তৃতীয় দফা বন্যায় তিস্তা তীরের হাজারো মানুষ পানিবন্দি

Any Akter
আবু বক্কর সিদ্দিক লালমনিরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১০:৩৪ পূর্বাহ্ন, ১৬ অগাস্ট ২০২৫ | আপডেট: ১০:৩৪ পূর্বাহ্ন, ১৬ অগাস্ট ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তায় তৃতীয় দফায় দেখা দিয়েছে বন্যা। দু’দিন ধরে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পর গতকাল থেকে পানি নামতে শুরু করলেও দুর্ভোগে পড়েছেন জেলার পাঁচ উপজেলার হাজারো মানুষ।

শুক্রবার (১৫ আগস্ট) বিকেল ৩টায় হাতীবান্ধার তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ২১ সেন্টিমিটার নিচে রেকর্ড করা হয়। সন্ধ্যায় তা নেমে দাঁড়ায় ২৪ সেন্টিমিটার নিচে। তবে এর আগের ৪৮ ঘণ্টা পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নিম্নাঞ্চলের অন্তত ৩০টি গ্রামের প্রায় ১২ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। তলিয়ে গেছে রোপা আমনসহ নানা কৃষিজ ফসল।

আরও পড়ুন: ভোলাগঞ্জে শত কোটি টাকার পাথর লুট: পাঁচজন আটক

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, ডালিয়া পয়েন্টে ৪৪টি জলকপাট খুলে পানি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে নদীর পানি কমতে শুরু করলেও তিস্তা তীরবর্তী গ্রামগুলো এখনো প্লাবিত। বন্যা সতর্কতা কেন্দ্র জানায়, কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচে এবং ধরলা নদীর শিমুলবাড়ি পয়েন্টে ৩২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বিশেষ করে পাটগ্রামের গড্ডিমারী, দোয়ানী, সানিয়াজান; হাতীবান্ধার সিঙ্গামারি, সিন্দুর্না, ডাউয়াবাড়ী; কালীগঞ্জের নোহালী, ভোটমারী; আদিতমারীর মহিষখোচা, গোবর্ধন; এবং সদর উপজেলার ফলিমারী, খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা ইউনিয়নের ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে।

আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার ৮০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে নেত্রকোণায় যুবদলের মিলাদ মাহফিল

স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি ওঠানামার কারণে বারবার চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজে যেতে পারছে না, নষ্ট হয়েছে চাষাবাদ, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। গবাদিপশু নিয়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিতে হচ্ছে। দেখা দিয়েছে শিশু খাদ্য ও গবাদিপশুর খাবারের সংকট।

খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের বাসিন্দা সারমিন সুলতানা বলেন, “কয়েকদিন ধরে পানিবন্দি আছি। আজ পানি কিছুটা কমলেও খালি পায়ে কষ্ট করে প্রাইভেটে যাচ্ছি। ত্রাণ নয়, তিস্তার স্থায়ী সমাধান চাই।”

পানিবন্দি ফিরোজ হাসান সুরুজ বলেন, “পানি ঢুকে পড়ায় চুলা জ্বালানো সম্ভব হয়নি। গবাদিপশু ও পরিবারকে নিয়ে রাস্তায় আশ্রয় নিতে হয়েছিল। পুকুরের মাছও ভেসে গেছে। সরকার যদি তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে, আমরা রেহাই পাব।”

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার জানান, “নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হলেও নিম্নাঞ্চল এখনো প্লাবিত। কোথাও ভাঙন দেখা দিলে দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

চলতি মৌসুমে তিস্তা নদীতে এটি তৃতীয় দফা বন্যা। গত ২৯ জুলাই প্রথম দফায় ও ৩ আগস্ট দ্বিতীয় দফায় পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে। সর্বশেষ ১৩ আগস্ট থেকে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পর গতকাল থেকে তা নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।