ডাকসুতে ডাকসুতে নতুন পদসহ ৮ দফা দাবিতে ছাত্রদলনেতা হামিম-এর স্মারকলিপি প্রদান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের অধিকার নিশ্চিত করতে ডাকসুতে ‘প্রতিবন্ধী ক্ষমতায়ন বিষয়ক সম্পাদক’ পদ সৃষ্টিসহ ৮ দফা দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। শেখ তানভীর বারী হামিমের নেতৃত্বে ‘কমল মেডিএইড, ঢাবি’ সংগঠনের পক্ষ থেকে এই দাবিসংবলিত স্মারকলিপি প্রদান করা হয় উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ড. সায়মা হক বিদিশার কাছে।
দাবিগুলো যথাক্রমে-
আরও পড়ুন: রাতের মধ্যে ছাত্রদলের কমিটি স্থগিত না হলে কঠোর পদক্ষেপ: উমামা ফাতেমা
১. ডাকসুতে প্রতিবন্ধী ক্ষমতায়ন বিষয়ক সম্পাদক পদ সৃষ্টির দাবি:
আগামী ডাকসু নির্বাচনে “Disability Empowerment Affairs Secretary” নামে একটি আলাদা পদ সৃষ্টি করা অত্যন্ত প্রয়োজন। এই পদ সৃষ্টির মাধ্যমে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা তাদের সমস্যাগুলো সরাসরি নেতৃত্ব পর্যায়ে উপস্থাপন করতে পারবেন। এটি ক্যাম্পাসে তাদের অধিকার নিশ্চিতকরণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নেতৃত্ব গঠনে সহায়ক হবে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে প্রতিবন্ধীদের প্রতিনিধি থাকবে যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
আরও পড়ুন: গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় ‘প্রক্সি’ জালিয়াতি: নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে আটক ৩
২. অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও প্রবেশগম্যতা নিশ্চিতকরণ:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় সকল ইনস্টিটিউট, হল ও ফ্যাকাল্টিতে র্যাম্প, লিফটে ভয়েস রিকগনিশনসহ অবকাঠামোগত সুবিধা নিশ্চিত করা আবশ্যক। এটি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ক্লাস, গ্রন্থাগার ও প্রশাসনিক ভবনে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল নিশ্চিত করবে। বর্তমানে অনেক ভবনে প্রবেশই তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ, যা তাদের শিক্ষা গ্রহণের অধিকার বাধাগ্রস্ত করে। তাই সকল জায়গায় পর্যাপ্ত প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
৩. ড. মোর্তজা মেডিকেল সেন্টারে হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের সেবা:
মেডিকেল সেন্টারে হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীরা প্রাথমিক চিকিৎসা পেতে অনেক কষ্ট করেন কারণ ভবনে উঠানামা করা কঠিন। এজন্য নিচতলাতেই তাদের জন্য আলাদা সেবা প্রদান নিশ্চিত করা উচিত। এতে তারা জরুরি অবস্থায় দ্রুত ও সম্মানজনকভাবে চিকিৎসা নিতে পারবেন। এটি একটি মানবিক এবং মৌলিক স্বাস্থ্যসেবার অধিকার।
৪. প্রশাসনিক ভবনে প্রতিবন্ধীদের সেবা নিশ্চিত করা:
প্রশাসনিক ভবনে প্রতিবন্ধীদের জন্য নিচতলায় একটি আলাদা সেবা কেন্দ্র (Service Cell) স্থাপন করা অত্যন্ত জরুরি। এতে একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারী থাকবেন যিনি তাদের প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করবেন। এটি প্রশাসনিক কার্যক্রমে তাদের অংশগ্রহণ সহজ করবে। এর ফলে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা অবহেলিত না থেকে সবার মতই সুবিধা পাবেন।
৫. উপযুক্ত ওয়াশরুম সুবিধা নিশ্চিত করা:
প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত ও নিরাপদ ওয়াশরুম ব্যবস্থা করা এখন সময়ের দাবি। সাধারণ ওয়াশরুম ব্যবহারে তারা নানা সমস্যার সম্মুখীন হন, যা স্বাস্থ্য ও মর্যাদার জন্য হুমকিস্বরূপ। বিশেষভাবে ডিজাইনকৃত ওয়াশরুম তাদের জন্য বাধামুক্ত পরিবেশ তৈরি করবে। এটি একজন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর মৌলিক অধিকার।
৬. সচেতনতামূলক সেমিনারের আয়োজন:
শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সাথে কেমন ব্যবহার করা উচিত এবং তাদের যন্ত্রপাতি (যেমন হুইলচেয়ার, সাদাছড়ি) ব্যবহারের নিয়ম জানানো অত্যন্ত জরুরি। এজন্য সচেতনতামূলক সেমিনার আয়োজন করা যেতে পারে। এতে ভুল ধারণা দূর হবে এবং একটি সহানুভূতিশীল ক্যাম্পাস সংস্কৃতি গড়ে উঠবে। এটি সহনশীলতা ও সামাজিক অন্তর্ভুক্তির পথে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
৭. সাধারণ শিক্ষার্থীদের পরিচালিত ক্লাব গঠন ও অফিস রুম প্রদান:
প্রতিবন্ধীদের জন্য কোনো সংগঠন গঠনে NGO হস্তক্ষেপ না করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে ক্লাব পরিচালনা করা বেশি কার্যকর। এতে করে তারা নিজেরাই নিজেদের নেতৃত্ব বিকাশের সুযোগ পাবে। এই ক্লাবের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য টিএসসিতে একটি নির্দিষ্ট অফিস রুম প্রদান করা প্রয়োজন। এটি তাদের সংগঠিত কার্যক্রম পরিচালনায় স্থায়ী ও স্বতন্ত্র জায়গা নিশ্চিত করবে।
৮. স্কিল ডেভেলপমেন্ট ট্রেনিং ও উচ্চশিক্ষায় সহযোগিতা:
প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য স্কিল ডেভেলপমেন্ট ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে তারা চাকরি ও উদ্যোক্তা কার্যক্রমে অধিক সক্ষম হবে। পাশাপাশি উচ্চশিক্ষায় প্রবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আর্থিক ও একাডেমিক সহযোগিতা নিশ্চিত করা উচিত। এতে তাদের শিক্ষা ও কর্মজীবনে সমান অংশগ্রহণ সম্ভব হবে।
এ বিষয়ে কমল মেডিএইড,ঢাবি’র প্রতিষ্ঠাতা তানভীর বারী হামিম জানান- “ঈদের পূর্বে আমরা কমল মেডিএইডের পক্ষ থেকে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করি। সে আলোচনা থেকে তাদের বহুল উথ্থাপিত সমস্যাসমূহ আজ তুলে ধরা হয়েছে। সেদিনের মিটিংয়ে অর্ধ শতাধিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী উপস্হিত ছিলেন।”