কম্পিউটার সায়েন্স ডিগ্রি ছাড়াও ২০২৫ সালে চাহিদাসম্পন্ন ৫টি প্রযুক্তি স্কিল

বর্তমানে চাকরির বাজার প্রতিযোগিতামূলক। ডিগ্রি থাকলেই হবে না, ব্যবহারিক স্কিল থাকাটাই গুরুত্বপূর্ণ। ভালো খবর হলো, আপনি যদি ছাত্র, বেকার বা গৃহিনী যেই হন—নিচের স্কিলগুলো শিখে আপনি অনলাইনে কিংবা লোকাল মার্কেটে কাজ শুরু করতে পারেন।
১. ওয়েব ডেভেলপমেন্ট -শুরু হোক সাহস দিয়ে
আরও পড়ুন: আপনার মোবাইলই আপনার অফিস: স্মার্টফোন দিয়ে ব্যবসা চালানোর ৭ উপায়
একটি ওয়েবসাইট কীভাবে তৈরি হয়, সেটাই শেখানো হয় ওয়েব ডেভেলপমেন্টে। অনেকেই ভাবে, কোডিং মানেই কঠিন বিষয়। আসলে, এটা একটা ভাষা। যেমন বাংলায় কথা বলেন, তেমনি কম্পিউটারকেও কিছু কথা বলা যায়।
ওয়েব ডেভেলপমেন্টে দুইটি ধাপ থাকে:
আরও পড়ুন: গ্রাম থেকে গ্লোবাল-ফ্রিল্যান্সিং শিখে বদলে ফেলুন নিজের ভাগ্য
● ফ্রন্টএন্ড: HTML, CSS, JavaScript অন্যান্য
● ব্যাকএন্ড: PHP (Laravel), Node.js অন্যান্য
শেখার প্ল্যাটফর্ম: freeCodeCamp, w3schools
আয় সম্ভাবনা: ফ্রিল্যান্সিং বা লোকাল জবে ১৫,০০০–৮০,০০০+ টাকা
শুরুটা হতে পারে শুধু "একটা ওয়েবসাইট আমি নিজে বানাব"—এই লক্ষ্য ধরে। টুলস নয়, ধৈর্য আর অভ্যাসই আপনাকে ডেভেলপার বানাবে।
২. গ্রাফিক ডিজাইন - আপনার চোখের সৌন্দর্যই আপনার শক্তি
আজকের ডিজিটাল দুনিয়ায় ছবি, পোস্টার, ব্যানার ছাড়া কিছুই চলে না। আপনি যদি পোস্টার দেখে ভালো-মন্দ বুঝতে পারেন, তাহলে আপনিই একজন ডিজাইনার হওয়ার যোগ্য। প্রথমে হাতের মোবাইল দিয়ে চেষ্টা করুন পোস্ট বানাতে। শুরুর জন্য মোবাইলেই যথেষ্ট। Canva বা Pixellab দিয়ে সহজেই ডিজাইন শেখা যায়।
- প্রো লেভেলে গেলে শিখুন Adobe Photoshop বা Illustrator
- কাজ পাবেন Fiverr, Freelancer বা লোকাল অর্ডারে
শেখার প্ল্যাটফর্ম: Youtube, Canva , Coursera
আয় সম্ভাবনা: ফ্রিল্যান্সিং বা লোকাল জবে ১৫,০০০–১,০০,০০০+ টাকা
গ্রাফিক ডিজাইনে দামী সফটওয়্যার বা কোর্স না, বরং চোখের দেখার ক্ষমতা আর আইডিয়াই সবচেয়ে বড় টুল।
৩. ডিজিটাল মার্কেটিং -গল্প বলার কৌশলই আপনাকে আলাদা করবে
প্রতিটি ব্যবসা এখন অনলাইনে। তাই Facebook Boost, Google Ads, SEO, Email Marketing—এই স্কিলগুলোর চাহিদা প্রচুর। প্রোডাক্ট তো অনেকেই বিক্রি করে, কিন্তু আপনি যদি মানুষের মন বোঝে প্রোডাক্টের মার্কেটিং স্ট্রাটেজি করেন, তাহলে আপনি একজন ভালো মার্কেটার হতে পারবেন ।
শেখার টুলস:
● Facebook & Google Ads
● SEO
● Email Tools (Mailchimp)
কোর্স: Google Digital Garage, Meta (Facebook) Blueprint, HubSpot Academy
আয় সম্ভাবনা: ফ্রিল্যান্সিং বা লোকাল জবে ১৫,০০০–১,৫০,০০০+ টাকা
শুধু টুলস নয়, বুঝে কাজ করা—এই একটাই পার্থক্য তৈরি করে। তেমনি Facebook Boost নয়, মানুষ কী চায় সেটা বোঝাটাই মূল বিষয় ।
৪. UI/UX ডিজাইন
যে অ্যাপ বা ওয়েবসাইট আপনি ব্যবহার করেন, তার ডিজাইন করে UI/UX ডিজাইনার। এটি হলো সুন্দর ও ব্যবহারবান্ধব ডিজাইন তৈরির কাজ। UI/UX মানে শুধু ডিজাইন না—কোন অ্যাপ কেমন হলে ব্যবহারকারী সহজে বুঝবে, সেটাই জানা।
- টুল: Figma, Adobe XD
- কাজ: Layout, User Journey Design
কোর্স: Youtube, Figma Learn, Adobe XD Learn Hub
আয় সম্ভাবনা: ফ্রিল্যান্সিং বা লোকাল জবে ২০,০০০–২,৫০,০০০+ টাকা
বড় বড় কোম্পানিতে এই স্কিলের চাহিদা বাড়ছে দ্রুত। তাই আপনার নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই শুরু করুন—একটা অ্যাপ ব্যবহার করে ভাবুন, “এটা আরও ভালোভাবে করা যেত না?” এই ভাবনাই আপনাকে ডিজাইনার বানাবে।
৫. ডেটা এনালাইসিস- শুধু হিসাব নয়, সমস্যা বুঝে সমাধান খোঁজা
ব্যবসা, NGO বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান—সবারই ডেটা থাকে। কে কী কিনছে, কোন মাসে আয় বেশি—এসব বিশ্লেষণ করে ডেটা অ্যানালিস্ট। ডেটা মানে শুধু সংখ্যা না, মানুষের গল্প। আপনি যদি চিন্তা করতে পারেন “এই সংখ্যাগুলো কী বলছে?”, আপনি একজন এনালিস্ট হওয়ার যোগ্যতা রাখেন।
শিখুন: Excel, Google Sheets → Power BI → Python
কোর্স: Kaggle, Coursera
- Entry-level কাজ: MIS Officer, Research Assistant
আয় সম্ভাবনা: ফ্রিল্যান্সিং বা লোকাল জবে ২৫,০০০–২,০০,০০০+ টাকা
এক্সেল বা সফটওয়্যার আগে নয়—সমস্যা বোঝা আর ভাবতে শেখাটাই আসল জিনিস।
কোথা থেকে শুরু করবেন?
- নিজের আগ্রহে উপযুক্ত স্কিল বেছে নিন
- ফ্রি ইউটিউব বা মোবাইল অ্যাপ দিয়ে শিখতে শুরু করুন
- ছোট প্রজেক্ট বানিয়ে portfolio তৈরি করুন
- এরপর ফ্রিল্যান্সিং বা লোকাল কাজের জন্য আবেদন করুন
আসল শিক্ষা
আপনি যদি নিজের জীবন নিয়ে সিরিয়াস হন, তাহলে ইন্টারনেট, মোবাইল বা টুল নয়—আপনার মনের জোরই আপনাকে শেখাবে, পথ দেখাবে, এগিয়ে নেবে। শুধু জানলেই হবে না—প্রতি দিন একটু করে প্র্যাকটিস করলেই আপনি পৌঁছে যাবেন সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে।
শেষ কথা
আজকের দিনে শুধু ডিগ্রি নয়, বাস্তব কাজ জানাটাই ক্যারিয়ারের মূল চাবিকাঠি। আপনার হাতে যদি মোবাইল থাকে, ইন্টারনেট থাকে—তাহলে আপনি পিছিয়ে নন। আজই শুরু হোক আপনার শেখার নতুন যাত্রা।
পরবর্তী সংখ্যায় থাকছে: “ফ্রিল্যান্সিং শিখে গ্রামের বাড়ি থেকেও আয় করার উপায়”