাকার বাড্ডা এলাকায় থাকতেন। কনস্ট্রাকশন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে বাসের ধাক্কায় নারী নিহত
দুর্ঘটনার পর বেলা দুইটার দিকে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, স্বজনেরা খবর পেয়ে ছুটে এসেছেন। অর্থোপেডিক ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন মাকসুদার মাথায় ব্যান্ডেজ রয়েছে, তাঁকে ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। পাশের শয্যায় বসা মরিয়মের আঘাত ততটা গুরুতর নয়। তাঁর পাশে রয়েছে তিন বছরের ছেলে মাহফুজ ও দেড় বছরের মেয়ে রজমনি। সন্তানদের জড়িয়ে ধরে তিনি ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন। স্বজনদের কাছে স্বামীর খোঁজ জানতে চাইছিলেন। তাঁরা জানান, তাঁর স্বামী, শ্বশুর ও দেবর নিচতলায় ভর্তি আছেন এবং সুস্থ আছেন।
মাকসুদার ভাশুরের ছেলের স্ত্রী পপি বেগম বলেন, ‘একটা পরিবার থেকে তিনজন মানুষ একসাথে চইলা গেছে। এ কথা জানার পর ওদের কী অবস্থা হইব, এত কষ্ট ওরা সহ্য করব কেমনে?’
আরও পড়ুন: ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিটের চেষ্টায় গুলিস্তানের আগুন নিয়ন্ত্রণে
পপি বেগম জানান, ঈদ উপলক্ষে গ্রামের বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর উদ্দেশ্যে মঙ্গলবার সকালে মাইক্রোবাস ভাড়া করে রওনা দেন শেরপুরের দিকে। গাড়িতে ছিলেন স্ত্রী, দুই ছেলে, এক মেয়ে, এক ছেলের স্ত্রী ও দুই নাতি।
পুলিশ জানায়, সকাল ৯টার দিকে মাইক্রোবাসটি করটিয়া বাইপাসের করাতিপাড়া এলাকায় পৌঁছালে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাককে ধাক্কা দেয়। এতে মাইক্রোবাসটি দুমড়েমুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মারা যান আমজাদ মণ্ডল (৬৫), তাঁর ছেলে রাহাত মণ্ডল (২৬) ও অতুল মণ্ডল (১৪)। আহত মাকসুদা বেগম (৬০), মরিয়ম বেগম (২৫) ও গাড়িচালক নাজমুল (৪০) টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। একই গাড়িতে থাকলেও মাকসুদার মেয়ে ও মরিয়মের দুই সন্তান অক্ষত রয়েছেন।
শেরপুর থেকে আসা মরিয়মদের স্বজন আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশ ফোন করে প্রথমে দুর্ঘটনার কথা জানায়। এরপর আমরা শেরপুর থেকে টাঙ্গাইল হাসপাতালে আসি। ঢাকা থেকেও স্বজনেরা এসেছেন।’ নিহত তিনজনের লাশ মির্জাপুরের গোড়াই হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে রয়েছে। স্বজনেরা আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে লাশ গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
আশরাফুল আরও বলেন, নিহত তিনজনের মধ্যে দুজন ছিলেন উপার্জনক্ষম। তাঁদের আয়েই পরিবার চলত। এখন তাঁরা আর নেই, এই পরিবারের সামনে শুধুই অন্ধকার। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শেষ জানে না কেউ। ঈদ যাত্রায় গণপরিবহনের পাশাপাশি প্রাইভেট কার মাইক্রো যে যেভাবে পারছে ছোটেছে বাড়ির দিকে। যানজট বেপরোয়া গাড়ি চলাচল ও বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে এবারের ঈদে যাত্রা। ঢাকা-চট্টগ্রাম ঢাকা-সিলেট ঢাকা ময়মনসিংহ ঢাকা টাঙ্গাইল ফরিদপুর ও ডাকা-আরিচা সড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়ক মহাসড়ক এখন শুধু ঈদযাত্রার পরিবহণ।