লোডশেডিং, তীব্র গরম ও গ্যাস সংকটে অতিষ্ঠ জনজীবন

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ। এরমধ্যে দেশজুড়ে চলছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। রাজধানীর বাইরে জেলা শহর ও গ্রামের অবস্থা আরও খারাপ। অনেক জায়গায় দিনের বেশিরভাগই সময়ই লোডশেডিং হচ্ছে। ঘন ঘন লোডশেডিং হওয়ায় রাতের ঘুম নষ্ট হচ্ছে মানুষের। ব্যাঘাত ঘটছে সেচ কার্যক্রমও।
এক ভুক্তভোগি বলেন, প্রচণ্ড গরম। এখন দিনে কমপক্ষে পাঁচ-সাত ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। গরমের কারণে ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না। লোডশেডিং এর জ্বালায় বাচ্চাটাও অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আমরা এর প্রতিকার চাই।
আরও পড়ুন: ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
এদিকে গ্যাসের সংকটও চরমে। কোনো কোনো এলাকায় ঘরে চুলা জ্বলছে নিবু নিবু করে। কোথাও আবার একেবারে জ্বলছে না। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষ। গ্রামে বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার মধ্যে আছে। ‘ঘূর্ণিঝড় মোখা’র প্রভাবে বিদ্যুৎ ও গ্যাস উৎপাদনে নেমেছে ধস। রাজধানী ঢাকাতেও বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতি দুর্ভোগে ফেলেছে মানুষকে। ঘূর্ণিঝড় মোখা’র কারণে সৃষ্ট বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে দু’দিন সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী। গ্যাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও বেশি সময় লাগবে।
গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ আশা প্রকাশ করে সাংবাদিকদের বলেন, আগামী দুই দিনের মধ্যে লোডশেডিং পরিস্থিতি ভালো অবস্থায় যাবে।
আরও পড়ুন: আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে বিদেশ যেতে দেয়া হয়নি
তিনি বলেন, প্রভাবটা থাকবে। কিছু কিছু জায়গায় লোডশেডিং থাকবে, খুব বেশি না। আমার কাছে মনে হয় খুব অস্বাভাবিক পরিস্থিতি যেটা এখন হয়েছিল, কিছুটা হয়তো আমাদের সমস্যা দেখা গিয়েছিল শনিবার রাত থেকে, এ সমস্যাটা আমরা কাভার করতে পারবো। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমার মনে হয় আগামী দুই দিনের মধ্যে আমরা একটা ভালো অবস্থায় যেতে পারবো। বিদ্যুতের ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারটা এখনো আমার কাছে আসেনি। আসলে হয়তো জানতে পারবো। আমরা মনিটর করছি। সকাল থেকে আমাদের মনিটরিং চলছে।
সূত্র জানায়, শুক্রবার রাত থেকেই আমদানি করা তরল গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। তবে দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে উৎপাদন অব্যাহত আছে। এমনিতে বহু আগে থেকেই গ্যাসের ঘাটতি ব্যাপক। শুক্রবার থেকে আরও ৬০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ কমে গেছে। ফলে গ্যাসচালিত অধিকাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ করে দিতে হয়েছে। দেশে মোট বিদ্যুতের অর্ধেক উৎপাদন করা হয় গ্যাস দিয়ে। গতকাল তাপমাত্রা একটু কমে আসায় বিদ্যুতের চাহিদাও কমেছে বলে সূত্র জানিয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, গতকাল বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৩ হাজার মেগাওয়াটের মতো। সেখানে উৎপাদন নেমে এসেছে সাড়ে ৯ হাজার মেগাওয়াটে। লোডশেডিং করতে হয়েছে সাড়ে ৩ হাজার মেগাওয়াটের উপরে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা আছে সাড়ে ২৬ হাজার মেগাওয়াটের কিছু বেশি।
রাজধানী ঢাকাতেই শনিবার থেকে বিভিন্ন এলাকায় কয়েক ঘণ্টা করে লোডশেডিং হচ্ছে। তা গতকালও অব্যাহত ছিল। গ্রামাঞ্চলের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। শিল্প-কারখানা, বাসাবাড়ি এবং সিএনজি স্টেশনে গ্যাস সংকট আরও নাজুক হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। চট্টগ্রামে গ্যাস না থাকায় কেরোসিন ও ইনডাকশন কুকারের দোকানে ভিড় করছেন নগরবাসী। তবে হঠাৎ চাহিদা সামাল দিতে না পারায় অধিকাংশ মানুষকে দোকান থেকে হতাশা নিয়ে ফিরতে হচ্ছে বলে জানিছেন নগরবাসী। কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড় মোখা’র কারণে গত ২ দিন ধরে আমদানি করা এনএলজি খালাস করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে গত ২ দিন ধরে পাইপলাইনে থাকা গ্যাস দিয়েই চলছিল নগরবাসী। গত ২ দিন গ্যাসের চাপ কম থাকলেও গতকাল থেকে পুরোপুরি গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে।
আমদানি করা এলএনজি প্রক্রিয়াজাত করা হয় কক্সবাজার জেলার মহেশখালীতে। এখানে সাগর উপকূলে এলএনজি টার্মিনাল রয়েছে। মোখা বাংলাদেশের কক্সবাজার, টেকনাফ, সেন্টমার্টিনসহ আশপাশ এলাকা দিয়ে অতিক্রম করে। শুক্রবার থেকে দৈনিক গ্যাসের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৬০ কোটি ঘনফুট। গত বৃহস্পতিবার পেট্রোবাংলা সরবরাহ করেছে ২৮০ কোটি ঘনফুট। শনিবার তা নেমে আসে ২২০ কোটি ঘনফুটে। শুধু দেশী ক্ষেত্রগুলোর গ্যাস দিয়ে চাহিদা মেটানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে পেট্রোবাংলা।