কামারশালায় টুংটাং শব্দ, বইছে ঈদের আমেজ

আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্যে আত্মোৎসর্গ করাই কোরবানি। শরিয়তের পরিভাষায়, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় তাঁর নামে পশু জবাই করাকে কোরবানি বলে। ঈদুল আজহা উপলক্ষে আল্লাহর নামে নির্দিষ্ট কিছু হালাল পশু জবাই বা কোরবানি করা হয়।
আর এই ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন দেশের বিভিন্ন জেলা- উপজেলার কামার শিল্পীরা। দিন-রাত চলছে কামার পাড়ায় চাপাতি, দা, বটি, ছুরি তৈরি ও শানের কাজ।
আরও পড়ুন: রায়পুরায় কাউকেই গ্রীন সিগন্যাল দেওয়া হয়নি বলে দাবি মনোনয়ন প্রত্যাশীদের
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় ঘুরে দেখা যায়, প্রত্যন্ত জনপদের কামাররা এখন মহাব্যাস্ত সময় পার করছেন। লাল আগুনের লোহায় কামারদের পিটাপিটিতে মুখর হয়ে উঠেছে কামার দোকানগুলো। টুংটাং শব্দটি তাদের জন্য এক প্রকার ছন্দ।
যশোর জেলায় প্রায় তিনশো কামারশালা দোকান রয়েছে। এর সাথে জড়িত রয়েছে দেড় সহস্রাধিক মানুষ। কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন যশোর সদরের রূপদিয়া, অভয়নগর, নওয়াপাড়াসহ বিভিন্ন উপজেলার হাটবাজারের কামার শিল্পীরা৷
আরও পড়ুন: কুলাউড়ায় গ্রাম পুলিশদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধন করলেন জেলা প্রশাসক
যশোর সদর উপজেলার রূপদিয়া বাজারের বাবুল কর্মকার বলেন, “এখন কিছু আয় হলেও সারা বছর আমাদের অনেকটা বেকার থাকতে হয়।”
কিশোরগঞ্জের ভৈরবেও দেখা গেছে ঈদ উপলক্ষে কাজে ব্যস্ত কামার সম্প্রদায়ের লোকজন৷ ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নিরলসভাবে দা, ছুরি ও বটি তৈরির কাজে ব্যস্ত তারা।
ভৈরবে প্রায় ৩০ টি দোকানে ২ সহস্রাধিক কামার রয়েছে৷ ভৈরবের সবচেয়ে বড় কামারপাড়া হিসেবে পরিচিত রাণীর বাজার কামারপাড়া৷
জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার মির্জাপুর, বাহাদিয়া, মঠখোলা, নারান্দী এলাকাসহ উপজেলার আরো বেশ কিছু এলাকায় কামার পল্লী রয়েছে। শতশত বছর ধরে ওই এলাকার বাসিন্দারা কামার পেশার সঙ্গে জড়িত। নিত্য প্রয়োজনীয় দা, ছুরা, বটি, খন্তি, রামদা, চাপাতিসহ লোহা পুড়িয়ে বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন এ পেশার লোকেরা। তবে কালের বিবর্তনে অনেক যন্ত্রপাতিই এখন অত্যাধুনিক হয়ে যাওয়ায় কামারদের ওপর নির্ভরতা কমছে। আগের মতো চাহিদা নেই এসব যন্ত্রপাতির। তাই বাধ্য হয়ে অনেকে বাপ-দাদার পেশা বদল করে ঝুঁকছেন অন্য পেশায়।
চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলী, ফিরিঙ্গী বাজার এলাকার বেশকিছু কামারশালা ঘুরে দেখা যায়, পশু কোরবানির দা, ছুরি, চাপাতিসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনতে এখন থেকেই কামারপাড়ায় ঢুঁ মারছেন সাধারণ মানুষ। কেউবা আসছেন ঘরে থাকা দা-বটি-ছুড়িতে শান দিতে।
বায়েজিদ উপজেলার শেরশাহ বাংলাবাজারের শিবু কর্মকারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদকে ঘিরে গরুর বাজার এখনো ভালোভাবে জমে ওঠেনি। তবে যারা নতুন সরঞ্জাম বানাবেন তাদের কাছ থেকে অর্ডার পাওয়া যাচ্ছে। যাদের ঘরে সরঞ্জাম মজুদ আছে তারাও শান দিতে কামারশালায় আসছেন। তবে অধিকাংশ মানুষ কোরবানের গরু কিনে অথবা ঈদের এক সপ্তাহ আগে দা, ছুরি, বটিতে ধার দিতে চান। তখন ব্যস্ততা আরো বাড়বে।
দাম জানতে চাইলে শিবু কর্মকার স্টোরের কারিগর সনাতন কর্মকার বলেন, বর্তমানে পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি ১৫০ থেকে ৩শ টাকা, দা ২৫০ থেকে ৬শ টাকা, বটি ৩শ থেকে ৫শ টাকা, পশু জবাইয়ের ছুরি মান ও আকারভেদে ৩শ থেকে ১ হাজার টাকা, হাঁসুয়া ১৫০, মাংস কাটার ডাসা ২ হাজার টাকা, কাটারি ২৫০ থেকে ৩শ টাকা, কুড়াল ৮শ থেকে ১ হাজার টাকা ও চাপাতি ৫শ থেকে ১২শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শেরপুর জেলার পাঁচ উপজেলার বিভিন্ন বাজার বা কামাড় পাড়া ঘুরে দেখা যায়, কামাররা এখন মহাব্যস্ত সময় পার করছেন। বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রাংশের প্রভাবে কামার শিল্পের দুর্দিন চললেও ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে জমে উঠে তাদের এই হস্তশিল্প।
নকলা শহরের ছাত্রী ছাউনির পেছনের কামারশালার কারিগর মস্তোফা মিয়া বলেন, “সারা বছর এই কোরবানির ঈদের জন্য অপেক্ষায় থাকি। এ সময়টিতে যারা কোরবানির পশু জবাই করেন তারা প্রত্যেকে চাপাতি, দা, বটি, ছুরি তৈরি করেন। বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে এ সময়টিতে কাজ বেশি হওয়ার কারণে লাভও বেশি হয়। তবে লোহা আর কয়লার দাম বেশি থাকায় মজুরিও একটু বেশি নিতে হচ্ছে।”