চিঠি দিয়েও আত্নসাতকৃত অর্থ ফেরত পায়নি গাসিক

মামলায় নেই অগ্রগতি, সাড়ে তিন বছরেও চার্জশীট দেয়নি দুদক

Any Akter
গাজীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১২:৪৭ অপরাহ্ন, ১০ অগাস্ট ২০২৫ | আপডেট: ৫:০৩ অপরাহ্ন, ১০ অগাস্ট ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত
অর্থ জালিয়াতির প্রায় ৮ বছর অতিবাহিত হলেও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বরখাস্তকৃত হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ নজরুল ইসলামের আত্নসাতকৃত অর্থ ফেরত পায়নি গাসিক কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে তার বিরুদ্ধে দূর্নীতি দমন কমিশন এ বিষয়ে মামলা দায়ের  করার সাড়ে ৩ বছর পরও অভিযোগ দাখিল করতে পারেনি।  অর্থ আত্নসাতের এ ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে অভিযুক্ত নজরুলসহ একটি মহল নানা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের প্রথম দিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের তৎকালিন হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে চেক জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা আত্নসাতের অভিযোগ করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম গাসিকের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে ভূয়া বিল ভাউচার ও নোটশিট তৈরী করে। পরে তৎকালিন মেয়র এম এ মান্নানের অসুস্থতার সুযোগে বিভিন্ন চেকে মেয়রের ফ্লেক্সোসিল ব্যবহার করে ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষর নিয়ে সিটি করপোরেশনের কোটি কোটি টাকা ইউনাইটড কমার্শিয়াল ব্যাংক টঙ্গী শাখায়  নজরুলের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে জমা করে। ওই একাউন্টে গত ১৮.১০.২০১৮ তারিখ পর্যন্ত জমা করা টাকার পরিমান ছিল ৩ কোটি ৪০ লাখ ৮৭ হাজার ৫৮৮.৬৪ টাকা। এ বিষয়ে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এর সহকারী পরিচালক মোঃ মনিরুল ইসলাম  ২০১৯ সালে বিষয়টি তদন্ত করেন। 

এ বিষয়ে কযেকটি শীর্ষ জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় ২০১৯ সালের মার্চে সংবাদ প্রকাশিত হলে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত মোঃ নজরুল ইসলামকে ২০১৯ সালের ৮ জুলাই সাময়িক বরখাস্ত করেন (জিসিসি/প্রশাসন/সাধারন/২০১৯/৪৮৯)। অন্যদিকে দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা তদন্ত করে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে রিপোর্ট পেশ করলে  বিষয়টি আরো অধিকতর তদন্ত করতে দুদকের তৎকালিন সহকারী পরিচালক মোঃ রাশেদুল ইসলামকে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ প্রদান করে দুদকের প্রধান কার্যালয় । তিনি দীর্ঘ তদন্ত  সম্পন্ন করে ২০২২ সালে  ৮২ লাখ ৩৪ হাজার ৮২৮ টাকা আত্নসাতের অভিযোগে নজরুলের বিরুদ্ধে  তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করেন। পরে ওই বছর ৬ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে দুদক সজেকা, ঢাকা-২ (গাজীপুর) এর মামলা (নং ১, তারিখ ০৬.০৪.২০২২, দন্ডবিধি ৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৪৭৭/৪০৯/১০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সনের দূর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা)  রুজু করা হয়। 

অন্যদিকে গাসিক কর্তৃপক্ষ এক সপ্তাহের মধ্যে আত্নসাতকৃত অর্থ ফেরত দিতে নজরুলকে চিঠি প্রদান করে। কিন্ত সে ওই সময়ের মধ্যে টাকা ফেরত না দিলে গাসিক কর্তৃপক্ষ আত্নসাতকৃত টাকা সমন্বয় করার লক্ষ্যে  তার খোরপোষ প্রদান স্থগিত রাখে। 

এদিকে মামলা দায়েরের  প্রায় সাড়ে তিন বছর অতিবাহিত হলেও তার বিরুদ্ধে  দুদক এখনো চার্জশীট দেয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গাসিকের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার পর কর্তৃপক্ষ টাকা ফেরতের নির্দেশ দিলেও সে তা অগ্রাহ্য করে সিটি করপোরেশনকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। ইতিমধ্যে সে নানাভাবে মামলাটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য গাসিকের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজসে নানা অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। অনেকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে মামলা ও তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে, তা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। তারা দুদকসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে মামলার কার্যক্রম দ্রুত শেষ করার অনুরোধ জানিয়েছেন।

দুদকের একটি সূত্র জানায়, মামলা দায়েরের পর ১৮০ কার্য দিবসের মধ্যে চার্জশীট জমা দেওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু এ মামলায় এখনো চার্জশীট প্রদান করা হয়নি। মামলার সার্বিক বিষয়ে জানতে তদন্তকারি কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক জেসমিন আক্তারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি দুদকের পিআরও এর মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহের জন্য বলেন। পরে পিআরও আকতারুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত শেষ করেছেন, এ মামলার অভিযোগ পত্র বা চার্জশীট প্রক্রিয়াধীন রয়েছে ।

এদিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ও ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মোঃ শরফ উদ্দিন চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, অর্থ আত্নসাতের  বিষয়ে নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুদক একটি মামলা করেছে। আত্নসাতকৃত অর্থ ফেরত চেয়ে সিটি করপোরেশন  নজরুল ইসলামকে চিঠি দিলেও সে টাকা ফেরত দেয়নি। এ জন্য তার খোরপোষের টাকা থেকে সিটি করপোরেশন প্রাপ্য টাকা সমন্বয় করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, নথি পর্যালোচনা করে তার বিরুদ্ধে আরো কোন ব্যবস্থা নেওয়া যায় কিনা - তা দেখব।