শহরতলীর মুচিপাড়ায় চামারি ও ভারতীয় মদের রমরমা ব্যবসা, মাদকদ্রব্য অধিদপ্তর নীরব

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার পিরোজপুর মুচিপাড়া, উত্তম লাল সুইপার কলোনী, রাবার বাড়ি মুচিপাড়া, নীলপুর বাজার, দিরাই রাস্তার মোড়, বেতগঞ্জ-সাদকপুর মুচিপাড়া, বুড়িস্থল মুচিপাড়া, গুদারগাঁও মুচিপাড়া, আমবাড়ি নুরপুর মুচিপাড়ায় চামারি ও ভারতীয় মদের রমরমা ব্যবসা চলছে। এতে যুবসমাজ ধ্বংসের পথে থাকলেও মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের ভূমিকা নীরব।
রোববার (৩ আগস্ট) সরেজমিন ঘুরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে পিরোজপুর আবাসিক এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা সুরেশ দাস, যোগেশ দাস, হীরামন দাস, মোহন দাসের মনি দাস, নীলপুর-রাবার বাড়ির গিয়াস উদ্দিন, নিখিল দাস, নীলু দাস, গুদারগাঁও মুচিপাড়ার শিকলু রবি দাস, সুবিধ দাস, বেতগঞ্জ, বুড়িস্থল, সাদকপুর মুচিপাড়ার সংগ্রাম, লালচাঁদ, গোগেশ্বর দাস, ফুলচাঁদ, ল্যাম্পুস, আমবাড়ি নুরপুর মুচিপাড়ার রাজ কুমার, মন্টু দাস অবৈধভাবে চামারি ও ভারতীয় মদ তৈরি করে পৌরসভা, দোয়ারাবাজার উপজেলার আমবাড়ি নুরপুর, কাটাকালি বাজারসহ সদর উপজেলায় বিক্রি করে থাকে। পিরোজপুর, বেতগঞ্জ, আমবাড়ি বাজার এবং আবাসিক এলাকায় কুড়ি খানেক মুচি পরিবার বসবাস করে থাকে। তাদের একমাত্র পেশা হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মদ তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করা। শহর এবং শহরতলীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা থেকে উঠতি বয়সের যুবকরা দিন-রাত তাদের বসতঘরে বসে মদ সেবন করে নেশা করছে। সুকৌশলে পুরুষ লোক ঘরের ভেতরে লুকিয়ে থেকে মহিলা দিয়ে মদ বিক্রি করে থাকে। তারা সংখ্যালঘু হওয়ার পরও তাদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না।
আরও পড়ুন: ফরিদপুর জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি নাছির গ্রেপ্তার
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাশের বাড়ির একজন ব্যবসায়ী বলেন, এই মুচি পরিবারের জন্য আমাদের মহল্লার পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে ওয়াজখালী, পিরোজপুর, রাবার বাড়ি, বেতগঞ্জ, সাদকপুর, আমবাড়ি এবং নতুন বাসস্টেশনের অধিকাংশ চালকরা প্রতিদিন তাদের ঘরে রান্নাবান্না করে আনন্দ-উল্লাসে মদ পান করে। আমরা অনেকবার স্থানীয় কাউন্সিলরকে মদ তৈরির বিষয়ে অবগত করার পর তিনি তাদেরকে ডেকে মদ তৈরি বন্ধ করার নির্দেশ দেন। কিন্তু নিষেধ করার পরও বন্ধ করেনি।
মাদক বিক্রেতা সুরেশ দাস বলেন, আমরা যে মদ তৈরি করি তা বিক্রি করার জন্য নয়, আমরা নিজেরাই সেবন করি।
আরও পড়ুন: কমলগঞ্জে চা বাগানের সেকশন থেকে চা শ্রমিকের লাশ উদ্ধার
কাউন্সিলর গোলাম আহমদ সৈনিক বলেন, আমি গ্রামবাসী নিয়ে অনেকবার চেষ্টা করেছি তাদের জায়গাটি ক্রয় করে উচ্ছেদ করার জন্য কিন্তু উঠানো সম্ভব হয়নি। প্রশাসন ও মাদকদ্রব্য অধিদপ্তর যদি মাঝে মাঝে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতো তাহলে মদ তৈরি বন্ধ হয়ে যেত। আপনারা যদি একটু লেখালেখি করতেন তাহলে প্রশাসনের দৃষ্টিগোচর হতো। মদ তৈরির জন্য আমার ওয়ার্ডের নাগরিকরা অনেকবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাদের ঘরবাড়ি ভেঙে ফেলার জন্য। কিন্তু আমি তাদেরকে বুঝিয়ে বলেছি আইন হাতে নেবেন না। আমরা আইনিভাবে মাদকের বিরুদ্ধে লড়ব।
সুনামগঞ্জ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল হোসেন বলেন, গত কয়েকদিন আগে আমরা পিরোজপুরে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছি। কিন্তু কোনো মদ পাইনি। তারপরও খোঁজ নিয়ে দেখা হবে মদ তৈরি হয় কি না। আগামী ৬ তারিখে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে। গত মাসে আমরা মাদকের বিরুদ্ধে ২৪টি মামলা দিয়েছি। জনবল কম থাকার কারণে প্রতিনিয়ত অভিযান করা সম্ভব হচ্ছে না। আইনগতভাবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আবুল কালাম বলেন, ওয়াজখালী, পিরোজপুর, রাবার বাড়ি, উত্তম লাল কলোনী, সাদকপুর, বেতগঞ্জ এলাকার মুচি পরিবার মদ তৈরি করে তারা নিজেরা সেবনের জন্য। খোঁজ নিয়ে দেখা হবে যদি সেবনের চেয়ে অতিরিক্ত মদ তৈরি করে তাহলে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।