লুটপাটের অভিযোগে মাদকের গোয়েন্দা প্রধানসহ চার কর্মকর্তা ক্লোজড

Any Akter
বাংলাবাজার রিপোর্ট
প্রকাশিত: ১১:২২ পূর্বাহ্ন, ১০ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ১২:২১ অপরাহ্ন, ০৬ অগাস্ট ২০২৫
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে ঢাকা বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক মারফিয়া আফরোজ। ছবিঃ সংগৃহীত
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে ঢাকা বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক মারফিয়া আফরোজ। ছবিঃ সংগৃহীত

মাদক বিরোধী অভিযানের নামে লুটপাট ও ২৩ লাখ টাকা বিপুল পরিমাণ জব্দকৃত মাদকদ্রব্য আত্মসাৎ এর অভিযোগে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর ঢাকা বিভাগীয় গোয়েন্দা প্রধান সহ চার গোয়েন্দা কর্মকর্তা কে প্রত্যাহার করে প্রধান কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক প্রশাসন মোঃ মাসুদ হোসেন পিএএ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বুধবার রাতেই তাদের প্রধান কার্যালয় সংযুক্তির আদেশ করা হয়।  

আদেশে বলা হয় প্রশাসনিক কারণে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে ঢাকা বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক মারফিয়া আফরোজ, একই কার্যালয়ের উপ পরিদর্শক জান্নাতুল ফেরদাউস, সহকারী উপ পরিদর্শক আতাউল হক ও সিপাহী সোহেল রানাকে  অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে সংযুক্তি করা হলো। বর্ণিত কর্মকর্তাগ ৯ জুলাই অপরাহ্নে তাৎক্ষণিক  অবমুক্ত হবেন এবং ১০ জুলাই পূর্বাহ্নে প্রধান কার্যালয় যোগদান করবেন। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন কমে এ আদেশ কার্যকর করা হবে।

আরও পড়ুন: ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী

ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের গোয়েন্দা প্রধান সহকারী  পরিচালক নিজ মারফিয়া আফরোজের নেতৃত্বে টঙ্গী  একমাদক ব্যবসায়ীর বাড়িতে অভিযানের নামে লুটপাট ও আত্মসাৎ এর অভিযোগ উঠে ।  সুনির্দিষ্ট অভিযোগে কদিন ধরেই নজরদারিতে রাখা হচ্ছিল এই টিমকে। খবর পেয়ে আত্মগোপনে চলে যায় সহকারি পরিচালক মরফিয়া আফরোজ।  সুনির্দিষ্ট তথ্য ও গোয়েন্দা সংস্থার অভিযোগের মহাপরিচলকের নির্দেশে ঢাকা বিভাগীয় গোয়েন্দা  সহকারি পরিচালকের অফিস কক্ষটি  উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ প্রথমে  সিলগালা করে দেয়।

সহকারী পরিচালকের কোন হদিস না পাওয়ায় উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে প্রধান কার্যালয়ের পরিচালক অপারেশন অতিরিক্ত ডিআইজি বশির আহমদ, অতিরিক্ত পরিচালক গোয়েন্দা বদরুদ্দিন, বিভাগীয় পরিচালক ও উপ-পরিচালকের এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সিলগালা করা অফিস কক্ষটি বুধবার বিকালে  খোলা হয়।  অফিসের প্রতিটি কাগজ পত্র ও দ্রব্যাদি ইনভেন্টরি করে উদ্ধার করে আবার সিলগালা  করে দেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট  জানায়  মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সাথে ২৩ লক্ষ টাকার চেক, নগদ ২ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা, ও ৫ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়।

আরও পড়ুন: আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে বিদেশ যেতে দেয়া হয়নি

অনুসন্ধানে জানা যায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও অন্যান্য সূত্র জানায় গত ২২ জন  সন্ধ্যা সোয়া  ছয়টায় ঢাকা বিভাগীয় সহকারী পরিচালক গোয়েন্দা মারফিয়া আফরোজের নেতৃত্বে টঙ্গী থানার ৭৩ /৪  দক্ষিণপাড়া জুয়েল  হুসাইন বাসার তৃতীয় তলার উত্তর পাশের ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া  রমিজ উদ্দুদ্দিনের বসত ঘরে তল্লাশি চালায়।  টঙ্গী পশ্চিম থানার মামলার এজাহারে বাদী সহকারি পরিচালক মারফিয়া উল্লেখ করেন  সেখানে অভিযানের সময় তিনটি প্যাকেট থেকে ১৫ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ও একটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল উদ্ধার করে। আসামি রমিজ উদ্দিন কে গ্রেফতার করে টঙ্গী থানায়  সোপর্দ করে।  রমিজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ইয়াবা  ট্যাবলেট সংরক্ষণ ও বহন করেবিক্রি র অভিযোগ আনা হয়।   সহকারী পরিচালক উদ্ধারকৃত  মাদকদ্রব্য ও অন্যান্য মালামাল জব্দ করে অফিসে নিয়ে যায়।  ঘটনার পরপরই আসামি পক্ষ ও পরিবারের সদস্যরা মামলার এজাহার দেখে অভিযানের সময় উদ্ধারকিত সব মালামালের অনেক কিছুই এজাহারে উল্লেখ করেনি।  সহকারি পরিচালক উদ্ধারকৃত চেক ও অন্যান্য মালামাল আত্মসাৎ এর উদ্দেশ্যে নিজ জিমায় অফিসে জমা রেখেছে। 

এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরে ভুক্তভোগী ও টিমের অন্যান্য সদস্যগণ কতৃক  অভিযোগ দেয়া হলে তাৎক্ষণিকভাবে সহকারী পরিচালক গোয়েন্দার অফিস কক্ষটি উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা গিয়ে সিলগালা করেন। বুধবার বিকালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক প্রশাসন অতিরিক্ত ডিআইজি বশির আহমদের নেতৃত্বে সিনিয়র কর্মকর্তারা তল্লাশি করেন। অফিস কক্ষটির তল্লাশির পর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতি আবার সিলগালা  করে রাখা হয়। এ সময় অতিরিক্ত পরিচালক গোয়েন্দা বদর উদ্দিন,  অতিরিক্ত পরিচালক ঢাকা বিভাগ,  উপ-পরিচালক গোয়েন্দা খুরশিদ সহ উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।  ।   এদিকে অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া সহকারী পরিচালক গোয়েন্দা মারফিয়া আফরোদের সাথে যোগাযোগ করা হলে পাওয়া যায়নি ।  সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায় মাদক ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে উদ্ধার করা একটি কোটি টাকার মোটা অংকের চেক ও বিপুলসংখ্যক উদ্ধারের মালামাল   মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়নি।  উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানার পরেই সহকারী পরিচালকেরঅফিসটি  সিলগালা  করার খবরে আত্মগোপনে চলে যায় মারফিয়া আফরোজ।  তবে একটি সূত্র জানায় অসুস্থতার কথা বলে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে সহকারী পরিচালক। টঙ্গীর ওই  অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া  অন্যান্য কর্মকর্তারা হলেন পরিদর্শ সাহরিয়া  শারমিন,  উপ পরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল মামুন,  মোহাম্মদ ্াজানাতুল ফেরদাউস সহকারী উপ পরিদর্শক দর্শক৷ আতাবুল হক  সিপাহী সোহেল রানা,  সাইমুম হাসান গান ও লুৎফর রহমান ।।৷৷ এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হাসান মারুফের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। খুদে বার্তাও জবাব দেননি।  প্রসঙ্গত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে কর্মকর্তাদের মাদকবিরোধী অভিযানের নামে লুট পার্ট ও আত্মসাথের  ঘটনা সম্প্রতি ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে।  গত দুইদিন আগেও টাঙ্গাইল অভিজানের নামে লুটপাট এর ঘটনায় তিন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।