ডিজিটাল ডিটক্স: প্রযুক্তি থেকে একটু দূরে গিয়ে কিভাবে জীবন বদলে ফেলবেন

Any Akter
পারভেজ আহমেদ, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও উদ্যোক্তা
প্রকাশিত: ১২:৩২ অপরাহ্ন, ১৬ অগাস্ট ২০২৫ | আপডেট: ১:২৬ অপরাহ্ন, ১৬ অগাস্ট ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

ভাবুন তোআপনি ঘুম থেকে উঠলেন, আকাশে রোদের আলো , চারপাশ শান্ত—কিন্তু আপনার হাত নিজে থেকেই ফোন খুঁজে নিচ্ছে। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমেইল—নোটিফিকেশনের বন্যা। দিন শুরু হবার আগেই মস্তিষ্ক যেন ব্যস্ত হয়ে গেল। আমরা সবাই এমন করছি, তাই না? আমি বাজি ধরে বলতে পারি, আপনি এই লেখাটা পড়তে পড়তেও হয়তো ফোনে ২-৩ বার অন্য নোটিফিকেশন আপনাকে দেখতে হবে।

শুরু করি আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে। আমি যখন প্রথম আমার ব্যবসা শুরু করি- দিন-রাত ফোন, ল্যাপটপ, মিটিং—সবকিছুর মধ্যে ঘুরপাক খেতে খেতে খেয়াল করলাম আমার  ঘুম দিন দিন কমে যাচ্ছে, মনোযোগ ভেঙে যাচ্ছে, এমনকি বন্ধুদের কাছে শুনতে হত “আমি নাকি দিন দিন একদম হারিয়ে যাচ্ছি !"

আরও পড়ুন: স্ক্রিন টাইম শিশুদের মস্তিষ্কে ধারণার তুলনায় অনেক বেশি জটিল ক্ষতিকর

একদিন হঠাৎ মন স্থির করলাম। নিজের ফোন বন্ধ করে বাইরে হাঁটতে বের হয়ে গেলাম। ২ ঘন্টা পর ফোন হাতে নিলাম। নোটিফিকেশন আসতেই কেন যেন মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল। বুঝতে পারলাম মস্তিষ্ক সিগনাল দিচ্ছে। শুরু হলো আমার ডিজিটাল ডিটক্স যাত্রা। শুরুতে একটু কষ্ট হলেও মাত্র এক মাসে ব্যবসার প্রোডাক্টিভিটি বেড়ে গেল ৪০%, মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বেড়ে গেল, আর রাতে ঘুমে আগের মত হওয়া শুরু করল। মনে হল যেন শরীর খেকে খারাপ কিছু অপসারন করা হয়েছে।

ডিজিটাল ডিটক্স আসলে কী?

আরও পড়ুন: আপনার মোবাইলই আপনার অফিস: স্মার্টফোন দিয়ে ব্যবসা চালানোর ৭ উপায়

আসলে ডিজিটাল ডিটক্স কোনো প্রযুক্তি-বিরোধী আন্দোলন না। এটা এমন একটা সিদ্ধান্ত যা  প্রতিদিন বা সপ্তাহে ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু সময়ের জন্য প্রযুক্তি থেকে নিজেকে আলাদা রাখা, যাতে আপনার মন আর শরীর রিফ্রেশ হতে পারে। ভাবুন তো—আপনি যদি প্রতিদিন মাত্র ১ ঘণ্টা ফোন থেকে দূরে থাকেন, বছরে প্রায় ১৫ দিন অতিরিক্ত সময় পেয়ে যাবেন!

কেন ডিজিটাল ডিটক্স দরকার?

মনোযোগ ফেরাতে সারাদিন নোটিফিকেশন মস্তিষ্ককে ছিন্নভিন্ন করে দেয়।

স্ট্রেস কমাতে ফোনের পিং-পিং আওয়াজ আপনার নাড়িভুঁড়ি পর্যন্ত টানটান রাখে।

সময় বাঁচাতে সোশ্যাল মিডিয়ার খরগোশ গর্তে ঢুকে গেলে বের হওয়া কঠিন।

সৃজনশীলতা বাড়াতে অফলাইনে থাকলেই নতুন আইডিয়া আসে।

কিভাবে শুরু করবেন?

  • জরুরি না হলে সব নোটিফিকেশন বন্ধ করুন।
  • প্রতিদিন অন্তত ১ ঘণ্টা ফোন ছাড়া কাটান।
  • ঘুমানোর আগে স্ক্রিন টাইম বাদ দিন।
  • বই পড়ুন, হাঁটুন, ডায়েরি লিখুন—কিছু অফলাইন মজা খুঁজে নিন।
  • সপ্তাহে একদিন পুরোটা অফলাইনে কাটিয়ে দেখুন।

শেষ কথা

প্রযুক্তি আমাদের বন্ধু, কিন্তু যদি সে আপনার জীবন চালায়, তখন সমস্যা। আপনি যখন প্রযুক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করবেন, তখনই আপনি আসল স্বাধীনতা পাবেন। আজ থেকেই চেষ্টা শুরু করুন। হয়তো আপনার সাফল্য, আপনার শান্তি—সবকিছু একদম কাছেই অপেক্ষা করছে, শুধু আপনাকে স্ক্রিন থেকে চোখ তুলে তাকাতে হবে।

লেখক: পারভেজ আহমেদ, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও উদ্যোক্তা