পিআর পদ্ধতি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত চক্রান্ত, গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক: রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, "প্রস্তাবিত পিআর পদ্ধতি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি ষড়যন্ত্র" যা দেশের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ।
তিনি বলেন, “বিএনপি গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। গণতন্ত্র মানে ভিন্নমতকে সহ্য করা এবং তা প্রকাশের সুযোগ দেওয়া। আমাদের দৃষ্টিতে, দেশের সব রাজনৈতিক দল ও জোট তাদের নিজস্ব মত, দাবিদাওয়া ও কর্মসূচি প্রকাশের অধিকার রাখে। কিন্তু হঠাৎ করে পিআর পদ্ধতিকে সামনে এনে এটিকে ছাড়া নির্বাচন সম্ভব নয়—এমন অবস্থান নেওয়া উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও গণতন্ত্রকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা।”
আরও পড়ুন: টয়লেট পরিচালনা প্রশিক্ষণে বিদেশ যাচ্ছেন ৩ কর্মকর্তা
বুধবার বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, পিআর পদ্ধতির বিষয়ে জনগণের তেমন কোনো আগ্রহ নেই এবং এ দেশের সাধারণ মানুষ এই পদ্ধতি সম্পর্কে জানেও না। এটি জনগণের চেনা রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও অভ্যস্ত ভোটাধিকার প্রয়োগের প্রথার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। মানুষ চায় পরিচিত, এলাকার প্রার্থীকে ভোট দিতে—অপরিচিত ‘দলীয় তালিকা’ ভিত্তিক ভোটিং সিস্টেম তাদের কাছে অগ্রহণযোগ্য।
আরও পড়ুন: ৩৯ পরিদর্শককে সহকারী পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি
তিনি আরও বলেন, “যখনই কোনো দল মনে করে, একটি পদ্ধতি তাদের রাজনৈতিক সুবিধা দেবে, তখন সেটিকেই জোর করে চাপিয়ে দিতে চায়। এটি রাজনৈতিক ঈর্ষা ও স্বার্থান্বেষী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। পিআর পদ্ধতিকে সামনে আনার পেছনে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র আছে। উদ্দেশ্য হলো, নির্বাচন বানচাল করা।”
বিএনপির এই নেতা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ইসরায়েল, নেপালসহ অনেক দেশে পিআর পদ্ধতির কারণে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছে। এমনকি ফ্রান্সের মতো উন্নত দেশেও এই পদ্ধতি নিয়ে নতুন করে ভাবা হচ্ছে। বাংলাদেশের মতো গণতন্ত্রে অপরিণত দেশে এই পদ্ধতি ধ্বংসাত্মক হতে পারে।
রিজভী উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এর পরীক্ষামূলক প্রয়োগ, যেখানে ব্যাপক কারচুপি হয়েছিল। তিনি বলেন, “যেমনটা ইভিএমে হয়েছে, তেমনভাবে পিআর পদ্ধতির পরীক্ষামূলক প্রয়োগও বিপজ্জনক হতে পারে।”
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, “বিএনপি ১৬–১৭ বছর ধরে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করে আসছে। দলটি ভবিষ্যতেও নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির পথে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। সেইসাথে তারা মনে করে, পিআর পদ্ধতি নিয়ে যদি রাজনৈতিক অঙ্গনে অচলাবস্থা তৈরি হয় বা এটিকে ‘পয়েন্ট অফ নো রিটার্ন’-এ নিয়ে যাওয়া হয়, তাহলে তা কেবল সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার রাজনৈতিক লাভের পথ প্রশস্ত করবে এবং দেশে পুনরায় ‘ভয়াল অরাজকতার’ পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে।”
রিজভী বলেন, “আমরা চাই তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। সব রাজনৈতিক দল একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। পিআর পদ্ধতি নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি না করে বরং বাস্তবসম্মত এবং জনগণকেন্দ্রিক নির্বাচন ব্যবস্থা গঠনে মনোযোগ দেওয়া হোক।”
তিনি আরও বলেন, “বিএনপি মনে করে, নির্বাচন হতে হবে এমন একটি ব্যবস্থায় যা জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটায় এবং যার প্রতি মানুষের বিশ্বাস আছে। পিআর পদ্ধতির মতো একপাক্ষিক প্রস্তাব গণতন্ত্রকে এগিয়ে না নিয়ে বরং বিভ্রান্ত করবে। রাজনৈতিক শক্তিগুলোর প্রতি বিএনপির আহ্বান—জাতীয় স্বার্থে গঠনমূলক সংলাপ ও সমঝোতার পথে হাঁটুন।”
এ সময় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, সহ-দফতর সম্পাদক মুনির হোসেন উপস্থিত ছিলেন।