ট্রাইব্যুনালে উপদেষ্টা আসিফের জবানবন্দি
ভিডিও বার্তা দিতে রাজি না হলে পুশ করা হয় ইনজেকশন

জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও বর্তমান যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া অভিযোগ করেছেন, ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের সময় তাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ দেওয়া জবানবন্দিতে তিনি এই অভিযোগ করেন।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) ‘জুলাই আন্দোলন’ ঘিরে রাজধানীর চানখারপুলে ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় তার সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এ মামলায় আসামি করা হয়েছে ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আটজনকে।
আরও পড়ুন: বিচারকদেরও জবাবদিহিতা থাকা উচিত: ট্রাইব্যুনালের অভিমত
আসিফ মাহমুদ বলেন, ১৯ জুলাই ২০২৪ সালের রাতে গুলশানের নিকেতন এলাকা থেকে সাদা পোশাকধারীরা তাকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে যায়। “আমার মাথায় কালো টুপি পরিয়ে মাইক্রোবাসে করে নিয়ে যাওয়া হয়। একটি কক্ষে আমাকে রাখা হয়, যেখানে জুলাই আন্দোলন প্রত্যাহারের ভিডিও বার্তা দিতে বলা হয়। আমি রাজি না হলে ইনজেকশন পুশ করে অজ্ঞান করে ফেলে রাখা হয়,”—বলেন তিনি।
তিনি জানান, “২৪ জুলাই সকালে আমাকে একই স্থানে ফেলে রাখা হয়। পরে বুঝতে পারি, সেটি ছিল ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে অবস্থিত ‘আয়নাঘর’। মুক্তির পর আমি গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে ভর্তি হই। সেখানে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন নজরদারিতে রাখে।”
আরও পড়ুন: রোমে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস
জবানবন্দিতে আসিফ মাহমুদ আরও বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটাপ্রথা সংস্কারের দাবিতে ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে সারাদেশে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলছিল।
১৪ জুলাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ মন্তব্যের পর আন্দোলন উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন, অভিযোগ করেন তিনি।
পরদিন সারাদেশে প্রতিবাদ চলাকালে রংপুর, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে ছয়জন আন্দোলনকারী নিহত হন। এরপর ১৮ জুলাই সারাদেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করা হয়। “সেদিন পুলিশের গুলিতে ২৯ জনের বেশি নিহত হন,”—দাবি করেন আসিফ।
তিনি বলেন, “১৮ জুলাই রাতে সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয় এবং দেশজুড়ে ব্লক রেইড চালায়। আন্দোলনকারীদের ব্যাপকভাবে গ্রেফতার ও নির্যাতন করা হয়।”
বৃহস্পতিবার দুপুরে ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল আদালতকক্ষে বসেন। অন্যান্য সদস্য ছিলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
বিকেল ৫টা পর্যন্ত সাক্ষ্যগ্রহণ চলে। শেষ না হওয়ায় আগামী বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
এদিন প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম, ফারুক আহাম্মদ, মঈনুল করিম ও মামুনুর রশীদসহ অন্যরা।
আসামিপক্ষের আইনজীবী ও রাষ্ট্রনিযুক্ত ডিফেন্স অ্যাটর্নিরাও উপস্থিত ছিলেন।