সাবেক আইজিপি বেনজীরের গুলশানের ফ্ল্যাটের জিনিসপত্র নিলামে

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমদের গুলশানের বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটে থাকা জিনিসপত্র নিলামে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আদালত। সোমবার (২১ জুলাই) ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত একটি নিলাম কমিটি গঠন করেছে এবং ফ্ল্যাটটির সম্পদ তালিকা তৈরির পর কয়েক দিনের মধ্যেই তা নিলামে তোলার ঘোষণা এসেছে।
জানা গেছে, গুলশানের র্যাংকন টাওয়ারের চারটি আধুনিক ফ্ল্যাট একত্র করে তৈরি করা হয়েছে বেনজীর আহমদ ও তার পরিবারের বিলাসবহুল বাসস্থান। যেখানে রয়েছে সুইমিং পুল, মিনি থিয়েটার রুম, আলাদা অতিথি বৈঠকখানা, শতাধিক টনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র এবং নানা ধরনের মূল্যবান আসবাব ও পোশাক।
আরও পড়ুন: ৮ উপদেষ্টার দুর্নীতির কথিত অভিযোগ দেয়ার পর সাত্তারের ফোন বন্ধ, বিএনপির অস্বীকার
তালিকাভুক্ত সম্পদের মধ্যে রয়েছে—১২২টি শার্ট, ২৬৬টি প্যান্ট, ৪৯৪টি শাড়ি, ২৫০টি থ্রিপিস, ৭২২টি টি-শার্ট, ৮৮ জোড়া স্যান্ডেল, ৩৫ জোড়া কেডস, ৩৪৭টি ওড়না, ৭৫টি ভ্যানিটি ব্যাগ, ১০৯টি বেডশিট, ৬২২টি লেডিস টপসসহ মোট ২৪৬টি বিভিন্ন ধরণের বিলাসবহুল আইটেম। এছাড়াও রয়েছে ১৯টি ফ্রিজ, বিপুলসংখ্যক এসি এবং থিয়েটার রুমের সরঞ্জাম। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, ফ্ল্যাটে থাকা মূল্যবান আসবাবপত্র পরবর্তী সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত নিলামের বাইরে রাখা হয়েছে।
কমিটির এক সদস্য বলেন, “আমরা যেন ফিলিপাইনের স্বৈরশাসক মার্কোস ও তার স্ত্রী ইমেলদার সম্পদের তালিকা তৈরি করছি মনে হচ্ছে। এত বিলাসবহুল সংগ্রহ একজন সরকারি কর্মকর্তার জন্য ভাবনার বাইরে।”
আরও পড়ুন: গোয়েন্দা জিজ্ঞাসাবাদে সুমাইয়া জাফরিনের দায় স্বীকার করে ভয়ংকর তথ্য
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ইতোমধ্যে বেনজীর আহমদ ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে ১০টির বেশি মামলা দায়ের করেছে। এর মধ্যে বেনজীরের বিরুদ্ধে রয়েছে ৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ২ কোটি ৬২ লাখ টাকার তথ্য গোপনের অভিযোগ। তার স্ত্রী জিশান মির্জা, বড় মেয়ে ফারহীন রিশতা ও ছোট মেয়ে তাহসীন রাইসার বিরুদ্ধেও মোট ৭৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ ও তথ্য গোপনের চারটি পৃথক মামলা করেছে দুদক।
দুদক সূত্র জানিয়েছে, ২০২৪ সালের মে মাসে বেনজীর পরিবারসহ গোপনে দেশত্যাগ করেন। তার বিরুদ্ধে জাল পাসপোর্ট ব্যবহার, অর্থ পাচার ও দুর্নীতির অভিযোগে একাধিক মামলার কার্যক্রম চলমান। তদন্ত কর্মকর্তারা মনে করছেন, দেশত্যাগের সময় তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ, স্বর্ণালংকার ও বৈদেশিক মুদ্রা সঙ্গে করে নিয়ে গেছেন।
আদালতের নির্দেশনায় গঠিত নিলাম কমিটিতে রয়েছে—দুদকের সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইউনিটের পরিচালক (সভাপতি), চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের প্রতিনিধি, বস্ত্র অধিদপ্তর ও ইস্পাত প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রতিনিধি এবং দুদকের উপ-পরিচালক (সদস্য সচিব)। এ কমিটি ইতোমধ্যে সম্পদের তালিকা প্রস্তুত করেছে এবং নিলামের প্রক্রিয়া নির্ধারণ করেছে।
প্রসঙ্গত, বেনজীর আহমদ ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইজিপি পদে দায়িত্ব পালন করেন। তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিপুল সম্পদ অর্জন, দুর্নীতি ও গুম-খুনের অভিযোগে রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে।