মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যা
গুলশানে ধনির দুলাল সজীব ১০ দিনেও গ্রেপ্তার হয়নি

মধ্যরাতে রাজধানীর গুলশানে অতিরিক্ত মদ পান করে গাড়ি চাপায় গার্ডকে হত্যার রহস্য উন্মোচিত হওয়ার পরেও আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। আসামির সাথে পুলিশ ও সমাজের উঁচু স্তরের লোকজনের যোগাযোগ থাকায় প্রথমে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু আল জাজিরা অনুসন্ধানী সাংবাদিকের চেষ্টায় হত্যার রহস্যমঞ্চিত হলে মামলা করতে বাধ্য হয়। পুলিশ হত্যায় ব্যবহৃত গাড়িটিকে জব্দ করেছে।
বনানি থানা পুলিশ সূত্র জানায়, গত ৩০মার্চ মধ্যরাতে বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে বনানীর সাত নম্বর রোডে ম্যাক্স সিকিউরিটির দায়িত্বরত গার্ড দীন মোহাম্মদকে চাপা দিয়ে গাড়ি পালিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর ওই ব্যক্তি মারা যায়। বিষয়টি কয়েকদিন ধামাচাপার পর আল জাজিরা অনুসন্ধানী সাংবাদিক তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে তুলে ধরায় ম্যাক্স কর্তৃপক্ষ মামলা করে। এরপরেই পুলিশ গাড়িটি জব্দ করে।
আরও পড়ুন: কিশোরগঞ্জে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন নিয়ে বিএনপি'র দুই গ্রুপের সংঘর্ষ
গত ৪ এপ্রিল আল জাজিরা সাংবাদিকদের সাথে টেলিফোন আলোকে হত্যাকারী মেহেদি মালেক সজীব নিজেই গাড়ি চাপার কথা স্বীকার করেন যে তিনি ৩০ মার্চ রাতে নিরাপত্তারক্ষী দীন মোহাম্মদকে বনানীতে গাড়ি চাপা দিয়েছেন। আলজাজিরার সাংবাদিক জুলকার নাইন সায়ের সোমবার (৭ এপ্রিল) এক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে একথা জানান।
সায়ের তার পোস্টে বলেন, গত শুক্রবার (৪ এপ্রিল) মেহেদি মালেক সজীব নিজেই আমার কাছে স্বীকার করেন যে তিনি ৩০ মার্চ রাতে নিরাপত্তারক্ষী দীন মোহাম্মদকে বনানীতে গাড়ি চাপা দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে পোস্ট করার আগে তার সাথে কথা বলে আমি ওই ঘটনার সাথে তার সংশ্লিষ্টতা নিশ্চিত করি।
আরও পড়ুন: সৌন্দর্যের স্বর্গরাজ্য ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর কোথায় গেল?
৫ এপ্রিল এই ঘটনায় মামলা হওয়ার পর থেকে সজীব গা-ঢাকা দিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি আরও লিখেন, গতকাল বনানি থেকে দুর্ঘটনায় জড়িত গাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হলেও সজীবকে এখনো গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। নিরাপত্তা কর্মী দীন মোহাম্মদের গাড়ি চাপায় মৃত্যুর ঘটনায় ৯৮/১০৫ সড়ক পরিবহণ আইন ২০১৮ ধারায়, রাজধানীর বনানি থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
দেশের অন্যতম অভিজাত/এলিট শ্রেণীর কেন্দ্রস্থল 'গুলশান ক্লাব' এর বোর্ড সদস্য, মেহেদি মালেক সজীব। যিনি বন্ধু মহলে সাবেক স্পীকার মালেক উকিলের দৌহিত্র হিসেবে পরিচিত। গত ৩০ মার্চ, চাঁনরাতে ১১টা ৩০মিনিটে, বনানীর ১২ নম্বর সড়কে MAX Secure Limited এর নিরাপত্তা প্রহরী দীন মোহাম্মদকে গাড়ি চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। সেদিন রাতে গুলশান ক্লাবে প্রচুর মদ্যপান করেছিলেন সজীব।
গুরুতর আহত দীন মোহাম্মদ ঈদের দিন ভোররাতে এনআইএনএস হাসপাতালে মারা যান। কিন্তু এতকিছুর পরেও বেশ ভাবলেশহীন ভাবে নিজ কন্যাকে নিয়ে গুলশান ক্লাবে ঘটনার ২/৩ দিন পরই সুইমিং এ যান। এ ঘটনাটি ধামা চাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়, কিন্তু সচেতন নাগরিকদের কারণে বিষয়টি প্রকাশ পায়।
জানা গেছে, মামলার পরও গুলশান ক্লাবে সজীবকে দেখা যায়, এর পর থেকে তিনি পলাতক অবস্থায় আছেন। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারের জন্য খুঁজছে। সজীব যেন বিদেশে পালাতে না পারে, সে বিষয়ে ইতোমধ্যেই ইমিগ্রেশন পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে।
বনানি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শেখ জানান গভীর রাতে গাড়ি চাপায় হত্যাকাণ্ড ঘটায় প্রথমে আমরা চিহ্নিত করতে পারিনি। পরবর্তীতে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও অন্যান্য আলামতের মাধ্যমে গাড়িটি চিহ্নিত করা হয়। হত্যাকাণ্ডের ব্যবহৃত গাড়ি জব্দ করা হয়। গাড়ির মালিক সজীবকে আটকের জন্য পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে।
তিনি জানান, আসামি যত প্রভাবশালী হোক না কেনো আমরা তাকে খুঁজে বের করার জন্য তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা নিচ্ছি।