দাম বাড়ানোর পর উধাও হওয়া সয়াবিন ফিরছে বাজারে

Any Akter
বাংলাবাজার ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:৪৪ পূর্বাহ্ন, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪ | আপডেট: ৬:০১ পূর্বাহ্ন, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

বাজারে গত কয়েকদিন ধরে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সঙ্কট তীব্র হয়ে ওঠে। ক্রেতারা তেলের জন্য দোকান থেকে দোকান ছুটলেও কোথাও পাওয়া যাচ্ছিল না পণ্যটি।  সোমবার (৯ ডিসেম্বর) বাণিজ্য উপদেষ্টা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক বৈঠকে সয়াবিন তেলের প্রতি লিটারে ৮ টাকা দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। এর পরই বাজারে সয়াবিন তেল ফিরে আসে, কিন্তু দাম বৃদ্ধি পাওয়ার পর তা সরকার নির্ধারিত দামের তুলনায় অনেক বেশি।  মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) বাজারে এসে দেখি ভিন্ন চিত্র। এর অর্থ এতদিন মানুষকে জিম্মি করে যা করা হয়েছে, তা পুরোটাই সিন্ডিকেটের কারসাজি। এখন প্রশ্ন উঠছে, এত দিন উধাও থাকা সয়াবিন তেল এত দ্রুত বাজারে কীভাবে ফিরে এলো? 

সিন্ডিকেট না ভেঙে এভাবে দাম বাড়ানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সাধারণ মানুষ। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দাম বৃদ্ধির ঘোষণার পর ডিলাররা বাজারে তেলের সরবরাহ বাড়িয়েছে। বোতলের গায়ে আগের মূল্য লেখা থাকলেও দোকানদাররা নতুন মূল্যে বিক্রি করছেন। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে চার দিনের ব্যবধানে এসেছে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের চারটি জাহাজ। ৫২ হাজার টন সয়াবিন তেল আনা হয়েছে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল থেকে। 

আরও পড়ুন: কমলো ১২ কেজি এলপি গ্যাসের দাম

সরজমিন মঙ্গলবার রাজধানীর কাওরান বাজার, ফার্মগেট কাঁচা বাজার, মিরপুর, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া ও মোহাম্মদপুর বাজারে ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।

দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাওরান বাজারে দেখা গেছে সব দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেলের। বিক্রি হচ্ছে আগের মূল্যের থেকে বেশি দামে। মানা হচ্ছে না সরকার নির্ধারিত মূল্য। শোয়াইব নামে একজন ক্রেতা জানান, তিনি ৫ লিটার সয়াবিন তেল কিনেছেন। বোতলের গায়ে মূল্য ৮১৮ টাকা থাকলেও তার কাছ থেকে রাখা হয়েছে ৮৮০ টাকা। তিনি বলেন, এভাবে সিন্ডিকেটের কাছে সরকার নতি স্বীকার করলে পরিবর্তনটা আসবে কীভাবে। সিন্ডিকেট না ভেঙে দাম বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই। দেখেন না দাম বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাজারে এখন প্রচুর তেল দেখা যাচ্ছে। এগুলো তো আগে থেকেই স্টক করে রেখেছেন তারা।

আরও পড়ুন: ৫ যুগ পর রাজধানী থেকে সরছে গোল্ডলিফ-বেনসনের কারখানা

পূর্ব রাজাবাজার এলাকার খুচরা ব্যবসায়ী জলিলুর রহমান বলেন, প্রতি বছরই শীত মৌসুমে ডিলার ও মালিকরা এমন কৃত্রিম সংকট তৈরি করেন দাম বাড়ানোর অজুহাতে। এই সিন্ডিকেট ভাঙাটা জরুরি, কয়েক দিন হলো তেল পাচ্ছি না। কেউ অর্ডার কাটতে আসছে না। আজকে থেকে সবাই অর্ডার কাটতে আসছেন। এর মানে তাদের কাছে তেল আগে থেকেই ছিল।

অন্যান্য সকল বাজারে তেলের সরবরাহ বেশি দেখা গেলেও গুলিস্তান কাঁচা বাজারে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। এখানে  বেশির ভাগ দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেল দেখা যায়নি। দুই চারটি দোকানে রয়েছে অল্পকিছু  তেল। মুদি দোকানি লিটন বলেন, আমাদের বাজারে এখনো তেলের  বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট রয়েছে। আজকেও কোনো কোম্পানি অর্ডার কাটতে আসেনি। 

মিরপুর-১০ কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ী সাগর হোসেন বলেন, আজকে আমাদের বাজারে তেলের সরবরাহ মোটামুটি রয়েছে। এখনো স্বাভাবিক হয়নি। তবে অর্ডার কাটতে এসেছে কোম্পানির কর্মকর্তারা। মিরপুরের পল্লবী এলাকার বেশ কয়েকটি দোকান ঘুরে দেখা গেছে এসব দোকানে বিভিন্ন ব্রান্ডের বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে। দাম বাড়ানোর এক দিনের কম সময়ে এই তেল কোথা থেকে আসলো এই প্রশ্নের কোনো জবাব দিতে পারছেন না দোকানিরা। 

উল্লেখ্য, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী  বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ৮ টাকা বাড়িয়ে ১৭৫ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ৮ টাকা বাড়িয়ে ১৫৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।