গাজায় দুই বছরে মৃত্যুর সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে, জার্মান গবেষণায় নতুন চিত্র
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় গত দুই বছরে ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহত মানুষের সংখ্যা সরকারি হিসাবের চেয়ে অনেক বেশি হতে পারে। জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউটের নতুন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, টানা হামলায় অন্তত এক লাখেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) এ তথ্য প্রকাশ করেছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
জার্মান সাপ্তাহিক পত্রিকা জাইট–এ প্রকাশিত গবেষণা বিশ্লেষণে বলা হয়, গাজায় চলমান যুদ্ধের প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা সরকারি হিসেবে উল্লেখিত সংখ্যার প্রায় দ্বিগুণ হতে পারে। ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর ডেমোগ্রাফিক রিসার্চের গবেষক দলটি বিভিন্ন উৎস থেকে সংগৃহীত তথ্য ব্যবহার করে এই পরিসংখ্যান তৈরি করেছে।
আরও পড়ুন: হংকংয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত বেড়ে ১২৮
গবেষণা প্রকল্পের সহ-নেতা ইরিনা চেন জানান, সম্পূর্ণ সঠিক হিসাব পাওয়া সম্ভব নয়। তবে বাস্তব পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে যতটা সম্ভব নির্ভরযোগ্য অনুমান তুলে ধরা হয়েছে। তাদের হিসাব অনুযায়ী, গত দুই বছরে গাজায় ৯৯ হাজার ৯৯৭ থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার ৯১৫ জনের মৃত্যু ঘটেছে। গড় হিসেবে এই সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১ লাখ ১২ হাজার।
এই বিশ্লেষণে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যের পাশাপাশি পরিবারভিত্তিক স্বাধীন জরিপ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত মৃত্যুসংবাদ এবং অন্যান্য পরোক্ষ উৎসের তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: লেবাননে হিজবুল্লাহর ঘাঁটিতে নতুন হামলা চালাল ইসরাইল
সরকারিভাবে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রথম দুই বছরে ৬৭ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুর কথা জানালেও গবেষণায় দেখা গেছে, বাস্তবে অনেক প্রাণহানি এ হিসাবের বাইরে রয়ে গেছে। বিশেষ করে ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে যারা মারা যায় কিংবা হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই জীবন হারায়—তাদের অনেকের নামই সরকারি নথিতে নেই।
গবেষণা অনুযায়ী, নিহতদের প্রায় ২৭ শতাংশই শিশু (১৫ বছরের নিচে) এবং প্রায় ২৪ শতাংশ নারী। গবেষকরা লিঙ্গ, বয়স ও সামাজিক অবস্থার ভিত্তিতে মৃত্যুহার বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন— বয়স্কদের এবং নারীদের মৃত্যু অনেক সময় নথিভুক্তই হয় না।
এ ছাড়া গবেষণায় গাজায় জীবন প্রত্যাশার দ্রুত পতনের কথাও উঠে এসেছে। যুদ্ধের আগে গাজায় নারীদের গড় আয়ু ছিল ৭৭ বছর এবং পুরুষদের ৭৪ বছর। ২০২৪ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী তা নেমে এসেছে যথাক্রমে ৪৬ ও ৩৬ বছরে—যা দেখায় সাধারণ মানুষের জীবনের ঝুঁকি কতটা ভয়াবহভাবে বেড়েছে।
গবেষক দলটির মতে, যুদ্ধ চলমান থাকার কারণে প্রাণহানির প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে এবং ভবিষ্যতে এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলেই ধারণা।





