৪৬০ দিন যুদ্ধ শেষে হামাস ইসরাইল যুদ্ধবিরতি আজ থেকে কার্যকর

৪৬০ দিনের যুদ্ধ শেষে প্রতীক্ষিত যুদ্ধবিরতি কার্যকর হচ্ছে আজ। রোববার (১৯ জানুয়ারি) স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে এই চুক্তি কার্যকর হবে। আর এই বহুল আকাঙ্ক্ষিত যুদ্ধবিরতি শুরু হলে নিজ ঘরে ফেরার প্রহর গুনছেন বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা।
বাড়িঘর হারা, স্বজন হারানো মানুষ ধ্বংসস্তূপের ভেতরে নিজের ঠিকানা খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছেন। তাদের চোখ শুকিয়ে গেছে। অশ্রুহীন অথবা ঝাঁপসা চোখে যতদূর তাকিয়ে দেখছেন- শুধু ধ্বংসস্তূপ। এ মাটি তাদের স্বজনের রক্তে ভেজা। নৃশংস পৈশাচিক হামলা চালিয়ে অকাতরে হত্যা করা হয়েছে সাধারণ ফিলিস্তিনিদের। স্ব-অধিকারের দাবিতে আন্দোলনরত যোদ্ধাগোষ্ঠী হামাসকে শায়েস্তা করার নামে পৃথিবীতে নিরীহ সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে এমন গণহত্যার নজির আর দ্বিতীয়টি আছে বলে জানা নেই। ২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর ইসরাইলে হামলা চালায় হামাস। তাতে নিহত হয় প্রায় ১২০০ মানুষ। হামাস জিম্মি করে প্রায় ২৫০ জন মার্কিনিসহ ইসরাইলবাসীকে। এর প্রতিশোধ নিতে গিয়ে একটি জনপদকে প্রায় নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এ নিয়ে জাতিসংঘ সহ বিশ্ব দরবারে বিভিন্ন স্থানে আলোচনা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ভারতের বিপক্ষে রায় আন্তর্জাতিক আদালতের, স্বাগত জানাল পাকিস্তান
যুদ্ধবিরতির ডাক উঠেছে বহুবার। আলোচনা হয়েছে। কিন্তু ফল আসেনি। অবশেষে মিশর, কাতার, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় কাতারের দোহায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ইসরাইল ও হামাস। হামাস শর্ত মেনে নিলেও টালবাহানা করতে থাকে ইসরাইল। দফায় দফায় তাদের মন্ত্রিপরিষদে আলোচনা হয়। শনিবার কমপক্ষে ৬ ঘণ্টা মিটিং করে চুক্তি অনুমোদন দেয় ইসরাইল। এরপরই তা বাস্তবায়নের সুখবর আসে। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারী শনিবার এ বিষয়ে এক্সে একটি পোস্ট দিয়েছেন। তাতে তিনি বলেছেন- স্থানীয় সময় রোববার সকাল সাড়ে আটটায় (গ্রিনিচ মান সময় সকাল সাড়ে ছয়টায়) এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা আমাদের ভাইদেরকে পরামর্শ দিই আগে থেকে সতর্ক থাকার, সর্বোচ্চ সতর্কতা চর্চা করতে এবং অফিসিয়াল সোর্স থেকে পাওয়া নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করবো। ওদিকে যুদ্ধবিরতির সময় সম্পর্কে নিশ্চিত করেছে ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ)। হামাসের হাতে এখনও আছে ৩৩ জন জিম্মি।
ইসরাইলের হাতে আটক ফিলিস্তিনি শত শত বন্দিবিনিময়ের অংশ হিসেবে পরবর্তী ৬ সপ্তাহে ওই সব জিম্মিকে মুক্তি দেয়া হবে। বাকি যেসব পুরুষ সেনা থাকবে, তাদেরকে মুক্তি দেয়া হবে দ্বিতীয় দফায়। একটি টেকসই যুদ্ধবিরতি এবং ইসরাইলিদের পুরোপুরি প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত বাকি জিম্মিদের মুক্তি দেবে না হামাস। জর্ডান থেকে আল- জাজিরার সাংবাদিক হামদাহ সালহাট বলেন, এখন সবার চোখ গাজার দিকে। তারা দেখতে চাইছেন শেষ সময়টিতে ইসরাইলি সেনাবাহিনী সেখানে কি করে। কারণ, ঐতিহাসিকভাবে সর্বশক্তি নিয়ে গাজা উপত্যকায় ছড়িয়ে পড়েছিল ইসরাইলি সেনাবাহিনী। একটি চুক্তিতে পৌঁছার পর ফিলিস্তিনিদের অভিনন্দন জানিয়েছেন লেবাননের যোদ্ধাগোষ্ঠী হিজবুল্লাহর নেতা নাঈম কাসেম। তিনি বলেছেন, ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের অবিচল (হামাস), এটাই প্রমাণ করে এ ঘটনা। তিনি আরও বলেন, ২০২৪ সালের মে মাসে যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি প্রস্তাব করা হয়েছিল এবারের চুক্তিতে তার কোনো পরিবর্তন নেই। এটা প্রমাণ করে যে প্রতিরোধ যোদ্ধাগোষ্ঠীই সঠিক। ইসরাইল যা চেয়েছিল, তা তারা পায়নি। এর আগে নভেম্বরে হিজবুল্লাহ ও ইসরাইলের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। গাজার পাশাপাশি লেবাননেও যুদ্ধ করছিল ইসরাইল। চুক্তি কার্যকরের পথে থাকলেও ইসরাইল গাজায় হামলা চালিয়ে গেছে। চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শনিবার দিনের শুরুতে আল মাওয়াসি ‘মানবিক এলাকায়’ ইসরাইল আকাশপথে হামলা চালিয়ে হত্যা করেছে কমপক্ষে ৫ জনকে। ফিলিস্তিনি সংবাদ সংস্থা ওয়াফার রিপোর্ট অনুযায়ী, ওই হামলায় তিন সন্তানসহ এক ব্যক্তি ও তার স্ত্রী নিহত হয়েছেন। এছাড়া শুক্রবার গাজা সিটির পূর্বদিকে তুফফা এলাকায় তিন ফিলিস্তিনিকে ইসরাইল ড্রোন হামলা করে হত্যা করেছে। বুধবার যুদ্ধবিরতিতে উভয় পক্ষের মধ্যে সম্মতির ঘোষণা দেয়ার পর থেকে ইসরাইলি বোমা হামলায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১২০ ফিলিস্তিনি।
আরও পড়ুন: গাজায় ইসরায়েলি হামলায় একদিনে ৬৯ জন নিহত, মোট প্রাণহানি ৬০ হাজার ছাড়াল
ওদিকে ওদিকে আল মাওয়াসি এলাকায় ইউনিসেফের কর্মী রোজালিয়া বোল্লেন সতর্ক করেছেন যে, গাজায় মানবিক পরিস্থিতি এখনও করুণ। যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়ে সেখানে কাজ করছেন ত্রাণ বিষয়ক কর্মীরা। তারা বলছেন, বাস্তুচ্যুত মানুষগুলোর অবস্থা ভয়াবহ। জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফে কাজ করেন রোজালিয়া বোল্লেন। তিনি বলেছেন, হাজার হাজার মানুষ সম্পূর্ণ বঞ্চনার মধ্যে বসবাস করছেন। তিনি বলেন, মানুষগুলো যে অস্থায়ী তাঁবুতে বসবাস করছেন সেখানে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নাজুক। গাদাগাদি করে তারা বসবাস করেন। ফলে রোগব্যাধি ভয়াবহভাবে দেখা দিচ্ছে। তিনি বলেন, শুধু বোমা আর বুলেটই নয়, গাজায় বসবাসের পরিস্থিতি এমনই। তিনি বলেন, এটা যুদ্ধবিরতি হলে ত্রাণ সরবরাহ হবে। এটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।