তাজরীনের সামনে রাত কাটালেন আহত নারী শ্রমিকেরা

Sanchoy Biswas
জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, আশুলিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৫:৩৪ অপরাহ্ন, ২৪ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৪:৩৬ অপরাহ্ন, ২৮ নভেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

তাজরীন ফ্যাশনস অগ্নিকাণ্ডের ১৩ বছর পরও ন্যায্য ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন না পাওয়ার অভিযোগ তুলে পোড়া ভবনের সামনে রাতে অবস্থান করেছেন আগুনে বেঁচে যাওয়া পাঁচ নারী শ্রমিক।

সোমবার ভোরে তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেডের কঙ্কালসার ভবনের সামনে গিয়ে দেখা যায়, খোলা আকাশের নিচে পাটি বিছিয়ে কাঁথা মুড়িয়ে শুয়ে আছেন তারা। পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা নয়তলা ভবনের দেয়াল–জানালায় এখনও স্পষ্ট আগুনের ক্ষতচিহ্ন। নিচতলা পুরো ফাঁকা, দ্বিতীয় তলার ফটকে তালা ঝুলছে।

আরও পড়ুন: কৃষক দল নেতা খন্দকার নাসিরের অপকর্মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তারেক রহমানের কাছে মহিলা দলনেত্রীর আবেদন

আহত নারীরা জানান, ২০১২ সালের ভয়াবহ আগুনের আতঙ্ক এখনও তাদের ছাড়েনি। ভবনটি যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে—এ ভয়ে এবং ক্ষতিপূরণের দাবিতে তারা ভবনের সামনেই অবস্থান নিয়েছেন। দাবি—ন্যায্য ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন এবং দায়ীদের বিচার।

এদিকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতা–কর্মীরা মিছিল নিয়ে তাজরীন ফ্যাশনের পরিত্যক্ত ভবনের সামনে জড়ো হন। তারা ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন ও সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার দাবি জানান। দুপুর ১২টা পর্যন্ত অবস্থান করে তারা চলে যায়।

আরও পড়ুন: ধামরাইয়ে পার্কিং করা যাত্রীবাহী বাসে রহস্যজনক আগুন

৬০–উর্ধ্ব নাটা বেগম বলেন, “রাইতে গোপালগঞ্জ থিকা আইছি। তাজরীনের তিন তলায় বুয়ার কাজ করতাম। ওইদিন জানলা দিয়া লাফাইয়া বাঁচছি। আমাগো ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।”

রংপুরের মাহমুদা (৪০) বলেন, “৫ তলা থিকা নামছি, ৩ তলায় গেট তালা। অনেকেই লাফ দিতাছে। আমি লাফ দিয়া মাথা–ঘাড়ে আঘাত পাইছি। এখনো ভয় লাগে। মালিকের শাস্তি চাই, ক্ষতিপূরণ চাই।”

মাদারিপুরের খাদিজা আক্তার সুমি বলেন, “৬ তলায় কাজ করতাম। আগুন লাগতেই ছাঁদে উঠি। লাফ দিতে পারিনি। নামতে গিয়া পইরা মাথায় আঘাত পাই। ৩ বছর পাগলের মতো ছিলাম। ভিটামাটি বিক্রি দিছি। বাঁচতে চাই।”

শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইনবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল ইসলাম মিন্টু বলেন, “তাজরীন ছিল পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তদন্ত প্রতিবেদনে এর উল্লেখ আছে। পূর্বের সরকার বিচার করেনি, বরং মালিককে পুরস্কৃত করেছে। ক্ষতিপূরণ–পুনর্বাসনের কোনো প্রতিশ্রুতিই বাস্তবায়ন হয়নি।”

তিনি বলেন, “দেড় বছর আগে অন্তবর্তী সরকার ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিলেও তা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। ১৩ বছর পূর্তিতে তাদের দাবি—আশ্বাস বাস্তবায়ন এবং দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।”

২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডে ১১১ শ্রমিক প্রাণ হারান এবং আরও অনেকে আহত হন। এখনও ক্ষতিগ্রস্ত ও নিহতদের পরিবার ন্যায্য ক্ষতিপূরণ ও বিচার না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছে।