জনগণের ওপরে ‘দলীয় এজেন্ডা’ চাপিয়ে পার পাওয়া যাবে না: ডা. জাহিদ

Sanchoy Biswas
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৪:২১ অপরাহ্ন, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৪:২১ অপরাহ্ন, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

জনগণের ওপরে ‘দলীয় এজেন্ডা’ চাপিয়ে পার পাওয়া যাবে না’ বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন।

শুক্রবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির দাবি নিয়ে আন্দোলনরত দলগুলোর প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এই হুঁশিয়ারি দেন।

আরও পড়ুন: টয়লেট পরিচালনা প্রশিক্ষণে বিদেশ যাচ্ছেন ৩ কর্মকর্তা

তিনি বলেন, ‘‘দেশকে একটা অরাজক পরিস্থিতিতে ফেলতে চাচ্ছেন… উদ্দেশ্যটা কী? দেশের মধ্যে একধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা। কিন্তু মনে রাখবেন, এই বাংলাদেশ সেই বাংলাদেশ না। আপনি ইচ্ছা করলেই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারবেন না। যেমন আপনারা (আলোচনা সভায়) এখানে বসে নির্বাচনের জন্য সুন্দর ব্যালট বাক্স নিয়ে এসেছেন, আপনাদের নির্বাচন কমিশন আছে, আপনাদের প্রার্থী আছে, সরাসরি ভোট হবে।”

‘‘আমি তাদেরও বলি, আসেন জনগণের কাছে যান। জনগণ যাকে গ্রহণ করে, আপনি আপনার এজেন্ডা নিয়ে যাবেন, আমরা আমাদের এজেন্ডা নিয়ে যাবো। জনগণ কাকে গ্রহণ করবে আমরা সেই এজেন্ডাকে তাকে আমরা স্যালুট করব। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই জনগণের কথা বলে জনগণের মতামতের ওপরে আপনার দলীয় এজেন্ডা, গোষ্ঠী এজেন্ডা, কোনো দেশীয় অথবা আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের এজেন্ডা চাপিয়ে দিয়ে আপনি মনে করেছেন পার পেয়ে যাবেন সেটি বাংলাদেশের মানুষ ইনশাআল্লাহ হতে দেবে না।”

আরও পড়ুন: ৩৯ পরিদর্শককে সহকারী পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি

তোপখানা রোডে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যালস রিপ্রেজেন্টেটিভ অ্যাসোসিয়েশন (ফারিয়া)’ এর কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মেলন-২৫ এর এই অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এবং দ্বিতীয় পর্ব নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোট গ্রহণ।

‘কর্তৃত্ববাদীতার আওয়াজ শোনা যায়’

জাহিদ বলেন, ‘‘আপনারা কী কেউ কখনো শুনেছেন যে ৫ আগস্টের আগে অথবা এই গত ১৬/১৭ বছরে আমরা কেউ সংখ্যানুপাতিক ভোট অর্থাৎ পিআর চাই? আপনারা শুনেন নাই… এই ধরনের বক্তব্য কারো ছিলো না। আজকে কেউ কেউ বলেন… বলতে দোষ নাই। কারণ গণতন্ত্রের মধ্যে কথা বলবেন দিস ইজ দ্য বিউটি অব ডেমোক্রেসি এবং মত প্রকাশের যে ভিন্নতা থাকবে সেটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য… এর মধ্যে কোনো সমস্যা নাই।”

‘‘কিন্তু যখন আপনি বলেন, আপনার কথা না শুনলে এটা হতে দেবো না, এটা করতে দেবো না তখন কিন্তু কর্তৃত্ববাদীতার আওয়াজ পাওয়া যায়। অর্থাৎ স্বৈরাচার যে ভাষায় কথা বলতো সেটার প্রতিধ্বনি শোনা যায়। এটা কী ঠিক? আপনি ডেমোক্রেসি মানবেন, আপনি আপনার নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোতে দেন। আমরা যদি ক্ষমতায় যাই, আমাকে যদি জনগণ নির্বাচিত করে আমি আগামীতে এই সিস্টেমে যাব। যেমন বিএনপি ৩১ দফার কর্মসূচি দিয়েছিলো… বিএনপি নির্বাচিত কী করবে? ইটস ওপেন ডকুমেন্ট… এটা আজকে দেয়নি, প্রথম দিয়েছে ২০২২ এর ডিসেম্বরে রাষ্ট্র মেরামতের ২৭ দফা কর্মসূচি এবং ২০২৩ এর জুলাইতে দিয়েছে ৩১ দফার কর্মসূচি।”

তিনি বলেন, ‘‘যখন নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসছে… ঐক্যমতের আলোচনা চলছে তখন দেখলাম কেউ কেউ রাস্তায় নামতেছেন, প্রোগ্রাম করতেছেন… দ্যাটস গুড.. প্রোগ্রাম করা ভালো, জনগণকে সচেতন করা ভালো। কিন্তু এর অর্থ এই না যে, আপনি একধরনের কর্তৃত্ববাদীয় আপনার মতামত জনগণের নাম বলে জনগণের অনুমতি না নিয়ে চাপিয়ে দেবেন। এটি কোনো অবস্থাতেই কোনো গণতান্ত্রিক আচরণ নয়।”

‘‘এটি করে আপনারা কী করতে চান? আপনারা কী নির্বাচনটাকে আরও প্রলম্বিত করতে চান। আপনি দেখেন, নেপাল একটা ছোট দেশ। ইউ নিড টু লার্ন ফ্রম নেপাল। যেদিন তত্ত্বাবধায়ক সরকার সেখানে দায়িত্ব নিয়েছেন, সেদিন ওইদিনই পরবর্তী নির্বাচনের তারিখ তারা ঘোষণা করে দিয়েছে। আর আমাদের অন্তবর্তীকালীন সরকারের বয়স ১৩ মাস পার হয়ে ১৪ মাসে পড়ল এবং এখনো মধ্য ফেব্রুয়ারির নির্বাচন আরও কয়েক মাস বাকি আছে... এটাকে প্রলম্বিত করতে চান।”

নির্বাচিত সরকার না থাকায় বৃহৎ আকারে বিনিয়োগ সম্মেলনের পরও বাংলাদেশে বিনিয়োগ আসছে না বলেও তার কারণ তুলে ধরেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।

তিনি বলেন, ‘‘বিনিয়োগ যদি না হয় আর যদি জব অপরচুনিটি ক্রিয়েট না হয় এই বিশাল তরুণ প্রজন্ম, এই যে জেনারেল জেড তারা কোথায় কাজ করবে? তাদের কর্মসংস্থান কীভাবে হবে? কর্মসংস্থানের জন্য বিনিয়োগকারী দরকার। আর সেই বিনিয়োগকারী দেশীয় হোক, বিদেশী হোক তারা চায় স্থিতিশীল সরকার, রাজনৈতিক সরকার, জনগণের সমর্থিত নির্বাচিত সরকার… দ্যাট শুড বি দ্য আওয়ার টার্গেট… এভরিবডির সেটা টার্গেট হওয়া উচিত।”

‘‘সেটি যদি আপনি না করে, সেটিকে প্রলম্বিত করে তাহলে যে স্বৈরাচার আপনার পাশের দেশে বসে আছে এবং আপনার পাশে বসে আছে তাদেরকেই সুবিধা করে দেওয়া হবে।”

‘দোসররাই আপনার আশেপাশেই আছে.. সাবধান’

জাহিদ বলেন, ‘‘আপনার মনে রাখতে হবে, কতিপয় লোক দেশের বাইরে পালিয়ে গেছে কিন্তু মেজরিটি লোক কিন্তু আপনার সমাজে, আপনার পাশেপাশে সর্বত্র আছে… যার জন্যই ঝটিকা মিছিল, অমুক মিছিল-তমুক মিছিল দেখেন না আপনারা।”

‘‘এখন আবার নতুন স্টাইল শুরু হয়ে গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝটিকা মিছিল নাম দেয় কিন্তু ব্যানারটা চেঞ্জ করে... এআইয়ের মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে যে, দুই বছর আগের অন্য রাজনৈতিক দলের মিছিলকে ব্যানার বদল করে ঝটিকা মিছিল বলে চালিয়ে দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। গতকাল আপনারা দেখেছেন একটা পত্রিকা ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং করে তারা বের করেছে যে, ২০২৩ সালের অমুক মিছিলটা তারা (আওয়ামী লীগ) ঝটিকা মিছিল বলে চালিয়ে দিয়েছে। জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য তারা এটা করছে। এই অবস্থায় আপনারা-আমরা যারা মিলিতভাবে এই স্বৈরাচারকে সরানোর জন্য বিগত ১৫/১৬ বছর আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন, কত মানুষ হারিয়ে গেছে… কত মানুষ আহত হয়েছেন, শহীদ হয়েছেন… কাজেই সকলকে সচেতন হতে হবে, ঐক্যবদ্ধ হতে হবে নির্বাচন প্রশ্নে।”

তিনি বলেন, ‘‘যারা নির্বাচিত দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেশের জনগণ তাদেরকে দেয় নাই তাদের পক্ষ থেকে এই (পিআর পদ্ধতির ভোট) আন্দোলন। তাদের যে অভিজ্ঞতা এটি কী বলে? যে জিনিসটা আপনি প্র্যাকটিস করতে চাচ্ছেন সেটা আপনি দেখেন না নেপালে।”

‘‘নেপালে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হয় বলে গত কয়েক বছরে ১৪ জনের বেশি প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তন হয়েছে। হোয়েদার দিস ইজ স্টেবল গভর্নমেন্ট। ইসরায়েলকে দেখতে চান? হোয়াট ইজরায়েল ইজ ডুয়িং? দে আর প্র্যাকটিসিং পিআর। হোয়েদার দিস ইজ গুড থিং অর ব্যাড থিং। যদি এত ভালো হইতো… গণতন্ত্রের সূতিকাগার বৃটেনকে বলে.. সেখানে কীভাবে নির্বাচন হয়। মানুষ ফলো করে ভালো জিনিস… মানুষ কী কখনো খারাপ জিনিস ফলো করে?”

‘উদ্দেশ্যটা কী?’

জাহিদ বলেন, ‘‘খালি দলবাজির জন্য, নিজের অবস্থানকে পাকাপোক্ত করার জন্য এবং জনগণ না চাইলেও জনগণের কথা বলে মতামত দেওয়ার দাবিদার হওয়ার জন্য আজকে এই সমস্ত দাবি তুলছেন তারা। সত্যিকার অর্থে… নিজের বিবেককে প্রশ্ন করুন… আমি একথা আগে বলি নাই, আমি এই কথা কেনো বলছি? উদ্দেশ্য কী?”

‘‘তাহলে কী আমি স্বৈরাচারকে আসার জন্য একটা রাস্তা করে দিচ্ছি। নির্বাচনকে প্রলম্বিত করার জন্য আমি কোনো চেষ্টা করছি, নির্বাচন যাতে আরও বেশি দূরে থাকে, দেশে যাতে আরও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়, দেশে যাতে বিনিয়োগ আরও কম হয়, দেশে যাতে আরও বেকারত্ব বেড়ে যায় আমি কী সেদিকে দেশকে অরাজকতার দিকে নিয়ে যেতে চাচ্ছি… আপনি এই বিষয়গুলো চিন্তা করেছেন। আমরা আশা করব, সবাই অত্যন্ত দায়িত্বশীল রাজনৈতিক নেতৃত্ব, ব্যক্তিত্ব যাদেরকে দেশের মানুষ শ্রদ্ধা করে, বিশ্বাস করে বলে আমরা এখনো বিশ্বাস করি। কিন্তু তাদের আচরণ, কথাবার্তা সেরকম হতে হবে যাতে বিশ্বাসটা ধরে রাখা যায়।”

যারা পিআর পদ্ধতি চান সেসব রাজনৈতিক দলকে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে তা সন্নিবেশ করে জনগণের কাছে যাওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।

‘‘নির্বাচনী ইশতেহারে দিন। কেনো জোর করে, কেনো প্রেসিডেনশিয়াল অর্ডার দিয়ে, কেনো এক্সট্রা কনস্টিটিউশনাল অর্ডার দিয়ে এসব জিনিস করা হবে। বাংলাদেশের যে সংবিধান সেটা অনেক ত্যাগের বিনিময়ে। একাত্তরে লক্ষ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছে এবং আমাদের অনেক মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে, লক্ষ লক্ষ মানুষের ত্যাগের বিনিময়ে এই অর্জিত স্বাধীনতা, সংবিধান হয়েছে। সংবিধান সর্বোচ্চ আইন।”

‘বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যালস রিপ্রেজেন্টেটিভ অ্যাসোসিয়েশন (ফারিয়া)’ এর আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিবের সভাপতিত্বে ও রাশেদুল ইসলাম চৌধুরী সবুজ ও আরিফুল ইসলাম আরিফের যৌথ সঞ্চালনায় আলোচনায় ফারিয়ার নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।