আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ৫৪৬ রানের জয়

আফগানিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে একমাত্র টেস্টে ৫৪৬ রানের বিশাল ব্যবধানে জয় পেল বাংলাদেশ। শান্ত-মমিনুলদের দেওয়া ৬৬২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে তৃতীয় দিন শেষ ২ উইকেট হারালেও আজ চতুর্থ দিনে আফগানরা অলআউট মাত্র ১১৫ রানে। আর বাংলাদেশ পেল ৫৪৬ রানের জয়। যা দেশের টেস্ট ইতিহাসে রেকর্ড ব্যবধানে জয় তো বটেই, রানের হিসেবে এটি কোনো দলের টেস্ট ইতিহাসের তৃতীয় বৃহত্তম জয়।
আফগানদের বিপক্ষে বাংলামেশের পারফরম্যান্স ছিল ব্যাটিং-বোলিং দুটোতেই দুর্দান্ত। ব্যাটিংয়ে বড় স্কোর এনে দেওয়ার পর বোলিংয়ে নিজেদের দায়িত্ব দাপটের সঙ্গে পালন করেছেন টাইগার বোলাররা। আফগান ব্যাটারদের গতি ও স্পিন ঘূর্ণিতে করেছেন কুপোকাত।
আরও পড়ুন: আইএল টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবার দল পেলেন মোস্তাফিজ
প্রথম ইনিংসে জয়ের সঙ্গে ২১২ রানের রেকর্ড জুটিতে শান্ত করেছিলেন দুর্দান্ত এক শতক। এর পর দ্বিতীয় ইনিংসেও তার ব্যাটে এসেছে এক সময়োপযোগী সেঞ্চুরি। তার সঙ্গে জাকির, জয়, মুমিনুল, লিটন, মুশফিকদের যোগ্য সঙ্গে ৬৬২ রানের পর্বতসম এক লক্ষ্য দাঁড়ায় আফগানদের সামনে।
অধিনায়ক লিটন দাস ৪২৫ রানে ইনিংস ঘোষণা করলে তৃতীয় দিনের শেষ সেশনে ব্যাটিংয়ে নামে আফগানিস্তান। কিন্তু এদিনও ব্যর্থ হন দুই ওপেনার। দলীয় সাত রানেই দুই ওপেনারের বিদায়ে দলের হাল ধরার চেষ্টা করেন অধিনায়ক হাসমতউল্লাহ শহিদী। কিন্তু তাসকিনের বাউন্সারে আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয়ে তাকে। এরপর নাসির জামালকে নিয়ে দিনের বাকি সময় পার করেন রহমত শাহ।
আরও পড়ুন: দোহায় বসুন্ধরা কিংসের হয়ে সম্ভাব্য অভিষেক কিউবা মিচেলের
৬১৭ রানের লক্ষ্য নিয়ে আজ চতুর্থ দিনের খেলা শুরু করে আফগানিস্তান। কিন্তু ইবাদত, শরীফুলের বোলিং তোপে কোনো প্রতিরোধই গড়তে পারেননি তারা। ইবাদতের বলে উইকেটরক্ষক লিটন দাসের হাতে কট বিহাইন্ড হয়ে প্রথমে সাজঘরে ফিরেন নাসির জামাল। এরপর প্রথম ইনিংসে আফগানদের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৬ রান করা আফসারকেও স্লিপে মিরাজের ক্যাচে পরিণত করেন শরীফুল।
আফগানদের হয়ে এরপর ব্যাটিংয়ে নামেন আগের দিন তাসকিনের বলে মাথায় আঘাত পাওয়া অধিনায়ক হাসমত উল্লাহ শাহিদীর কনকাশন বদলি বাহির শাহ। কিন্তু দলের জন্য সুখবর বয়ে আনতে পারেননি তিনিও। শরিফুলেরই আরেক ওভারে স্লিপে তাইজুলের তালুবন্দী হন তিনি, ফিরে গেছেন মাত্র সাত রান করেই।
এদিকে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারালেও আফগানদের হয়ে ক্রিজের একপ্রান্তে ঘাটী গেড়েছিলেন রহমত শাহ। শেষ পর্যন্ত ফিরতে হয়েছে তাকেও। তাসকিনের বলে লিটনের গ্লাভসবন্দী হয়ে ফিরে গেলে আফগানদের পরাজয় এড়ানো তখন অবাস্তব কল্পনা।
৯১ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর ৯৮ রানে করিম জানাতকে দুর্দান্তভাবে বোল্ড করেন তাসকিন। এরপর আফগানদের বাকি উইকেট গুলো দ্রুতই তুলে নিলে জয়ী হয় বাংলাদেশ।
প্রথম ইনিংসে টাইগারদের হয়ে দুর্দান্ত খেলেন দুই ব্যাটার জয় ও শান্তর নজরকাড়া ১৪৬ রানের সঙ্গে জয় খেলেন ৭৬ রানের ইনিংস। আর মুশফিক ও মিরাজের অর্ধশতক ছোঁয়া ইনিংসে ভর করে প্রথম ইনিংসে ৩৮২ রানের সংগ্রহ পান টাইগাররা। বল হাতে আফগানদের হয়ে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন পেসার নিজাত মাসুদ।
এদিকে প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ে আল ছড়াতে পারেননি আফগানরা। ৩৯ ওভার খেলে দ্বিতীয় দিন শেষ হওয়ার আগেই ১৪৬ রানে অলআউট হয়ে যান তারা। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে ২৩৬ রানের লিড ব্যাটিং শুরু করে জাকির-জয়রা। জয় এদিন ব্যর্থ হলেও আগের ইনিংসে এক রান করে আউট হওয়া জাকির ৭১ রান করে রান আউট হন, শান্তর সাথে গড়েছিলেন ১৭৩ রানের জুটি।
দ্বিতীয় ইনিংসেও শান্ত করেছেন দুর্দান্ত এক শতক। সেই সঙ্গে ২২ মাস পর সেঞ্চুরির দেখা পান সাবেক টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হকও। মুমিনুল-লিটনের ১৪৩ রানের জুটিতে শেষ পর্যন্ত ৬৬২ রানের পররবত সমান এক লক্ষ্য দাঁড়ায় আফগানদের।
বাংলাদেশের এ জয়ে টেস্ট খেলায় সর্বোচ্চ রানে জয়ের রেকর্ড গড়েছেন টাইগাররা।