সাদা পাউডার ও কুকুর রহস্য

কঠোর গোপনীয়তায় চলছে তদন্ত কার্যক্রম

Any Akter
বাংলাবাজার রিপোর্ট
প্রকাশিত: ১২:৫৬ অপরাহ্ন, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ | আপডেট: ৭:৫১ পূর্বাহ্ন, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

সচিবালয় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সরকারের গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি কটুর গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে তদন্ত কার্যক্রম চালাচ্ছে। শুক্রবার থেকে প্রতিদিনই কমিটির সদস্যরা দীর্ঘ বৈঠকে মিলিত হচ্ছে। গণমাধ্যমের সাথে তাদের কেউ কথা না বললেও নিশ্চিত হওয়া গেছে যে এটি একটি পরিকল্পিত নাশকতা। 

বিশেষ করে ৭ নং ভবনের ছয় তলা থেকে নয় তোলা পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় গুলো ও দুজন ছাত্র উপদেষ্টা কক্ষ জ্বালিয়ে দেওয়া নিয়ে রহস্য সৃষ্টি হয়েছে। উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীবের রুমটি সম্পূর্ণ জালিয়ে দেয়া হয়েছে। আরো রহস্য তৈরি হয়েছে ভবনের ফায়ার সিস্টেম ও পানি সরবরাহের পক্ষে যে অবস্থা দেখে। তদন্ত কমিটির পরামর্শে সরকারের অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার তদন্ত করছে। বিশেষ করে সিআইডি পিবিআই ও  গোয়েন্দা সংস্থাও বিষয়টি তদন্ত করছে।

আরও পড়ুন: ৮ উপদেষ্টার বিরুদ্ধে সাত্তারের দুর্নীতির অভিযোগ দায়িত্বজ্ঞানহীন: মন্ত্রিপরিষদ সচিব

এদিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গঠিত আট সদস্যের তদন্ত কমিটির দ্বিতীয় বৈঠকে শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) একাধিক সদস্য ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে পাওয়া সাদা পাউডার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। দুটি প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার প্রতিবেদন রোববার(২৯ ডিসেম্বর) পাওয়া যাবে বলে সভায় জানানো হয়।

সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মৃত একটি কুকুর নিয়েও আলোচনা হয়। কুকুরটি কি আগুন লাগার আগে সেখানে ছিল, নাকি পরে উঠেছে, এ বিষয়ে জানতে চান একাধিক সদস্য।

আরও পড়ুন: ডাকসু নির্বাচন ঘিরে উত্তপ্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

এই কুকুরটি কি সচিবালয়ে পালিত, নাকি আগে থেকে ছিল, তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়। ভবনটিতে ফায়ার অ্যালার্ম ও পানি ছিটানোর নজেল নষ্ট কেন, তা নিয়ে বৈঠকে বুয়েটের একজন সদস্য প্রশ্ন তোলেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত ভবন থেকে সাদা পাউডারের নমুনা সংগ্রহ করে শনিবার তা বুয়েট ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে মৃত কুকুরের নমুনা নিয়ে তদন্তের সিদ্ধান্ত হয়।

গত বুধবার গভীর রাতে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ঘটে। এতে ভবনটির ষষ্ঠ থেকে নবম তলায় অবস্থিত পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের নথিপত্র, কম্পিউটার ও আসবাব পুড়ে যায়। আগুন লাগার কারণ ও উৎস অনুসন্ধানে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বৃহস্পতিবার রাতে ৮ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ওসমান গনিকে। কমিটির প্রথম বৈঠক হয় গত শুক্রবার, দ্বিতীয় বৈঠক হয় শনিবার।

আজ রোববার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। আগামীকাল ৩০ ডিসেম্বর কমিটিকে প্রাথমিক প্রতিবেদন দিতে হবে। কমিটি গঠনের পর ১০ কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। শনিবারের বৈঠকের বিষয়ে তদন্ত কমিটির কোনো সদস্য আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলতে রাজি হননি। তবে বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, আগুন লাগার ‘সময়কে’ (রাত পৌনে ২টা) বিশেষ আমলে নিয়েছে তদন্ত কমিটি। রাতের বেলায় সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, গণপূর্ত অধিদপ্তরের কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

কমিটির সদস্য বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী গণমাধ্যমকে বলেন, এখনো বলার মতো কিছু হয়নি। তদন্তের কাজ চলছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। এখন তা বিচার-বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।

বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) ছিল বড়দিনের ছুটি। সেদিন সব সরকারি অফিস-আদালত বন্ধ ছিল। তবু অস্থায়ী পাস নিয়ে বেশ কয়েকজন অপরিচিত মানুষ সচিবালয়ে ঢুকেছেন বলে বৈঠকে আলোচনা হয়। এরা কারা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

শনিবারের বৈঠকে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত মন্ত্রণালয়গুলোর প্রতিনিধিদের ডাকা হয়। তাঁদের মন্ত্রণালয়ে কী কী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা  রোববারের মধ্যে কমিটির কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সময়ে আগুনের ব্যাপকতা কেন এত বেশি ছিল, সেটিও জানতে চাওয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধারকাজ পরিচালনা করতে গিয়ে ৭ নম্বর ভবনের ফায়ার অ্যালার্ম ও পানি ছিটানোর নজেল নষ্ট দেখেন। কেন নজেল নষ্ট ছিল বা এটা আগে জানানো হয়েছিল কি না, এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয় বৈঠকে। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার কক্ষ কেন পুড়ে ছাই হলো তা-ও অনুসন্ধান করা উচিত বলে বৈঠকে আলোচনা হয়।

এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আজ থেকে তাদের অধীন সংস্থাগুলোর দপ্তরে অস্থায়ী অফিস করবেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সচিবালয়ে প্রবেশের আগে আবেদন গ্রহণ করতে রাজধানীর আবদুল গণি রোডে ডিএমপির ক্রাইম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারে একটি অস্থায়ী সেল গঠন করা হয়েছে।