পাকিস্তানের ৫শতাধিক ড্রোন নিক্ষেপ, ভারতের ৭৭ ড্রোন গুঁড়িয়ে দিল পাকিস্তান
এবার ভারত পাকিস্তান পাল্টাপাল্টি ড্রোন যুদ্ধ শুরু

কয়েক দিন ধরে ভারতের পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা পাল্টা হামলা ও সীমান্তে ব্যাপক গোলাগুলির পর এখন দুই দেশের মধ্যে শুরু হয়েছে ড্রোন যুদ্ধ। ভারতের দাবি পাকিস্তান এক রাতেই বৃষ্টির মত পাঁচ শতাধিক ড্রোন নিক্ষেপ করেছে ভারতে। ভারতের গুরুত্বপূর্ণ শহরে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। রাতে ব্ল্যাক আউট করা হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে।
অপরদিকে পাকিস্তানের দাবি তারা কয়েক দিনে পাকিস্তানের উপর নিক্ষেপ করা ৭৭ টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। গতরাতেই ভূপাতিত করেছে ৪৮ টি ড্রোন। ড্রোনগুলি সব ইসরাইলের প্রযুক্তিতে তৈরি। পাকিস্তানের দাবি তারা ভারতের হামলার জবাবে পাল্টা হামলা চালাইনি। তারা কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে। তারা করা জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
আরও পড়ুন: ভারতের বিপক্ষে রায় আন্তর্জাতিক আদালতের, স্বাগত জানাল পাকিস্তান
পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা সাম্প্রতিক কয়েক ঘণ্টায় ২৫টি ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত করেছে। দিল্লি প্রকাশ্যে এ বিষয়ে নীরব ছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরস্পরের বিরুদ্ধে আক্রমণগুলো কয়েক দশক ধরে চলা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় একটি বিপজ্জনক নতুন পর্যায়কে তুলে ধরে। কারণ, উভয় পক্ষই অস্থিতিশীল সীমান্তজুড়ে কেবল কামান নয়, 'চালকবিহীন অস্ত্র' দিয়ে হামলা করছে।
আরও পড়ুন: গাজায় ইসরায়েলি হামলায় একদিনে ৬৯ জন নিহত, মোট প্রাণহানি ৬০ হাজার ছাড়াল
ওয়াশিংটন এবং অন্যান্য বিশ্বশক্তি যখন সংযমের আহ্বান জানাচ্ছে, তখন এই অঞ্চলটি উত্তেজনার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে। নীরব, দূরবর্তী এবং অস্বীকারযোগ্য ড্রোনের মাধ্যমে ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হচ্ছে।
মার্কিন নৌযুদ্ধ কলেজের অধ্যাপক জাহারা মাতিসেক বিবিসিকে বলেন, ভারত-পাকিস্তান সংঘাত একটি নতুন ড্রোন যুগে প্রবেশ করছে - যেখানে 'অদৃশ্য চোখ' এবং ড্রোনগুলো 'নির্ভুলতা বৃদ্ধি' বা 'সংযম নির্ধারণ' করতে পারে।
বুধবার সকাল থেকে পাকিস্তান জানিয়েছে, ভারতীয় বিমান হামলা এবং সীমান্তের ওপার থেকে গুলিবর্ষণে পাকিস্তান এবং পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরে ৩৬ জন নিহত এবং ৫৭ জন আহত হয়েছে। অন্যদিকে, ভারতীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে যে পাকিস্তানের গোলাগুলিতে কমপক্ষে ১৬ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। ভারত দাবি করেছে, তাদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ছিল গত মাসে পহেলগামে ভারতীয় পর্যটকদের ওপর একটি মারাত্মক সন্ত্রাসী হামলার প্রতিশোধ। তবে এই হামলায় ইসলামাবাদ কোনো ভূমিকা অস্বীকার করেছে। একই সঙ্গে ভারতের হামলাকে 'সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন' ও 'যুদ্ধের কর্মকাণ্ড' উল্লেখ করে প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ঘোষণা করেছে, তারা করাচি, লাহোর এবং রাওয়ালপিন্ডিসহ বিভিন্ন শহরে ২৫টি ভারতীয় ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছে। ইসরায়েলি-তৈরি 'হারোপ' ড্রোনগুলো - প্রযুক্তিগত এবং অস্ত্র-ভিত্তিক পাল্টা ব্যবস্থা উভয় পদ্ধতি ব্যবহার করে ধ্বংস দেওয়া হয়েছিল বলে জানা গেছে। ভারত দাবি করেছে, তারা বেশ কয়েকটি পাকিস্তানি বিমান প্রতিরক্ষা রাডার এবং সিস্টেমকে নিষ্ক্রিয় করেছে, যার মধ্যে লাহোরে একটিও রয়েছে। তবে ইসলামাবাদ এটি অস্বীকার করেছে।
লেজার-নির্দেশিত ক্ষেপণাস্ত্র এবং বোমা, ড্রোন এবং মনুষ্যবিহীন বিমানবাহী যান (UAV) আধুনিক যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এটি সামরিক অভিযানের নির্ভুলতা এবং দক্ষতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করে। এগুলো বিমান হামলার জন্য সমন্বয় সাধন করতে পারে অথবা, যদি সজ্জিত থাকে তাহলে সরাসরি লেজার-নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করতে পারে এবং তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধে সহায়তা করতে পারে।
ড্রোনগুলোকে শত্রুর বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ছদ্মবেশ তৈরি বা দমন করার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে, শত্রুর রাডার ধ্বংস করতে বিতর্কিত আকাশসীমায় উড়ে যেতে পারে। অধ্যাপক মাতিসেক বলেন, ইউক্রেন এবং রাশিয়া উভয়ই তাদের যুদ্ধে এটি এভাবেই করে। লক্ষ্যবস্তু তৈরি এবং ট্রিগার করা - এই দ্বৈত ভূমিকা - মানববাহী বিমান ঝুঁকি না নিয়ে শত্রুর বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে অবনমিত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের ড্রোন বহর মূলত ইসরায়েলি-নির্মিত গোয়েন্দা ড্রোন। যেমন: আইএআই সার্চার এবং হেরন, এর সঙ্গে হার্পি এবং হারোপ যুদ্ধাস্ত্রের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়। ড্রোনগুলো ক্ষেপণাস্ত্র হিসাবে কাজ করে, স্বায়ত্তশাসিত গোয়েন্দা এবং নির্ভুল আঘাত করতেও সক্ষম।
লাহোর-ভিত্তিক প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক এজাজ হায়দার বিবিসিকে বলেন, পাকিস্তানের ড্রোন বহর 'বিস্তৃত এবং বৈচিত্র্যময়', যার মধ্যে দেশীয় এবং আমদানিকৃত উভয় ধরনের সিস্টেম রয়েছে। এই তালিকায় 'এক হাজারেরও বেশি ড্রোন' রয়েছে, যার মধ্যে চীন, তুরস্ক এবং দেশীয় নির্মাতাদের মডেল। উল্লেখযোগ্য প্ল্যাটফর্মগুলির মধ্যে রয়েছে চীনা সিএইচ-৪, তুর্কি বায়রাকতার আকিনসি এবং পাকিস্তানের নিজস্ব বুরাক এবং শাহপার ড্রোন।
এদিকে নয়াদিল্লি দাবি করেছে, ভারতে বৃষ্টির মতো ড্রোন হামলা করা হয়েছে। দেশটি জানিয়েছে, গত রাতে প্রায় ৫০০টি ড্রোন হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। শুক্রবার (০৯ মে) ভারতের সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ভারতীয় প্রতিরক্ষা সূত্র জানিয়েছে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী গত রাতে ভারতের বিভিন্ন অবস্থানের দিকে প্রায় ৫০০টি ড্রোন প্রেরণ করেছে। লাদাখের সিয়াচেন বেস ক্যাম্প থেকে গুজরাটের কচ্ছ পর্যন্ত ২৪টি স্থানে এই ড্রোনগুলো দেখা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, এই ড্রোনগুলোর মধ্যে প্রায় ৫০টি ভারতীয় আকাশ প্রতিরক্ষা বন্দুকের সাহায্যে ধ্বংস করা হয় এবং প্রায় ২০টি ‘সফট কিল’ পদ্ধতিতে নামানো হয়েছে। তবে অধিকাংশ ড্রোন অস্ত্রবিহীন ছিল এবং এগুলোর সঙ্গে ক্যামেরা সংযুক্ত ছিল, যা সম্ভবত তাদের স্থল স্টেশনে ফুটেজ প্রেরণ করছিল।
ভারতের ৭৭ ড্রোন গুঁড়িয়ে দেওয়ার দাবি করেছে পাকিস্তান। দেশটি জানিয়েছে, গুলি করে এসব ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে। শুক্রবার ( ০৯ মে) পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
দেশটির রাষ্ট্রীয় মিডিয়া পিটিভির বরাত দিয়ে নিরাপত্তা সূত্রে জানানো হয়েছে, গত কয়েক দিনে ভারতের ৭৭টি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছে পাকিস্তান। বৃহস্পতিবার এ দাবি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৮ মে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাকিস্তান ২৯টি ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত করেছে। এছাড়া গতরাত থেকে আরও ৪৮টি ড্রোন গুলি করে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ‘প্রত্যুত্তরমূলক জবাব’ দিচ্ছে।
পাকিস্তান আইএসপিআরের মতে, কাপুরুষোচিত হামলাগুলো নয়াদিল্লির আতঙ্ক ও কৌশলগত বিশৃঙ্খলার প্রতিফলন। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, ভারতীয় বাহিনী এলওসিতে উল্লেখযোগ্য ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো থেকে ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ চলছে।