কুমিল্লার ১৬টি পয়েন্ট দিয়ে ভারতের ত্রিপুরা পাচার হচ্ছে চাঁদপুরের ইলিশ

কুমিল্লার পাঁচটি উপজেলায় প্রায় ১০৬ কিলোমিটার ভারত সীমান্ত এলাকা। বিস্তীর্ণ এ সীমান্তের অধিকাংশ এলাকাই পাহাড় এবং গহিন অরণ্য ঘেরা। এসব সীমান্ত এলাকার অন্তত ১৬টি পয়েন্ট দিয়ে প্রতিরাতে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় টনের পর টন পাচার হচ্ছে চাঁদপুরের ইলিশ। এ কাজে সক্রিয় রয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের কয়েকটি পাচার সিন্ডিকেট চক্র। আসন্ন দূর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে এ চক্রটিসীমান্ত এলাকা দিয়ে ইলিশ ও মাদক পাচারে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এসব সিন্ডিকেটের মধ্যে রয়েছে, বুড়িচংয়ের মুরগি শাহীন, হৃদয়, সাহেবাবাদের রুহুল আমিন মেম্বার, ফারুক মিয়া, ফেন্সি রুবেল, শিবের বাজারের জুয়েলসহ একাধিক সিন্ডিকেট চক্র। তবে এসব সিন্ডিকেট চক্রকে ধরতে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছেন বলে জানায় বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরা সদস্যরা।
চক্রটি বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রতি রাতে চাঁদপুরের ইলিশ মাছ সুবিধাজনক পয়েন্ট দিয়ে ত্রিপুরা রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় অবস্থানরত পাচার সিন্ডিকেটের হাতে তুলে দিচ্ছে বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশ। বাংলাদেশের বাজারে ইলিশ মাছ মধ্যবিত্তের নাগালের বাহিরে থাকলেও ত্রিপুরায় ইলিশ বিক্রি হচ্ছে কম দামে। এতে বাংলাদেশের ভোক্তারা যেমন ইলিশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তেমনি বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
আরও পড়ুন: নাজিরপুরে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত কয়েক বছর আগেও চাঁদপুর, নোয়াখালি ও লক্ষ্মীপুর জেলার আশপাশের অঞ্চলের পদ্মা-মেঘনা নদী থেকে প্রচুর ইলিশ মাছ আহরণ করতেন জেলেরা। এক সময়ে চাঁদপুরকে বলা হতো ইলিশের জন্মভূমি। ভরা মৌসুমে বিভিন্ন আড়তে থাকত ইলিশে ভরপুর। মধ্যরাত থেকে সকাল ১০ টা পর্যন্ত ইলিশ ঘাটের আড়তে হাঁকডাক করে নিলামে বিক্রি করা হতো ইলিশ। এসব ইলিশ চাঁদপুর জেলার চাহিদা মিটিয়ে চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন জেলায় চলে যেত। এছাড়াও বিভিন্ন জেলার সাধারণ ক্রেতারা চাঁদপুরে এসে ইলিশ মাছ ক্রয় করতেন। অথচ সম্প্রতি ইলিশের জন্মভূমি চাঁদপুরেই দেখা দিয়েছে ইলিশের সংকট। ভারত ও বাংলাদেশের কয়েকটি সক্রিয় পাচার সিন্ডিকেটের সদস্যরা চাঁদপুরের আড়তগুলোতে ইলিশ মাছ যাওয়ার আগেই রাতের আধারে ইলিশের ট্রলার থেকে অধিকাংশ ইলিশ ক্রয় করে পিকআপে ভরে রাতের মধ্যেই সীমান্তের অরক্ষিত বিভিন্ন সুবিধাজনক এলাকা দিয়ে ভারতে পাচার করে দিচ্ছে। এতে বাজারের খুচরা ও পাইকারী বিক্রেতারা ইলিশ সংকটের কথা বলে সাধারণ ক্রেতাদের কাছে চড়া মূল্যে বিক্রি করেছে। এতে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা ইলিশের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
অনুসন্ধানের আরও জানা গেছে, কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার মথুরাপুর, যশপুর, মুড়াপাড়া, দলকিয়া, আদর্শ সদর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর, বড়জ্বালা, খাড়েরা, বুড়িচং উপজেলার তেলকুপি বাজার, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল, সংকুচাইল, আশাবাড়ী সীমান্ত দিয়ে বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট এসব ইলিশ ভারতে পাচার চক্রের হাতে তুলে দিচ্ছে। এসব চক্রের সদস্য মাদক সিন্ডিকেটের সঙ্গেও জড়িত। তারা ভারতে ইলিশ পাচার করে এর বিনিময়ে বাংলাদেশে মাদক নিয়ে আসার অভিযোগও রয়েছে।
আরও পড়ুন: পিরোজপুর জেলা বিএনপির নতুন কমিটিকে জামায়াতের শুভেচ্ছা
সরেজমিনে গিয়ে আশাবাড়ী সীমান্তবর্তী এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা আশরাফুল ও আলী আজগর জানায়, প্রতি রাতে বরফে ডাকা সাদা বস্তা ও ককসিটে মোড়ানো ৭/৮ পিকআপ ভ্যান আসে সীমান্তে। তারা সীমান্ত এলাকা ম্যানেজ করেই সীমানার ওপারে ত্রিপুরায় ইলিশ পাচার করে। এটা প্রায় প্রতি রাতের চিত্র। এই এলাকায় পাচার চক্রটির সদস্য রয়েছে। তারা খবর রাখেন বিজিবি বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী টহল দেয় কিনা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল দেখলে খবর পৌছে যায় পাচার চক্রের কাছে।
নিশ্চিন্তপুর ও বড়জ্বালা সীমান্ত এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা বলেন, এই সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রচুর মাছ পাচার হচ্ছে। এতে দেশের ও ভারতের একাধিক সিন্ডিকেট চক্র জড়িত। শুনেছি ত্রিপুরায় ৬০০/৭০০ রুপি কেজি ইলিশ বিক্রি হয় অথচ বাংলাদেশে ইলিশ বড় সাইজের সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকা ধরে বিক্রি হচ্ছে। চক্রটি ইলিশের পরিবর্তে বিভিন্ন মাদকদ্রব্য নিয়ে আসে দেশে। এগুলো ক্যামেরা সামনে বললে আমাদের বিপদে পড়তে হবে।
এ বিষয়ে কুমিল্লা ডিবির ওসি মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, সীমান্ত দিয়ে ইলিশ পাচার হচ্ছে এমন কিছু তথ্য আমরা পেয়েছি। এ চক্রটি ধরতে আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। এছাড়াও সীমান্তমুখী সড়ক গুলোতে টহল এবং নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
কুমিল্লা-১০ বিজিবির অধিনায়ক লে.কর্নেল মীর আলী এজাজ বলেন, আসন্ন দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র ইলিশ পাচারের একটি সম্ভাবনা থাকে সেক্ষেত্রে আমরা সীমান্তে তৎপরতা বাড়িয়েছি। ইলিশ যাতে পাচার না হয় আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত আমরা ইলিশ পাচারের কোন তথ্য পায়নি।