মন্ত্রণালয়ের অসন্তোষ ,পিডি -ঠিকাদারের ভাগবাটোয়ারা
রাজশাহী ওয়াসার ৪ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে নিম্নমানের কাজ

রাজশাহী ওয়াসা ৪ হাজার কোটি টাকার ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন প্রকল্পের নিম্নমানের কাজে মন্ত্রণালয় তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রকল্পটি সবচেয়ে উচ্চ মূল্যের প্রকল্প। শুরুতেই প্রকল্প পরিচালক ও ঠিকাদার মিলে উচ্চ মূল্যের পাক কলন তৈরি সহ হাজার হাজার কোটি টাকা ভাগবাটোরার ব্যবস্থা করেছে।
গত ফ্যাসিস্ট সরকারের এলজিআরডি মন্ত্রী তাজুল ইসলাম ও তার এপিএস জাহিদের ঘনিষ্ঠ প্রকল্পের পরিচালক ও ঠিকাদার মিলে অসায়দুর্নীতির এক শক্ত সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। এই সিন্ডিকেটের দুর্নীতির কারণেই প্রকল্প অগ্রগতি ইনটেক : ১২.৪% এর বিপরীতে ০.০০%, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ৪৬% এর বিপরীতে ৯.৮১%, বুষ্টার পাম্প ষ্টেশনের ৫০.৭০% এর বিপরীতে ৩.২০% এবং ট্রান্সমিশন লাইন ২৪.৫৯% এর বিপরীতে ৩.২০% অভিযোগে প্ৰকাশ, প্রকল্প পরিচালকের খায়েশ মিটানো ছাড়া এ প্রকল্পে কোন কাজ করা সম্ভব নয়। কাজের মান ও অগ্রগতি দুটোই নিম্নমুখী।
আরও পড়ুন: চাঁদাবাজি নয়, নেপথ্যে নকশা বহির্ভূত ভবন নির্মাণ কাহিনী
গপূর্বে এ প্রকল্পে নিম্নমানের পাইপ সংগ্রহের অভিযোগ থাকলেও প্রকল্প “বিচালকের অনুকূল্য থাকায় তার কোন প্রতিকার তো হয়নি বরং যথাযথ তিতে পাইপ পরিবহনও করা হচ্ছে না, যাহাতে পাইপের গুণগত মান নষ্ট। পদ্মা-যশলদিয়ার দৈনিক ৪৫ কোটি লিটার ক্ষমতার প্ল্যান্ট বসাতে খরচ হয়েছিল ২৯০ মিলিয়ন ডলার অথচ ২০ কোটি লিটার ক্ষমতার প্ল্যান্ট বসাতে খরচ হচ্ছে ৩২৫ মিলিয়ন ডলার । এত উচ্চমূল্যের প্ল্যান্টে গুণগত মান বজায় রাখা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ করা জরুরী। গত ৬ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব নিজামুদ্দিনের সভাপতিতে মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত প্রকল্পের পর্যটন সভায় তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে আগামী বৈঠকে প্রকল্পের কর্মপরিকল্পনা পূর্ণাঙ্গভাবে উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। অভিযোগ বাংলাদেশের সবচেয়ে উচ্চমূল্যের এই প্রকল্পে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারসহ দেশী বিদেশী চক্র অনিয়ম ও লুটপাটের আয়োজন। একই ধরনের প্রকল্প ঢাকা ওয়াসা বাস্তবায়ন করলেও কাজের গুনগত মান টেকসই ও বরাদ্ধ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রাজশাহী মহানগর ও আশপাশের বিশুদ্ধ খাবার পানির চাহিদা মেটাতে পদ্মার ভুউপর্সিথ পানি শুধন করে সরবরাহে প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তার সময় উচিত।
প্রকল্পে দেখা যায় পদ্মায় পানির উচ্চতা কমতে থাকলেও রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে পদ্মার পানিকে প্রধান উৎস ধরে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন করছে ওয়াসা। তারা বলছে সারা বছর এখানে অন্তত ৩০ ফুট গভীর পানি থাকবে। প্রতিদিন পানি সাপ্লাই দেবে ২০ কোটি লিটার। অনুসন্ধানে জানা যায় রাজশাহী ওয়াসা কর্তৃপক্ষ ও চীনের হুনান কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেডে যৌথভাবে কাজ করছে। এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৬২ কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার ১ হাজার ৭৪৮ কোটি ও হুনান কন্সট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ার গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড ২ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা অর্থায়ন করবে। প্রকল্পটি জুলাই ২০১৮ শুরু কওে জুলাই ২০২৪ সালে শেষ করার কথা থাকলেও এখনো কাজ চলছে ধীর গতিতে।
আরও পড়ুন: আশুলিয়ায় বকেয়া বেতনের দাবিতে দেড় ঘণ্টা সড়ক অবরোধ
অত্যন্ত ব্যয় বহুল রাজশাহী ওয়াসার এই প্রকল্প নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন এধরের প্রকল্পে মূলে হল উন্নতমানের পাইপ ও অন্যন্য সামগ্রগী ব্যবহার। কারণ এধরনের শুধনাগার কমপক্ষে ৭০ বছরের জন্য করা হয়ে থাকে। কিন্ত রাজশাহী ওযাসার ট্রিটমেন্টএ নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার ও অধিক প্রকল্প ব্যয় দেখানো হয়েচে। একই ধরনের ঢাকা ওয়াসর প্রকল্পে দেখা যায় প্রায় একই টাকা ব্যায়ে তারা ৪৫কোটি লিটার পানি শোধন কওে সরবরাহ করেছে। আবার তারা ৩৪ কিলোমিটার ট্রান্সমিশন লাইন স্থাপন করেছে। ঢাকা ওয়াসার ্প্রকল্পে এ্কই বাজেটে ২হাজার মিলিমিটার ডায়ার পাইপ স্থাপন করা হয়। ট্রিটমেন্টে উন্নত সামগ্রী ও ফ্রান্সের সুয়ারেজ পদ্ধতি ও চীনের উন্নতমানের জিংজিয়ান কোম্পানীর পাইপ স্থাপন করা হয়। অপরদিকে রাজশাহী ওয়াসার প্রকল্পে দেখা যায় তারা একই বাজেটে ২২কোটি লিটার পাানি শোধন করবে। ট্রান্সমিটার লাইন স্থাপন করবে ২৬ কিলোমিটার। ১হাজার মিলিমিটার ডায়ার পাইপ লাইন স্থাপন করবে।নিম্বমানের গোয়ামিং কোম্পানি থেকে পাইপ সরবরাহ করবে।
মন্ত্রণালয়ের সভায় অবহিত করা হয় যে, রাজশাহী ওয়াসা কর্তৃক "Rajshahi WASA Surface Water Treatment Plant " শীর্ষক প্রকল্পটি ৪০২,২২৭৭ কোটি (জিওবি ১৭৪৮.৬৩৩৯ কোটি এবং প্রকল্প ঋণ ২৩১৩,৫৯৩৮ কোটি) টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে জুলাই ২০১৮ থেকে জুন ২০২৬ মেয়াদে বাস্তবায়নাধীন আছে। প্রকল্পের সামগ্রিক উদ্দেশ্য হচ্ছে ২০০ এমএলডি (দৈনিক ২০ কোটি লিটার) ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ভূ-উপরিস্থিত পানি শোধনাগার প্ল্যান্ট স্থাপন করা, যার ফলে ২০৩৫ সালের চাহিদা অনুযায়ী ২০০ এমএলডি (দৈনিক ২০ কোটি লিটার) পানি উৎপাদনের মাধ্যমে দৈনিক জনপ্রতি পানি ব্যবহারের পরিমাণ ৬৫ লিটার থেকে ১৫০ লিটারে উন্নীতকরণ এবং জনসংখ্যার ভিত্তিতে পানির কাভারেজ ৭১% হতে ১০০% উন্নীতকরণ সম্ভব হবে।
প্রকল্পের সামগ্রিক অগ্রগতির বিষয়ে অবহিতকরণসহ প্রকল্পের আওতায় পানি সরবরাহের আওতাভূক্ত এলাকা এবং পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ভেরিয়েশন অর্ডার জারিকরণ প্রসঙ্গে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের নিমিত্তে অদ্যকার প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটির সভা আহবান করা হয়েছে। জানুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত প্রকল্পটির ক্রমপুঞ্জিভূত বাস্তব অগ্রগতি ২৩% এবং আর্থিক অগ্রগতি ৩৭.৭১% (Advance Payment 2000% সহ)।
প্রকল্প পরিচালক সভাকে সামগ্রিক অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করেন যে, আলোচ্য প্রকল্পের মূল অঙ্গ 'Construction and works of SWTP with 3 years O&M-এর জানুয়ারি ২৫ পর্যন্ত সামগ্রিক আর্থিক অগ্রগতি ১৪.০২% এবং ভৌতঅগ্রগতি ১৮.৪৮% কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৪.৯১%। এরপর প্রকল্প পরিচালক সভাকে প্রকল্পের চারটি সাইটে মাঠ পর্যায়ে কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করেন।
প্রকল্পের ইনটেক সাইটে পরিকল্পিত অগ্রগতি ১২.৪০%-এর বিপরীতে বাস্তব অগ্রগতি ০.০০%, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট সাইটে পরিকল্পিত অগ্রগতি ৪৬.০০%-এর বিপরীতে বাস্তব অগ্রগতি ১.৮১%, বুষ্টার পাম্প স্টেশন সাইটে পরিকল্পিত অগ্রগতি ৫০.৭০%-এর বিপরীতে বাস্তব অগ্রগতি ৩.২০% এবং ট্রান্সমিশন মেইন পাইপ লাইন সাইটে পরিকল্পিত অগ্রগতি ২৪.৫৯%-এর বিপরীতে বাস্তব অগ্রগতি 5.12%। ডিজাইনে পরিকল্পিত অগ্রগতি ১০০%-এর বিপরীতে বাস্তব অগ্রগতি ৮১.২৬%।
মূলত ডিজাইনের ধীর অগ্রগতির কারণে মাঠ পর্যায়ে সামগ্রিক কাজের অগ্রগতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। ডিজাইনের ধীর অগ্রগতির পেছনে মূল কারণ হচ্ছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ডিজাইন চূড়ান্তকরণের ক্ষেত্রে অধিক রিভিশনের প্রয়োজন হওয়া। এ পর্যায়ে সভাপতি প্রকল্পের কর্ম-পরিকল্পনা আগামী সভায় উপস্থাপন করার জন্য প্রকল্প পরিচালককে নির্দেশনা প্রদান করেন।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, রাজশাহী ওয়াসার গেজেটভূক্ত রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এলাকা ছাড়াও নতুন শহর এলাকা (কাটাখালী পৌরসভাসহ অন্য এলাকা), নওহাটা পৌরসভা এবং গোদাগাড়ী পৌরসভা এলাকাসমূহ প্রকল্পের আওতায় পানি সরবরাহের আওতাভূক্ত এলাকা। উরু পৌরসভাগুলো অভ্যন্তরীণ পাইপ লাইন নেটওয়ার্ক ডিপিএইচই কর্তৃক বাস্তবায়ন CUsers Plamming 3 CO Desktop PSC 622025 করা সম্ভব না। প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে ২০২৭ সালে শুধুমাত্র রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এলাকায় পানির চাহিদা থাকবে ১৪৫ MLD এবং পৌরসভা ৩ টিতে ঐসময় পানি বিক্রয় করা সম্ভব না হলেও প্ল্যান্টটি ১৪৫ MLD-তে চালানো সম্ভব হবে।
রাজশাহী ওয়াসা কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন "Rajshahi WASA Surface Water Treatment Plant" শীর্ষক প্রকল্পের Consultancy for design, construction supervision of Surface Water Treatment Plant and consultancy for Re-settlement Action Plan (RAP) and Implementation of the same SWTP সেবা ক্রয় কাজের আওতায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান BRTC, BUET & SMEC International Pty Ltd. (IV) থেকে ৪২ মাস সময়ের জন্য নেগোসিয়েটেড চূড়ান্ত চুক্তিমূল্য গত ১ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় আলোচ্য পরামর্শক সেবার জন্য BRTC, BUET & SMEC International Pty Ltd. (IV)-এর অনুকূলে নেগোসিয়েটেড দর ৬৫,১৬,10,870,00 (পঁয়ষট্টি কোটি ধৌল লক্ষ দশ হাজার চারশত সত্তর) টাকা (ভ্যাট ও আয়করসহ) [যার মধ্যে ভ্যাট ও আইটি বাবদ ১৫,০২,৪১,১০০.০০ (পনের কোটি দুই লক্ষ একচল্লিশ হাজার একশত) টাকা] সম্পাদনের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে উল্লেখিত কাজের সাথে সমন্বয়ের লক্ষ্যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সেবা চুক্তি মূল্য সীমার মধ্যে প্রথম ভেরিয়েশনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন।
প্রকল্প পরিচালক রাজশাহী ওয়াসা কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন 'Rajshahi WASA Surface Water Treatment Plant' শীর্ষক প্রকল্পের 'Consultancy for design, construction supervision of Surface Water Treatment Plant and consultancy for Re-settlement Action Plan (RAP) and Implementation of the same SWTP এর আওতায় পরামর্শক সেবা চুক্তি সংক্রান্ত ১ম ভেরিয়েশন অর্ডার প্রস্তাব সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সদয় বিবেচনা এবং সানুগ্রহ অনুমোদনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশসহ সভায় পেশ করেন। সভায় এ বিষয়ে পিপিআর, পিপিএ এবং পরিপত্র অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সকলে মতামত প্রদান করেন।
প্রসঙ্গত, পদ্মা নদীর যে স্থানে ট্রিটমেন্ট প্লান্টটি স্থাপন করা হচ্ছে সেখানেই ভারত থেকে গঙ্গা নদী বাংলাদেশে ঢুকে পদ্মা হয়েছে। এখান থেকেই আবার এর পদ্মার শাখা নদী হিসেবে বেরিয়ে গেছে মহানন্দা। দুই নদীর মোহনায় ওয়াসার এই ট্রিটমেন্ট প্লান্ট করা হচ্ছে