প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ৮৫তম জন্মদিন আজ

Rashedul Hoque
বাংলাবাজার ডেস্ক
প্রকাশিত: ৮:৪২ পূর্বাহ্ন, ২৮ জুন ২০২৫ | আপডেট: ৩:৫৬ পূর্বাহ্ন, ২৮ জুন ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ৮৫তম জন্মদিন আজ। ১৯৪০ সালের ২৮ জুন চট্টগ্রামের হাটহাজারীর বথুয়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা দুলা মিঞা সওদাগর ও মাতার নাম সুফিয়া খাতুন। তার সহধর্মিণী অধ্যাপক দিনা আফরোজ। ড. ইউনূসের দুই মেয়ে রয়েছেন। 

মুহাম্মদ ইউনূস পড়াশোনায় অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তিনি চট্টগ্রামের কলিজিয়েট স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ৩৯ হাজার ছাত্রের মধ্যে ১৬তম স্থানলাভ করেন। উচ্চ মাধ্যমিকে তিনি চট্টগ্রাম কলেজে পড়াশোনা করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক শেষ করার পর ১৯৬১ সালে চট্টগ্রাম কলেজের অর্থনীতির প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন তিনি।

আরও পড়ুন: অসহায় পরিবারের দুই শিশুকে চিকিৎসা সহায়তা ও অটোরিকশা দিলেন তারেক রহমান

ড. ইউনূস ১৯৬৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার জন্য ফুলব্রাইট স্কলারশিপ লাভ করেন। ১৯৭১ সালে ভান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম ইন ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের মার্সিসবোরোতে মিডিল টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে অর্থনীতির সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন তিনি। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রে একটি নাগরিক কমিটি গঠন করেন এবং অন্যান্য বাংলাদেশিদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তিযুদ্ধের জন্য সমর্থন সংগ্রহ করতে ‘বাংলাদেশ ইনফরমেশন সেন্টার’ পরিচালনা করেন।


আরও পড়ুন: তিন দিনের সফর শেষে কুয়ালালামপুর থেকে দেশে ফিরছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মো. ইউনূস

১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষের সময় ড. ইউনূস দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করেন। সেই সময় তিনি গ্রামীণ অর্থনৈতিক প্রকল্প চালু করেন। ১৯৭৬ সালে পার্শ্ববর্তী জোবরা গ্রামে পরীক্ষামূলকভাবে গ্রামীণ ব্যাংক প্রকল্পটি চালু করেন। ১৯৮৩ সালে এই প্রকল্পটি ‘গ্রামীণ ব্যাংক’ হিসেবে রূপান্তরিত হয়। বাংলাদেশের অধিকাংশ গ্রামে এর কর্মকাণ্ড বিস্তৃত। বাংলাদেশের বাইরেও আমেরিকাসহ গ্রামীণ ব্যাংক পদ্ধতি বিশ্বের ৪০টি দেশে অনুসারী করা হচ্ছে। ১৯৮৭ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারসহ দেশি ও বিদেশি অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেন তিনি। 


২০০৬ সালে দারিদ্র্য বিমোচনে তার অসামান্য অবদানের জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। নোবেল কমিটি তাদের ঘোষণায় উল্লেখ করে, “দারিদ্র্য দূরীকরণে ক্ষুদ্রঋণের মতো একটি উদ্ভাবনী ধারণার জন্য এবং সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তাঁদের প্রচেষ্টার স্বীকৃতিস্বরূপ এই পুরস্কার দেওয়া হলো।”  ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম এবং ২০১০ সালে, কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেলসহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন তিনি। 


নোবেল পুরস্কারের পর ড. ইউনূস সামাজিক ব্যবসার ধারণা প্রচার শুরু করেন। তার মতে, সামাজিক ব্যবসা এমন একটি উদ্যোগ যা মুনাফার জন্য নয়, বরং সামাজিক সমস্যা সমাধানের জন্য পরিচালিত হয়। এটি এমন একটি ব্যবসা যেখানে বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগ ফেরত পান, কিন্তু কোনো লভ্যাংশ নেন না। অর্জিত মুনাফা পুনরায় ব্যবসার সম্প্রসারণে বা নতুন সামাজিক উদ্যোগে বিনিয়োগ করা হয়। এর মাধ্যমে তিনি স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, নবায়নযোগ্য শক্তি এবং কৃষি খাতে বিভিন্ন সামাজিক ব্যবসা গড়ে তুলেছেন।


ড. ইউনূস বর্তমানে গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রমের পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক ব্যবসার ধারণা নিয়ে কাজ করছেন। তিনি জাতিসংঘের মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল (এমডিজি) অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন এবং এখন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনেও অবদান রাখছেন।


গত বছরের জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী সরকার পতনের পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। 


প্রধান উপদেষ্টাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছেন প্রেস সচিব শফিকুল আলম। প্রধান উপদেষ্টার ছবি শেয়ার করে ওই পোস্টে প্রেস সচিব লেখেন, ‘শুভ জন্মদিন, স্যার। আপনার সঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্য আমার জীবনের এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।’