ঘর-বাড়ি বিলীন হচ্ছে নদী গর্ভে

দিনে নয়, রাতের আধারে মেঘনা নদী থেকে তোলা হচ্ছে বালু

Sadek Ali
আশিকুর রহমান, নরসিংদী প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৪:১১ অপরাহ্ন, ০৩ মে ২০২৫ | আপডেট: ৪:৩৮ অপরাহ্ন, ১০ অগাস্ট ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

নরসিংদী জেলার রায়পুরা একটি বৃহত্তর উপজেলা। এই উপজেলার ২৪টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬টি ইউনিয়নই মেঘনা নদী বেষ্টিত দূর্গম চরাঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় বালু ব্যবসায়ীদের কাছে সবচেয়ে নিরাপদ ও অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে। ফলে উপজেলার পলাশতলী ও পাড়াতলী এই দুই ইউনিয়নের মাঝামাঝি আলুকাটা নামক স্থানে স্থানীয় প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে অবৈধভাবে ড্রেজারে চুম্বক মেশিন বসিয়ে দিনের আলোতে নয়, রাতের আধারে মেঘনা নদী থেকে অবাধে বালু উত্তোলন করছেন এক শ্রেণির অবৈধ বালু ব্যবসায়ীরা। একদিকে যেমন সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব আর অন্যদিকে ভাঙছে নদীর দুইপার। ফলে কৃষকের জমি ও ঘর-বাড়ি বিলীন হচ্ছে নদীর গর্ভে। ইউনিয়নবাসীরা এসব বালু খেকোদের অন্যায় অত্যাচার বন্ধের দাবিতে বেশ কয়েকবার মানববন্ধন, বিক্ষোভসহ তাদের অত্যাচার থেকে বাঁচতে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে আবেদনও করেন। পরে স্থানীয় প্রশাসন গ্রামবাসীর আবেদনের প্রেক্ষিতে বালু খেকোদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে গেলে বালু খেকোরা প্রশাসনের উপর হামলা ও গুলি ছুঁড়ে। এসময় তাদের গুলির মুখে প্রশাসন পিছু হটতে বাধ্য হয়। এরপর বালু খেকোরা তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে কৌশল পাল্টিয়ে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন। 

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতেই পলাশতলী ও পাড়াতলী এই দুই ইউনিয়নের মাঝামাঝি আলুকাটার মেঘনা নদীর চারিপাশে ছিমছাম নিরবতা পরিবেশ বিরাজ করছে। এরমধ্যে ওই স্থানে প্রতিদিনের মত বালু খেকোরা তাদের ব্যবসার প্রসরা সাজিয়ে বসেছেন। বেশকয়েকটি চুম্বক ড্রেজার দিয়ে ১৬ ইঞ্চি পাইপের সাহায্যে বালু উত্তোলনের প্রস্তুতি চলছে। ইতিমধ্যে প্রায় শতাধিক ভলগেট এসে উপস্থিত হয়েছেন বালু বোঝাই করতে। প্রতিদিন রাত থেকে ভোর পর্যন্ত টানা কয়েক ঘন্টায় প্রায় ২৫ থেকে ৩০ লক্ষ ফুট এভাবে বালু উত্তোলন করছেন তারা নির্বিঘ্নে। আর এসবের মূলে রয়েছেন ওই এলাকার প্রভাবশালী সোরাব মেম্বার, আবুল মেম্বার, লতিফ মেম্বার, মনির সহ স্থানীয় একটি চক্র। আর এ দুষ্ট চক্রটি প্রশাসনক ফাঁকি দিয়ে বালু উত্তোলনের মধ্যে  প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এতে সরকার হারাচ্ছে মোটা অংকের রাজস্ব। তাদের এনেহ কর্মকাণ্ডে ওই দুই ইউনিয়নের বেশি কয়েকটি গ্রামের ফসলি জমি, বেড়িবাঁধ এবং ঘর-বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে কৃষক হারাচ্ছে তাদের জমি। আর মানুষ হয়ে পড়ছে গৃহহীন। ফলে গ্রামবাসীরা ফুঁসে উঠছেন। এতে বালু ব্যবসায়ীদের সাথে গ্রামবাসীদের মধ্যে যেকোনো সময় রক্তক্ষয়ীর আশংকা করছেন বলে জানান গ্রামবাসী।  

আরও পড়ুন: ঢাকা ইস্ট-ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প বাতিলের দাবিতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে মানববন্ধন

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভলগেট চালক বলেন, যারা এই কাজে জড়িত তারা সকলেই এলাকার স্থানীয় ও প্রভাবশালী। প্রশাসন যদি মনে করে নদী থেকে বালু তোলা বন্ধ থাকবে তাহলে কারও শক্তি নাই বালু তোলার। তাই তারা প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই নদী থেকে বালু তুলচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, যেখানে বালু তোলা হয় আমরা সেখানেই ভলগেট নিয়ে হাজির হই। নদী থেকে আমরা ১ টাকা বা ১ টাকা দশ পয়সা ফুট ধরে বালু কিনে অন্য জায়গায় নিয়ে একটু বেশি দামে বিক্রি করি।

স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে রাতের আধারে বালু খেকোরা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। এসব বালু খেকোদের অত্যাচারে আমরা গ্রামবাসী অতিষ্ঠ। তাদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকবার প্রতিবাদ করেছি। তারপরও বন্ধ হচ্ছে না বালু উত্তোলন। যদি প্রশাসন মেঘনা নদী থেকে বালু বন্ধ করে ব্যর্থ হয়, তাহলে আমরা আমাদের সম্পদ রক্ষা করতে যেকোনো পদক্ষেপ গ্রহন করতে বাধ্য হবো।

আরও পড়ুন: ফের ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম রবি শিক্ষার্থীদের

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কৃষক বলেন, এলাকার কয়েকজন মেম্বার ও একটি চক্র মিলে বালু উত্তোলন করছেন। প্রশাসনের লোকজন তাদেরকে বাঁধা দিতে এলে তারা প্রশাসনের উপর গুলি করে। এরপর থেকে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে পড়ে। প্রশাসনের লোকজনও তাদের কিছুই করতে পারছে না। এখন আমরা কি করতে পারি? আমাদের সম্পদ আমাদেরকেই রক্ষা করতে হবে। সেজন্য আইন নিজের হাতে তুলে নিতে বাধ্য হবো।

রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা  জানান, মেঘনা নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করতে জেলা প্রশাসন সর্বদা সচেষ্ট রয়েছেন। ইতিমধ্যে উপজেলা প্রশাসন অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে কয়েক দফা ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করে জেল-জরিমানা-ড্রেজার জব্দ সহ দণ্ড প্রদান করেছে। এসব অবৈধ কাজে যারাই লিপ্ত তাদের একজনকেও ছাড় দেওয়া হবে না বলেও তিনি জানান।