আবেদ আলী জালিয়াতি

এলজিইডির সহকারী প্রকৌশলী নিয়োগে পিএসসির দুর্নীতি

Sadek Ali
বাংলাবাজার ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:৪৩ পূর্বাহ্ন, ০৬ মে ২০২৫ | আপডেট: ৫:০৭ পূর্বাহ্ন, ০৬ মে ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

সারাদেশে এলজিইডির উন্নয়ন কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে মামলার পর মামলা, আর অভিযোগের পর অভিযোগ। আর এর নেপথ্যে কাজ করছে ২০১৩ সালে পিএসসির বহুল আলোচ্য আবেদ আলী কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রকৌশলীরা। প্রথমে নিয়োগ দেয়া হয় ৫১ জনকে, ৩ বছর পরে ২০১৬ সালে নিয়োগ দেয়া হয় আরো ৩১ জনকে। এ নিয়োগে কোটা সুবিধাও দেয়া হয়েছে। 

১। নিয়োগ প্রক্রিয়া ও কোটা সুবিধা: 

আরও পড়ুন: নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের 'গোপন বৈঠকে' অংশ: মেজর সাদিকুলের স্ত্রীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের আওতায় মোট ১৫৪ জন “সহকারী প্রকৌশলী (পুর)/ উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী” (১ম শ্রেণি) পদে নিয়োগর জন্য পিএসসি ১২ ডিসেম্বর, ২০০৬ সালে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করে, যেখানে ২৮টি পদ কোটার জন্য সংরক্ষিত ছিল।। উক্ত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির উপর মহামান্য আদালতের স্থগিতাদেশ জারি করায় নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকে।

২০০৬ সালে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময়কালে এলজিইডিতে ১৯৯০-২০০৬ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ধরে প্রকল্পে চাকরিরত অনেক পুরকৌশল বিষয়ে ডিগ্রিধারীদের বয়স না থাকায় উক্ত বিজ্ঞপ্তিতে বিধি অনুযায়ী বয়স শিথিল করে বিভাগীয় পরীক্ষার্থী হিসেবে আবেদনের সুযোগ দেয়ার কথা থাকলেও তা রাখা হয়নি।

আরও পড়ুন: ড. ইউনূসের ঘোষণাপত্র দেওয়ার বৈধতা নেই: ফরহাদ মজহার

২০০৬ সালের বিজ্ঞপ্তিতে কোটা পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত থাকায় আওয়ামীপন্থী প্রার্থীরা দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে পিএসসির কতিপয় দুর্নীতি পরায়ণ কর্মচারীর সাথে টাকা-পয়সার লেনদেনের মাধ্যমে ও ক্ষমতার দাপটে এলজিইডিতে চাকুরির সুযোগ পায়। তাদের একটা বড় অংশ যে কট্টর আওয়ামীপন্থী, তার প্রমাণক হলো তারা বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের সক্রিয় সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের এলজিইডির শাখা কমিটিতে ১৮ জন সদস্য রয়েছে ।

২০০৬ সালের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির প্রেক্ষিতে ২৩/০৩/২০১২ খ্রি. তারিখে অনুষ্ঠিত লিখিত পরীক্ষার পূর্বেই মহামান্য হাইকোর্ট থেকে রায় প্র্রাপ্ত প্রকল্পে কর্মরত ৩৩ জন সহকারী প্রকৌশলীকে গত ০৫/১০/২০১০ খ্রি. তারিখে এবং ১০৯ জন সহকারী প্রকৌশলীকে গত ২৫/০৮/২০১১ খ্রি. তারিখে এলজিইডির সাংগঠনিক শূন্য পদে পদায়ন/নিয়মিতকরণ করায় উক্ত বিজ্ঞপ্তির ১৫৪ টি পদের মধ্যে মোট ১৪২ পদ পূরণ হয়ে যায়। ফলে উক্ত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শুধুমাত্র ১২ টি (১৫৪ - ১৪২ = ১২ টি) শূন্য পদের বিপরীতে ১২ জন নিয়োগের সুযোগ ছিল।

.এমতাবস্থায় ১৪২ টি পদ পূরণ হওয়ার পর মাত্র ১২ টি শূন্য পদের বিপরীতে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে ৫১ জন এবং পরবর্তীতে আরও শুধুমাত্র কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ৩২ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। উলেখ্য যে, নতুন করে নিয়োগ প্রদানের পূর্বে জনপ্রশাসন এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হয় - যা নেওয়া হয়নি।

২। পরীক্ষা,  প্রতিযোগিতার মান, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও প্যানেল গঠন: 

পরবর্তী সময়ে উক্ত স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার না করেই ১২/১২/২০০৬ সালের পিএসসির ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির প্রেক্ষিতে লিখিত পরীক্ষা হয় ২৩/০৩/২০১২ সালে। উক্ত বিজ্ঞপ্তিতে ১৫৪ টি পদের বিপরীতে বৈধ আবেদন ছিল ১৫১৮টি। আর লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে নামমাত্র ৩৫২ জন। ৩৫২ জন প্রার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ ১৬২ জন, আর মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেয় মাত্র ১২৭ জন। যারা সবাই বিনা প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হয়। উল্লেখ্য, সাধারণত পিএসসি পরীক্ষায় প্রতিটি পদের জন্য ১৫-২০ জন প্রতিযোগী থাকলেও, আলোচ্য ২০০৬ সালের সার্কুলারভিত্তিক নিয়োগে প্রতিটি পদের বিপরীতে মাত্র ১ (এক) জনেরও কম পরীক্ষার্থী প্রতিযোগিতা করেন, যা সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম। এখানে স্পষ্টত, দীর্ঘ ৬ বছর পরেও বিজ্ঞপ্তিটি বাতিল না করে সহজ উপায়ে মোটা টাকার  বিনিময়ে আবেদ আলী চক্রের মাধ্যমে চাকরি দেয়ার জন্য ২০০৬ সালের পর হতে ২০১২ সাল পর্যন্ত পাসকৃত দশ হাজারের বেশি পুরকৌশল বিষয়ে ডিগ্রিধারীদের নতুন বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অংশগ্রহণ করার সুযোগ না দিয়ে শুধুমাত্র আওয়ামী পন্থীদেরকে চাকরি পাইয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল, যা সংবিধানের ১০২ ধারার পরিপন্থী এবং মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন।

২৩/০৩/২০১২ সালে অনুষ্ঠিত লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ২০১৩ সালে মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণপূর্বক এলজিইডির “সহকারী প্রকৌশলী (পুর)/ উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী” (১ম শ্রেণি) এর ৭৮ (আটাত্তর) জনের প্যানেল তৈরী করে ৫২ জনকে স্থায়ী পদে নিয়োগের জন্য  সুপারিশ করে ও ৫১ জনকে নিয়োগ প্রদান করা হয়।

২০০৬ সালের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির আলোকে ২০১৩ ও ২০১৬ সালে মোট ৮২ জন প্রার্থী এলজিইডিতে চাকরি পায়। এদের মধ্যে পুরকৌশল ইঞ্জিনিয়ারিং এর পরিবর্তে ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে  ডিগ্রি অর্জন করেছেন এমন প্রার্থীও ছিল। ফলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত শিক্ষাগত যোগ্যতা পূরণে ব্যর্থ হওয়ার পরও এলজিইডিতে কর্মরত আছেন ।

৩। প্যানেলের মেয়াদ, বিধি লঙ্ঘন ও অতিরিক্ত নিয়োগ: 

.সাক্ষাৎকারে কৃতকার্য প্রার্থীদের মধ্য হতে পিএসসি ৭৮ জনের প্যানেল তৈরী করে  ৫২ জনকে “সহকারী প্রকৌশলী (পুর)/উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী” পদে নিয়োগের জন্য কমিশন সুপারিশ করে। যদিও মাত্র ১২টি পদ শূন্য ছিল। 

সেখানে কোন অপেক্ষামান তালিকা ছিল না।

মনোনয়ন পত্রের তথ্য অনুযায়ী “কমিশনে কৃতকার্য প্রার্থীদের একটি প্যানেল সংরক্ষিত আছে। মনোনীত কোন প্রার্থী চাকুরীতে যোগদান না করলে এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় তা কমিশনকে অবহিত করলে কমিশন উক্ত প্যানেল থেকে প্রার্থী মনোনয়ন দিতে পারে। তবে ভবিষ্যতে শূন্য/সৃষ্ট কোন পদের জন্য প্যানেল থেকে প্রার্থী মনোয়ন দেয়া হবে না এবং প্যানেলের মেয়াদ প্রথমবার প্রার্থী মনোয়নের তারিখ থেকে ১ (এক) বৎসরের বেশি বলবৎ থাকবে না” ।

.পিএসসি কর্তৃক সুপারিশকৃত ৫২ জন প্রার্থীর মধ্যে ৫১ জনই যোগদান করেন, তাহলে আইন অনুযায়ী ১(এক) জন প্রার্থীর বেশি মনোনয়নের সুযোগ নাই। 

কিন্তু পিএসসি পরবর্তীতে ৩২ জন প্রার্থীর জন্য সুপারিশ করেন, যা বিধিবিধান সম্পূর্ণভাবে লংঘন করা হয়েছে। 

৪। আইন ও বিধিবিধান লঙ্ঘনের প্রমাণাদি:

বিগত ০৮/০৭/২০১৩ খ্রি. সালে পিএসসি কর্তৃক নতুন বিজ্ঞপ্তি মানবজমিনে প্রকাশিত হলে উত্তীর্ণ ১২৭ জন প্রার্থীর অবশিষ্টদের মধ্যে থেকে ৩২ জন মহামান্য হাইকোর্টে ভুল তথ্য দিয়ে রিট করেন (৭৫৯১/২০১৩)।

যার প্রেক্ষিতে মহামান্য আদালত গত ০৯/০৩/২০১৪ খ্রি.  তারিখে একটি নির্দেশনা প্রদান করেন, যা নিম্নরূপ-

মহামান্য হাইকোর্ট কর্তৃক নির্দেশনায় স্পষ্টভাবে যা বলা হয়েছে, পিএসসি সেই নির্দেশনাকে সম্পন্নভাবে লংঘন করা হয়েছে নিম্নরুপ-

ক্রমিক নং মহামান্য আদালতের নির্দেশনা আদালতের নির্দেশনার ব্যত্যয়

১। Just Direction Judgement

২। Absorb মহামান্য আদালদের আদেশের ব্যত্য়য় ঘটিয়ে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে সরাসরি নিয়োগ।

৩। Absorbing in the vacant post in 08.07.2013 Circular ২০০৬ সালের বিজ্ঞপ্তি প্রেক্ষিতে ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় সুপারিশকৃত ৫২ জন প্রকৌশলীগণের মধ্য হতে ৫১ জন যোগদান করে, অর্থাৎ শূন্য পদ মাত্র ১ জন।  

আরো উল্লেখ্য যে, রিট নং-৭৫৯১/২০১৩ এর ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর এবং স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক কোন আপীল করা হয়নি। পিএসসি দায়সারাভাবে ৩৬১ দিন পর আপিল করে। যদিও নিয়ম রয়েছে রায় প্রকাশের ৩০-৬০ দিনের মধ্যে আপিল করতে হয়। তবে কোনো রিভিউ করা হয়নি। এ থেকে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, শুধুমাত্র আওয়ামীপন্থী প্রকৌশলীগণদের চাকরি দেওয়ার জন্য পরিকল্পিত একটি আয়োজন।