দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

দুই স্ত্রী সন্তানসহ আত্মগোপনে মতিউর

মোস্তাফিজুর রহমান বিপ্লব
প্রকাশিত: ৫:৪৪ অপরাহ্ন, ২৪ জুন ২০২৪ | আপডেট: ৮:৫২ পূর্বাহ্ন, ২৫ জুন ২০২৪
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

দেশত্যাগে আদালতের নিষেধাজ্ঞা আসার আগেই  ছাগলকাণ্ডে এনবিআরের ওএসডি হওয়া মতিউর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গোপনে দেশত্যাগের গুঞ্জন উঠেছে।  কয়েকদিন ধরে মতিউর, তার স্ত্রী ও সন্তানদের মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে। ঢাকার কোন বাসাতেই খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ছেলে ইফাতসহ দ্বিতীয় স্ত্রী মালয়েশিয়া যাওয়ার খবর এসেছে।  দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে সোমবার মতিউর তার প্রথম স্ত্রী ও ছেলের বিরুদ্ধে আদালত দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।  এর আগে থেকেই তারা আত্মগোপনে চলে গেছে। কোন কোন সূত্র বলছে, তাদের সম্পদের ফিরিস্তি প্রকাশের পর সরকারের কঠোর মনোভাব বুঝে গোপনে সীমানা পেরিয়ে ভারত পালিয়ে গেছে তারা।

দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনের প্রেক্ষিতে আলোচিত রাজস্ব বোর্ডের সদ্য ওএসডি কর্মকর্তা মতিউর রহমান, তার স্ত্রী নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ এবং তাদের ছেলে আহম্মেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।   ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন এ আদেশ দেন। দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন এই তথ্য জানিয়েছেন। 

আরও পড়ুন: সেনাবাহিনী প্রধানের নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো অ্যাকাউন্ট নেই: আইএসপিআর

দুদক সচিব নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, মতিউর রহমান ও তার স্ত্রী সন্তান যাতে দেশের বাইরে যেতে না পারেন সেজন্য কমিশনের পক্ষ থেকে একটি আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত থেকে তিন জনের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বিষয়টি পুলিশের ইমিগ্রেশন শাখার মাধ্যমে দেশের সকল বিমানবন্দর, স্থল ও নৌবন্দরে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। 

আদালতে করা দুদকের আবেদনে বলা হয়, মো. মতিউর রহমান সদস্য (শুল্ক ও আবগারি) জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ঢাকা-এর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে দেশে বিদেশে অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ হুণ্ডি ও আন্ডার ইনভয়েসিং ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের নিমিত্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। জানা যায় মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যরা দেশত্যাগের চেষ্টা করছেন। তাই সুষ্ঠ তদন্তের স্বার্থে তার ও পরিবারের সদস্যদের বিদেশ গমন রহিত করা আবশ্যক। 

আরও পড়ুন: দুর্নীতির তদন্তে সাবেক গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নরদের ব্যাংক হিসাব তলব

দুদকের আবেদন যে তিন জনের নাম লেখা হয়েছে তারা হলেন, বরিশাল জেলার মুলাদী থানার চরবাহাদুরপুর গ্রামের আব্দুল হাকিম হাওলাদারের ছেলে মতিউর রহমান, তার প্রথম স্ত্রী নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলা চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ ও মতিউর-লায়লা দম্পতির ছেলে আহাম্মেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণব। দুদকের আবেদনে তাদের পাসপোর্ট, এনআইডি নম্বর, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে। আদালতে আবেদনটি করে দুদকের অনুসন্ধান দলের নেতা আনোয়ার হোসেন। 

কোরবানির ঈদের ছুটির পর অফিস খুললেও তিনি আর অফিসে যাননি মতিউর।  ওএসডি আদেশ পাওয়ার পরও আভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে তিনি যোগদান করেননি। এনবিআর-এর কেউ তার কোন খোঁজ খবর পাচ্ছে না। এমনকি ধানমণ্ডির বাসাতেও থাকেন না। ধানমণ্ডির বাসার গার্ড জানায়, ঢাকা শহরে তাদের একাধিক বাড়ি আছে হয়তো কোথাও থাকতে পারে। ঈদের পরে আর এ বাসায় আসেননি। ড. মতিউর এবং তার স্ত্রী ও রায়পুরা উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেত্রী লাকির দুটি ফোনেই বন্ধ রয়েছে। কয়েকদিন আত্মগোপনে থেকে এ সময়ে প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তারা দেশ ছাড়ার সব প্রস্তুতি সেরেছেন। বিভিন্ন সূত্র জানায়, তারা গত ররিববার বিকেলের দিকে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে পালিয়ে গেছেন।  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অল্প সময়ে ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় তিনি আতঙ্কে ছিলেন।

কারণ তার চেহারা সবার পরিচিত। এক রাজনৈতিক নেতার পরামর্শে তিনি মাথা ন্যাড়া করে দেশ থেকে পালিয়ে যান। মূলত সবার কাছ থেকে চেহারা আড়াল করতে এ কৌশলের আশ্রয় নেন তিনি।  

এর আগে ধানমণ্ডি, কাকরাইল, গুলশানসহ মতিউরের পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের ঠিকানায় বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে কোথাও তাকে পাওয়া যায়নি। আলোচিত এ কর্মকর্তা ক্ষমতার অপব্যবহার করে শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ নামে-বেনামে অর্জন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। দুই স্ত্রী-সন্তানসহ নামে-বেনামে তিনি এসব সম্পদ অর্জন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এর আগে আলোচিত এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকে চার দফা অভিযোগ জমা পড়েছিল। তখন রহস্যজনক কারণে দুদক এ কর্মকর্তার অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করতে পারেনি বলে অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, শুধু দেশেই নয়, বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশের বাইরে পাচার করে স্ত্রী-সন্তানদের নামে আলিশান বাড়ি-গাড়িসহ শত কোটি টাকার সম্পদ করেছেন মতিউর।

জানা যায়, মতিউর রহমানের ছেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাদিক অ্যাগ্রো থেকে ১৫ লাখ টাকায় একটি ছাগল ছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন খামার থেকে ৭০ লাখ টাকার গরু কেনেন বলেও উঠে আসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এরপরই মতিউর রহমানের ছেলের দামি ব্র্যান্ডের ঘড়ি, গাড়ি, আলিশান জীবনযাপন; মতিউর রহমান ও পরিবারের সদস্যদের নামে রিসোর্ট, শুটিং স্পট, বাংলো বাড়ি, জমিসহ নামে-বেনামে সম্পত্তি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।