দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী শিমুলের সহযোগীরা নজরদারিতে

সঞ্জীবা গার্ডেনসের সেফটিক ট্যাংক থেকে আনারের মরদেহের অংশ বিশেষ উদ্ধার

Abid Rayhan Jaki
বাংলাবাজার ডেস্ক
প্রকাশিত: ৮:২৬ অপরাহ্ন, ২৮ মে ২০২৪ | আপডেট: ৬:৩৮ পূর্বাহ্ন, ২৯ মে ২০২৪
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চেলে ঠান্ডা মাথার এক ভয়ানক পেশাদার খুনি শিমুল ভূঁইয়া। বহুল আলোচিত ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার কিলিং মিশন বাস্তবায়নকারি এই শিমুল ওরফে আমানুল্লাহ ৮ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তাকে জিজ্ঞাসাাদ করছে। জিজ্ঞাসাবাদে ‘গা শিউরে উঠা’ অনেক তথ্য দিচ্ছেন শিমুল। তার অপরাধ ফিরিস্তি (ক্রিমিনাল রেকর্ড) সম্পর্কে জানতে চাইছেন গোয়েন্দারা। তিনি জানান, তার বাবা নাসির উদ্দিন ভূঁইয়াকে ‘জুতা পেটা’ করার প্রতিশোধ হিসেবে খুন করেছেন খুলনা মহানগর জাতীয় পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং খুলনা শিল্প ও বণিক সমিতির তৎকালীন সভাপতি শেখ আবুল কাশেমকে। শুধু কাশেমকেই নয়, কাশেমের ছেলে দামোদর ইউপি চেয়ারম্যান সরদার আবু সাঈদ বাদলকেও হত্যা করা হয় ২০১০ সালে। বাদলের পর তার ছোট ভাই ফুলতলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সরদার আলাউদ্দিন মিঠু নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে খুন করা হয় ২০১৭ সালের ২৫ মে। যশোরের বহুল আলোচিত সাংবাদিক শামসুর রহমান কেবল হত্যা মামলাতেও এসেছে শিমুলের নাম। এভাবে অন্তত: ২৮-৩০টি হত্যাকাণ্ডে শিমুলের সংশ্লিষ্টতা মিলেছে বলে জানা গেছে। 

এদিকে আনার হত্যা মামলার তদন্তে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় অবস্থান করা ডিবি পুলিশের তদন্ত দলের প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানিয়েছেন, কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জিবা গার্ডেন থেকে মানবদেহের অংশ সাদৃশ গলে যাওয়া একটি বস্তু উদ্ধার করা হয়েছে। যার ওজন চার কেজির মতো। বস্তুটির ফরেনসিক ও ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। 

আরও পড়ুন: ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী

আজ মঙ্গলবার দিনভর সঞ্জিবা গার্ডেনের সেফটিক ট্যাংকি ও স্যুয়ারেজ লাইন ভাঙ্গা হয়। সেখানে মানুষের মৃতদেহের অংশ সাদৃশ কিছু বস্তু উদ্ধার করা হয়েছে। প্রায় গলিত ওই বস্তুটির ওজন প্রায় চার কেজি। সেটা আনারের মৃত দেহ কিনা এটা নিশ্চিত করেনি পুলিশ। জানতে চাইলে মোবাইল ফোনে হারুন অর রশীদ বলেন, মৃতদেহের অংশ সাদৃশ কিছু বস্তু উদ্ধার হয়েছে। আমরা সেটা পরীক্ষাগারে পাঠিয়েছি। তারা ডিএনএ পরীক্ষাসহ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করে রিপোর্ট দিবে। রিপোর্ট পাওয়া পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করতে হবে। এমপি আনার নিখোঁজের ১৬ দিন হয়ে গেছে। খুনের খবরেরও পার হয়েছে এক সপ্তাহের বেশি। 

পুলিশ জানায়, আনারকে হত্যার পর ঘাতকরা লাশ টুকরো টুকরো করে ভাঙরের কৃষ্ণমাটি এলাকার বাগজোলা খালে ফেলা হয়েছিল বলে দাবী করে। কয়েকদিন ধরে সেখানে তল্লাশি চালিয়েও দেহাবশেষের কোনো খোঁজ মেলেনি। 

আরও পড়ুন: আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে বিদেশ যেতে দেয়া হয়নি

এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গে অবস্থানরত ডিবির তদন্ত দলের প্রধান হারুন অর রশীদ বলেছেন, ‘আমরা তথ্য পেয়েছি এমপি আনারের দেহের অংশ বিশেষ কমোডে ফেলা হয়েছে অথবা সেফটিক ট্যাংকিতে ফেলা হয়েছে। পরে আমরা সঞ্জীবা গার্ডেনসের স্যুয়ারেজ লাইন ভাঙতে অনুরোধ করি। ওই ফ্লাটে  তিনটি কমোড রয়েছে, সেগুলো ফ্ল্যাশ করলে ময়লা যেখানে জমা হয় এবং যে স্যুয়ারেজ লাইন, সেটি ভাঙতে পরামর্শ দেই। পরে সে অনুযায়ী সেফটিক ট্যাংকি খোলা হয় এবং সুয়ারেজ লাইন ভাঙ্গা হয়েছে। সেখান থেকে মানবদেহের অংশ সাদৃশ কিছু বস্ত উদ্ধার করা হয়েছে।’  ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ জানান আসামিদের বক্তব্য অনুযায়ী আমরা শ্রমিক লাগিয়ে সঞ্জীবা ভবনের সুয়ারেজ লাইন ওরসেপটিক ট্যাংকি ভেঙ্গে তল্লাশি করা হয়। সেখান থেকে মানবদেহের বেশ কিছু টুকরা পচা গলা দুর্গন্ধযুক্ত বস্তু উদ্ধার করা হয়। সিআইডির ফরেন্সিক বিভাগ ও তদন্ত কর্মকর্তারা সুইপারদের সহায়তায় এগুলি পরীক্ষা নিরীক্ষা করছেন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়ার পরেই বলা যাবে এটি এমপি হিসাবে শরীরের অংশ বিশেষ কিনা। তবে আমরা ধারণা করছি এমপি সাহেবকে হত্যার পর  মরদেহটুকরো টুকরো করে কিমা বানিয়ে টয়লেটে ফ্লাস করে।

প্রসঙ্গত, গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য কলকাতায় যান ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগের দলীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। এরপর সেখানেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন তিনি। ১৮ মে পশ্চিমবঙ্গের বরানগর থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন তার পূর্বপরিচিত বরানগরের বাসিন্দা গোপাল বিশ্বাস।  গ্রেপ্তার হওয়া ঘাতকদের স্বীকারোক্তি থেকে জানা যায়, ১৩ মে দুপুরেই আনারকে হত্যা করা হয়েছে।

আনার হত্যায় জড়িত সন্দেহে ঢাকায় ডিবির হাতে গ্রেপ্তার হওয়া তিনজন শিমুল, সেলেস্তি ওরফে সেলে নিস্কি এবং তানভীর ভূইয়া আট দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গতকাল ছিল রিমান্ডের চতুর্থ  দিন। অপরদিকে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া মুম্বাইয়ের কসাই জিহাদ ১২ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। হত্যাকান্ডে অংশ নেওয়া মোস্তাফিজ ওরফে ফয়জুল নামে আরেকজনকে খুঁজছে পুলিশ।