ক্ষুব্ধ জনতা প্রায়ই থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করছে

মোহাম্মদপুর থানার ওসির শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সাথে যোগাযোগসহ গুরুতর অভিযোগ

Sanchoy Biswas
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৬:৫৫ অপরাহ্ন, ২৭ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ২:০০ অপরাহ্ন, ২৭ জুলাই ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারী ও মাদক কারবারিদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন মোহাম্মদপুর থানার ওসি ইফতেখার। এ কারণে অপরাধীদের কারো কারো বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেন না তিনি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের চাপে ব্যবস্থা নিতে গেলেই ফোনে ওসিকে ধমক শুনতে হয়—কখনো শীর্ষ সন্ত্রাসী হেলালের, কখনো সেকেন্ড ইন কমান্ড সন্ত্রাসী জাহিদ মোল্লার। এ পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না মোহাম্মদপুরের ধসে পড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের সূত্র বলছে, ওসি ইফতেখার যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন যুবদলের নেতা, মোহাম্মদপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালের সেকেন্ড ইন কমান্ড সন্ত্রাসী জাহিদ মোল্লার সঙ্গে। থানার একাধিক সাব-ইন্সপেক্টর বলেছেন, ওসি স্যার ঠিক হলে ছিনতাই বন্ধ করা ২৪ ঘণ্টার ব্যাপার। কিন্তু উনি আমাদের কিছুই করতে দেন না। চারজন সাব-ইন্সপেক্টর ও দুজন এএসআই আছেন যারা ওসি স্যারের ক্যাশিয়ার হিসেবে কাজ করেন। তাদের কথাতেই থানা চলে। এদের একজন এএসআই অবশ্য ছিনতাইকারীদের সহযোগিতা করার অভিযোগে ক্লোজ হয়েছেন দুদিন আগে।

আরও পড়ুন: নাসিরনগরে আন্তর্জাতিক যুব দিবস পালিত

বিহারী অধ্যুষিত জেনেভা ক্যাম্পের মাদক কারবারীদের থেকে নিয়মিত মাসোহারা পান ওসি ইফতেখার। তাই ডিসির নির্দেশে নিয়মিত মাদকবিরোধী অভিযান হলেও জেনেভা ক্যাম্প থেকে কোনো মাদক উদ্ধার হয় না। ওসির সোর্স আগেই জানিয়ে দেয় অভিযানের খবর।

বগুড়ায় বাড়ি হওয়ায় নিজেকে খুবই দেশপ্রেমিক ওসি দাবি করলেও মোহাম্মদপুরের ওসি ইফতেখারের সঙ্গে রয়েছে আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানকের খুবই সখ্যতা। আছে তার লোকদের সঙ্গেও নিবিড় যোগাযোগ।

আরও পড়ুন: সাভারে পাচারকালে পিকআপসহ সাড়ে ৬ লাখ টাকার টিসিবি’র পণ্য জব্দ, আটক-১

কোনো ভিকটিম থানায় গেলে তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন ওসি ইফতেখার। গেল শুক্রবার মোহাম্মদপুর থানার ওসির পদত্যাগ দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠে মোহাম্মদপুরের স্থানীয় জনগণ। দীর্ঘক্ষণ মোহাম্মদপুর থানা ঘেরাও করে থানার সামনে বিক্ষোভ করে এলাকাবাসী।

এর আগে এক সাংবাদিকের মোবাইল ফোন ছিনতাই নিয়ে "এক ঘণ্টায় মোহাম্মদপুর থানা" শিরোনামে ফেসবুক স্ট্যাটাস ব্যাপক ভাইরাল হয়। এতে বলা হয়, ওসি বলেছেন: “আমি ইফতেখার, মোহাম্মদপুর থানার ওসি। আমি এত দামি ফোন ব্যবহার করতে পারি না। আপনি এত দামি ফোন নিয়ে ঘোরাফেরা করলে ছিনতাই তো হবেই।”

এছাড়া ওই সাংবাদিক লেখেন যে, থানায় গিয়ে সহযোগিতা না পেয়ে পরবর্তীকালে মোহাম্মদপুর এলাকায় এসে একজন এএসআইকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে গেলে এবং ওই ছিনতাইকারী বসে আছে দূর থেকে দেখিয়ে দেওয়ার পরেও পুলিশ কোনো সহযোগিতা করেনি।

পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে শুক্রবার দিনভর মোহাম্মদপুর থানায় অবস্থান করেন তেজগাঁও অপরাধ বিভাগের ডিসি ইবনে মিজান। তার তত্ত্বাবধানে ওই সাংবাদিকের মোবাইল ফোন উদ্ধার করে পুলিশ। তারপরেও বিক্ষুব্ধ জনতাকে ঠেকানো যায়নি। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী মোহাম্মদপুর থানার ওসি ইফতেখারকে ‘ফ্যাসিস্টের দোসরদের সহযোগী’ উল্লেখ করে তার অপসারণ দাবিতে বিক্ষোভ দেখায় তারা।

এর আগে আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানকের এক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করতে গেলে হাতকড়া লাগানোর পরেও ওসির নির্দেশে তাকে ছেড়ে দিয়ে আসে পুলিশ। এলাকাবাসী বলছেন, ওসি ইফতেখার মোহাম্মদপুর থানায় যোগদানের পর থেকে চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধের মাত্রা অনেক বেড়ে গেছে। নির্ধারিত ক্যাশিয়ারদের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে রীতিমতো চাপ সৃষ্টি করে টাকা আদায় করেন ওসি ইফতেখার।

ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তার প্রতি খুবই রুষ্ট হলেও ডিএমপি হেডকোয়ার্টারের বিশেষ মহলের স্নেহধন্য হওয়ার কারণে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। বিভিন্ন ওয়ারেন্ট তামিল করতে গেলে আসামি আটকের পর ওসির নির্দেশে তাদের ছেড়ে দিয়ে আসেন সাব-ইন্সপেক্টররা। পরে ওসি ওই ব্যক্তিদের কাছ থেকে মাসোহারা আদায় করেন। অন্য সাব-ইন্সপেক্টর ও তার ক্যাশিয়ারদের মাধ্যমে টাকা আদায় করা হয়।

এদিকে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হওয়ায় এলাকাবাসী ওসির উপর খুবই রুষ্ট। কয়েক দফা ওসির অপসারণ দাবি করলেও ডিএমপি হেডকোয়ার্টার থেকে কোনো সাড়া মেলেনি। কয়েক মাস আগেও ওসিকে আওয়ামী লীগের নেতার সঙ্গে থানায় বসে বৈঠক করার খবর ভাইরাল হয়েছিল। তখনও ওসিকে মাফ করে দেন পুলিশ কমিশনার।

কয়েকদিন আগে জেনেভা ক্যাম্প থেকে এক মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করা হলেও উদ্ধার মাদকের মামলায় তাকে না দিয়ে অন্য মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এই মামলার কার্যক্রম কার্যত বন্ধ হয়ে আছে। এ ব্যাপারে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি ওসি ইফতেখার।

আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও ওসির চাঁদাবাজির প্রতিবাদে ওসি ইফতেখারের অপসারণ দাবিতে বিকেলে থানা ঘেরাও করে উত্তেজিত এলাকাবাসী।

এ পরিস্থিতিতে তেজগাঁও অপরাধ বিভাগের ডিসি ইবনে মিজান তাৎক্ষণিকভাবে দুই কর্মকর্তাসহ থানার চার পুলিশ সদস্যকে সাসপেন্ড করেন। এছাড়া তেজগাঁও অপরাধ অঞ্চলের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আলমগীর কবীরকে প্রধান করে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছেন। আর ডিএমপি হেডকোয়ার্টারের এক শক্ত খুঁটির জোরে এখনও বহাল তবিয়তে আছেন ওসি ইফতেখার।