১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর

ছাত্রলীগ নেতাকে বহন করা প্রিজনভ্যান ঘিরে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ, ফাঁসি দাবি

Sanchoy Biswas
বাংলাবাজার ডেস্ক
প্রকাশিত: ৬:২২ অপরাহ্ন, ২৩ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ৬:২২ অপরাহ্ন, ২৩ অক্টোবর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

মুন্সীগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় হওয়া তিন হত্যাকাণ্ডসহ সাত মামলার আসামি নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা সাজ্জাত হোসেন সাগরের (৩৫) ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে মুন্সীগঞ্জ আমলি আদালত-১ এর বিচারক মো. আশীকুর রহমান এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আসামি সাজ্জাত হোসেন সাগর মুন্সীগঞ্জ শহর শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর।

আরও পড়ুন: মোহাম্মদপুরে সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণ, নিহত যুবক

আদালত সূত্রে জানা গেছে, দুপুর ২টার দিকে ছাত্রলীগ নেতা সাজ্জাত হোসেন সাগরকে কঠোর নিরাপত্তায় মুন্সীগঞ্জ আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় সেনা সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সাগরকে আদালতে হাজির করার খবরে দুপুর ১টা থেকে আদালত প্রাঙ্গণে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন ছাত্র-জনতা। এ সময় তারা সাগরের ফাঁসি দাবি করে স্লোগান দিতে থাকেন। সাগরকে বহন করা প্রিজনভ্যানে ডিম ছুড়তে থাকেন তারা। এক নারীকে প্রিজনভ্যানকে ঝাড়ু দিয়ে পেটাতে দেখা যায়। প্রিজনভ্যান ঘিরে বিক্ষোভ চলতে থাকলে সেনাসদস্যরা কিছু বিক্ষোভকারীর ওপর চড়াও হয়ে লাঠিপেটা করেন। পরে কঠোর নিরাপত্তায় সাগরকে মুন্সীগঞ্জ আমলি আদালত-১ এ হাজির করা হয়।

এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ সজল হত্যা মামলায় সাগরের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানি হয়। শুনানিতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার পাশাপাশি মুন্সীগঞ্জ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট হালিম হোসেন অংশ নেন। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আরও পড়ুন: ফার্মগেটে শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় সড়ক অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ

এর আগে গতকাল বুধবার গভীর রাতে ঢাকা থেকে সাগরকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) ভোর ৫টার দিকে তাকে মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়।

জানা যায়, ৫ আগস্টের পর দক্ষিণ কোরিয়ায় পালিয়ে গিয়েছিলেন সাগর। কিন্তু ভিসা জটিলতার কারণে সম্প্রতি দেশে ফিরে এসে ঢাকায় বসবাস শুরু করেন। ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট মুন্সীগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা ও হত্যার ঘটনায় দায়েরকৃত একাধিক মামলার আসামি সাজ্জাত হোসেন সাগর।

মুন্সীগঞ্জ সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম সাইফুল আলম বলেন, সাগরের বিরুদ্ধে তিনটি হত্যা মামলাসহ মোট সাতটি মামলা রয়েছে।

মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ফিরোজ কবীর বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যান সাগর। পরে কোরিয়ায় অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে আটক হওয়ার পর বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয় তাকে। সম্প্রতি কঠোর গোপনীয়তায় দেশে ফিরে ঢাকায় বসবাস শুরু করেন সাগর। গত এক মাস যাবৎ সাগরকে অনুসরণ শুরু করে মুন্সীগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশ। গতকাল রাতে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে।

এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) হালিম হোসেন বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মুন্সীগঞ্জে গুলিতে সজল মোল্লা নিহত হন। সজল মোল্লাকে গুলি করেছিলেন এই সাগর। পুলিশ তাকে দীর্ঘদিন যাবৎ খুঁজছিল। গতকাল ঢাকার ডেমরা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। আমরা ১০ দিনের রিমান্ডের পক্ষে যৌক্তিকতা তুলে ধরেছি। ছবি ও ভিডিও প্রমাণ আদালতে দাখিল করেছি। সে অনুযায়ী বিজ্ঞ আদালত তার ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট সারাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থনে মুন্সীগঞ্জে কর্মসূচি পালন করতে জড়ো হয় কয়েক হাজার ছাত্র-জনতা। এ সময় অস্ত্র-ককটেল নিয়ে তাদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। নিরস্ত্র আন্দোলনকারীরা ইটপাটকেল ও লাঠিসোঁটা নিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করলে সংঘর্ষ বাঁধে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন মুন্সীগঞ্জ শহরের উত্তর ইসলামপুর এলাকার সজল মোল্লা, রিয়াজুল ফরাজী ও ডিপজল। এছাড়াও আহত হন শতাধিক ব্যক্তি। এসব ঘটনায় তিনটি হত্যা মামলা ও হত্যাচেষ্টাসহ একাধিক মামলায় আসামি করা হয়েছে সাজ্জাত হোসেন সাগরকে।