এস আলম গ্রুপের জমি ও সম্পদ না কেনার পরামর্শ দিলেন গভর্নর

বাংলাদেশ ব্যাংক এস আলম গ্রুপের সকল ধরনের ব্যাংকিং লেনদেন স্থগিত করেছে। এ পরিস্থিতিতে গ্রুপটি তাদের সম্পদ বিক্রি করার চেষ্টা করছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এ কারণে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জনগণকে এস আলম গ্রুপের কোনো সম্পদ ক্রয় না করার আহ্বান জানিয়েছেন।
বুধবার (২৮ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকে এক সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর এই আহ্বান জানান। তিনি বলেন, "এস আলম গ্রুপ এবং তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক লেনদেন ও ঋণ স্থগিত করা হয়েছে। এখন তারা নামে-বেনামে বিভিন্ন জমি ও সম্পদ বিক্রি করার চেষ্টা করছে। এগুলো ঠেকাতে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
আরও পড়ুন: শেখ পরিবার ও ১০ শিল্পগোষ্ঠীর ৫৭ হাজার কোটি টাকার সম্পদ জব্দ, তদন্তে ১১ সংস্থা
বিভিন্ন ব্যাংকের পুনর্গঠন সম্পর্কে গভর্নর বলেন, এরইমধ্যে ছয়টি ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। খুব শিগগিরই আরো কয়েকটি পুনর্গঠন করা হবে। তারা রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে এখন ব্যাংক পরিচালনা করবে। যদি তারা ঠিকমতো কাজ না করে তাহলে তাদেরকেও প্রয়োজনে পরিবর্তন করা হবে।
মূল্যস্ফীতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু দেশে একটি বড় বন্যা হয়ে গেছে। তাই আগামী দুই-তিন মাস মূল্যস্ফীতি নাও কমতে পারে। তবে আমি আশাবাদী আগামী ৬ থেকে ৮ মাসের মধ্যে ইনফ্লেশন কমে যাবে। কারণ মূল্যস্ফীতি কমাতে দুই দিক থেকেই কাজ করতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা। আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নিয়েছি। সাপ্লাই ঠিক হলে মূল্যস্ফীতি এমনিতেই কমে আসবে।
আরও পড়ুন: ২২ দিনে রেমিট্যান্স এলো ২৫ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আর এক ডলারও বিক্রি করা হবে না। তবে সরকারি পেমেন্ট পরিশোধ করার জন্য মার্কেট থেকে ডলার সংগ্রহ করে আমরা সোনালীসহ অন্যান্য ব্যাংকগুলোকে দিচ্ছি। যেসব এলসি আগে খোলা হয়েছে সেসব দায় পরিশোধ, বিদ্যুতের দেনা পরিশোধ এবং সার আমদানির বিষয় গুরুত্ব দিয়ে মার্কেট থেকে আমরা ডলার ব্যবস্থাপনা করছি। কিন্তু রিজার্ভ থেকে এক ডলারও বিক্রি করার পরিকল্পনা নেই।
আমানতকারীদের ধৈর্য ধারণ করার পরামর্শ দিয়ে গভর্নর বলেন, একসঙ্গে টাকা তুলতে গেলে পৃথিবীর কোনো ব্যাংকে টাকা দিতে পারবে না। তাই যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু ছাড়া অতিরিক্ত টাকা ব্যাংক থেকে এখন না ওঠানোর পরামর্শ রইল। আমরা এরইমধ্যে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করি ব্যাংকগুলো ঘুরে দাঁড়াবে, তবে একটু সময় লাগবে। এতদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। অতিরিক্ত সুদের লোভেই হোক বা যেকোনো কারণেই হোক আপনারা এইসব ব্যাংকগুলোতে টাকা রেখেছিলেন। এখন একসঙ্গে সবাই মিলে টাকা তুলতে গেলে হবে না। যতটুকু না তুললেই নয় ততটুকু তুলুন, এর বেশি নয়।
আগের মতো ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সহায়তা দেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, সরকার টাকা ছাপিয়ে আর কোনো ব্যাংককে অবৈধ সুবিধা দেবে না। আমানতকারীদের আস্থা ব্যাংকগুলোকেই ফেরাতে হবে। এখন টাকা ছেপে সহযোগিতা দিলে পুরো বাংলাদেশের জন্য সমস্যা হবে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। তাই এখন আমানতকারীদের ধৈর্য ধরার কোনো বিকল্প নেই।