অব্যাহতির আগেই খোদা বক্স মন্ত্রীপাড়ার বাসা ছেড়ে দেন

Sanchoy Biswas
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৮:৫৬ অপরাহ্ন, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৮:৫৬ অপরাহ্ন, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হিসাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী দায়িত্বপ্রাপ্ত খোদা বক্স চৌধুরীর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। গত বুধবার মধ্যরাতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশিদ স্বাক্ষরিত এক গেজেট নোটিফিকেশনে খোদাবক্স চৌধুরীর পদত্যাগ গৃহীত হওয়ার কথা  জানানো হয়েছে। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনকালে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনিয়ম, শৃঙ্খলা রক্ষায় অযাচিত হস্তক্ষেপ, মব  ভায়োলেন্সে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ এনে বিভিন্ন মহল থেকে তার অপসারণ দাবি করা হয়েছিল। সর্বশেষ ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হাদি হত্যাকাণ্ড ও পরবর্তী হামলা ভাঙচুর অগ্নি  সংযোগের ঘটনায় তার অপসারণ দাবি করা হয়।  মধ্যরাতে অব্যাহতি পাওয়ার পর গতকাল বৃহস্পতিবার সারাদিন খোদা বক্স চৌধুরীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তার জন্য বরাদ্দ করা মিন্টু রোডের মিনিস্ট্রিয়াল ভবনের খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কিছুদিন আগেই তিনি বাসা ছেড়ে চলে গেছেন। উত্তরার একটি বাসায় কিছুদিন ছিলেন বলে জানা যায়। পদত্যাগ বা অব্যাহতির বিষয়ে তার কোন বক্তব্যই পাওয়া যায়নি কোথাও। এমনকি গতকাল থেকে তার অবস্থানও নিশ্চিত করা যায়নি। সরকারের গ্যাজেট  প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, এ পদত্যাগ অবিলম্বে কার্যকর হবে। তার পদত্যাগ নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে আলোচনা সমালোচনা।

খোদা বক্স চৌধুরীকে বিশেষ সহকারী নিয়োগের পরপরই  বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলেছিলেন বিতর্কিত খোদা বক্স চৌধুরী একসময় জজ মিয়া  নাটক আবিষ্কার করেছিল। সে গণতন্ত্র বিরোধী। কোনভাবে তার উন্নতি হবে না। ,পরবর্তীতে তিনি আরো বলেন  আমরা শুনেছি একজন খুব শক্তিশালী উপদেষ্টা রয়েছেন। যিনি সমস্ত স্বরাষ্ট্র ব্যবস্থাটা দেখেন, তার নাম খোদা বক্স। তিনি নাকি খুব পাওয়ারফুল! আবার এটাও শুনি তিনি নাকি বিএনপিকে খুব একটা পছন্দ করেন না। নিজের মতো করে সব গুছিয়ে রাখার চেষ্টা করেন। আজকে দেশের এই আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য এই ব্যক্তিটি দায়ী। 

আরও পড়ুন: তারেক রহমানের আগমনে রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ হবে: প্রেস সচিব

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পুলিশ প্রশাসনের ভেতরে তিনি নিজস্ব একটি বলয় গড়ে তুলেছিলেন। তাকে সব সময় সহযোগিতা করেছেন ওই বলয়ের বিশেষ কর্মকর্তারা।  অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার আগেই গাজীপুর মেট্টোপলিটনের কমিশনার ড. নাজমুল করিম খানকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। এক পর্যায়ে তাকে সাময়িক বরখাস্তও করা হয়।

ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি ড. মো. আশরাফুল রহমানকেও সুনিদিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই পুলিশ সদর দফতরে বদলি করে আনা হয়। 

আরও পড়ুন: ‘আই হ্যাভ অ্যা প্ল্যান’

খোদা  বক্স চৌধুরী দায়িত্ব পাওয়ার পর আর তার তিন ভাইয়ের বিরুদ্ধে পুলিশের নিয়োগ বদলি বাণিজ্য ও প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিগত স্বৈরাচার আমলের দোসর ব্যবসায়ীদের মামলা থেকে রেহাই দেয়া, বিদেশে যেতে সহায়তা করাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। 

 উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ১০ নভেম্বর খোদা বক্স চৌধুরীকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সরকারি 

পুলিশের সাবেক এই মহাপরিদর্শক তার দায়িত্ব নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। বিশেষ উপদেষ্টার দায়িত্ব নিয়েই তৎকালীন আইজিপি মাইনুল ইসলাম ও ডিএমপি কমিশনার হাসানকে বদলিয়ে তার পছন্দের আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনার নিয়োগ করেন। আইন-শৃঙ্খলার উন্নয়নের তাদের নিয়োগ দেওয়ার কথা বলেও পরবর্তীতে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি  ও দায়িত্ব পালনে চরম ও অদক্ষতার অভিযোগ উঠে। দায়িত্ব  পালনকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রশাসনিক সংস্কার ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পালনের সময় নানা বিতর্কের সৃষ্টি হয়।