বাড়ছে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা: জুলাইয়ে রেকর্ড সংখ্যক মৃত্যু ও আক্রান্তের চাপ

দেশে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে, যা চলতি জুলাই মাসে রেকর্ড সংখ্যক মৃত্যু ও আক্রান্তের ঘটনা ঘটিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা চলতি বছরে এক মাসে সর্বোচ্চ। একই সময়ে হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন ১০ হাজার ৬৮৪ জন ডেঙ্গু রোগী, যা হাসপাতালের ওপর তীব্র চাপ সৃষ্টি করেছে।
চলতি বছরের ডেঙ্গু পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত মোট ৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ২০ হাজার ৯৮০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ১৯ হাজার ৬৩৫ জন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। মাসভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, জানুয়ারিতে ১০ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩ জন, এপ্রিলে ৭ জন, মে মাসে ৩ জন এবং জুনে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল। মার্চ মাসে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও, জুনের পর জুলাইয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ও আক্রান্তের হার নাটকীয়ভাবে বেড়েছে।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গুতে একদিনে ৩ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪২৮
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ডেঙ্গুর এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক করেছেন। অধ্যাপক ড. আতিকুর রহমান বলেন, "ডেঙ্গু এখন আর সিজনাল রোগ নয়, সারা বছরই এর প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। বৃষ্টি শুরু হলে এটি আরও বাড়ছে।" ডেঙ্গু প্রতিরোধে তিনি মশা নিরোধক ওষুধ ব্যবহারের পাশাপাশি সিটি করপোরেশনকে ব্যাপক প্রচার চালানোর এবং নাগরিকদের সচেতন থাকার আহ্বান জানান।
অন্যদিকে, কীটতত্ত্ববিদ ড. মনজুর চৌধুরী মনে করেন, শুধু জেল-জরিমানা বা জনসচেতনতা বাড়িয়ে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। তিনি সঠিক জরিপ চালিয়ে দক্ষ জনবল দিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: বক্ষব্যাধি হাসপাতালে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীকে গুলি, আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢামেকে ভর্তি
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে দেশে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছিল, যেখানে ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন রোগী আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং ১ হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। বর্তমান পরিস্থিতি অতীতের সেই ভয়াবহতার ইঙ্গিত দিচ্ছে কিনা, তা নিয়ে জনমনে উদ্বেগ বাড়ছে।