জেলার বিভিন্ন স্থানে অস্ত্রের মহড়া
নরসিংদীতে ১০ দিনে ৭ খুন, জেলাজুড়ে আতঙ্ক

নরসিংদীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। খুনের অভয়ারণ্য হিসেবে আলোচিত হয়ে উঠেছে জেলাটি। গত দশ দিনে জেলার তিনটি উপজেলায় সাতটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া জেলার বিভিন্ন স্থানে অস্ত্রের মহড়া, সাংবাদিকের উপর হামলা, ছিনতাই, জমি সংক্রান্ত বিরোধ এবং প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি ও গোলাগুলি যেন নিত্যদিনের ঘটনা। এসব ঘটনা প্রতিরোধে পুলিশ প্রশাসনের তেমন কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না বললেই চলে। এমন পরিস্থিতিতে জেলাজুড়ে সাধারণ মানুষ আতঙ্ক বিরাজ করছে। এতে সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে অপরাধীদের কাছে। জানা যায়, সম্প্রতি নরসিংদী জেলায় গেল ১০ দিনে বেশকয়েকটি স্থানে বিভিন্ন কারণে ৭ জনের প্রানহানি ঘটে।
নরসিংদী সদর :- ১৮ সেপ্টেম্বর সকালে সদর উপজেলার আলোকবালি ইউনিয়নের মুরাদনগর গ্রামে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ইদন মিয়া (৭০) নামে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। এ ঘটনায় অত্যন্ত ১০ জন আহত হয়। এ ঘটনার জের শেষ না হতেই পরেরদিনই অথাৎ ১৯ সেপ্টেম্বর একই ইউনিয়নের বীরগাঁও সাতপাড়া গ্রামে ফেরদৌসী বেগম (৩৫) নামে এক গৃহবধূকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। আর এসব ঘটনা। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঘটেছে বলে জানান স্থানীয়রা।
আরও পড়ুন: নাজিরপুরে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা
রায়পুরা : ৮, ১৪ ও ১৮ সেপ্টেম্বর উপজেলার রায়পুরায় পৃথক ৩টি ঘটনায় ৩ জন নিহত হয়েছেন। ৮ সেপ্টেম্বর উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল চরমধুয়া ইউনিয়নের সমীবাদ গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কৃষক দুলাল মিয়াকে (৫০) গুলি করে হত্যা করে। পরিবার সূত্রে জানা যায়, সাবেক ইউপি মেম্বার খোকা আলম ও জাকির মিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এরই জের ধরে সন্ধ্যার পর দেশীয় অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে জাকির মিয়া ও তার অনুসারীরা খোকা আলমের বাড়িতে অতর্কিত হামলা চালায়। তাদের ছোঁড়া গুলিতে গুরুতর আহত হন কৃষক দুলাল মিয়া (৫০)। গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুলালকে মৃত ঘোষণা করেন। ১৪ সেপ্টেম্বর উপজেলার জঙ্গি শিবপুরে মানিক মিয়া (৬০) নামে এক মুদি দোকানীকে বাড়ি ফেরার পথে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পরে তার লাশ রাত দেড়টায় আড়িয়াল খাঁ নদীর পাড়ে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার তিনদিন পরই গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের পলাশতলী গ্রামে দাম্পত্য কলহকে কেন্দ্র করে স্বামী মানিক মিয়ার ছুরিকাঘাতে স্ত্রী শিউলি আক্তার (৩০) খুন হয়েছেন। পরিবার সূত্রে জানা যায়, কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে মানিক মিয়া তার স্ত্রী শিউলির বুকের মধ্যে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করলে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।
শিবপুর :- উপজেলার চক্রধা ইউনিয়নের বৈলাব গ্রামে টিউবওয়েল পানি প্রবাহকে কেন্দ্র করে আপন চাচাতো ভাইয়ের হাতে নির্মমভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে অপর সহোদর ওলিউল ইসলাম রানা (৪০) ও সাজ্জাদুল ইসলাম সোহাগ (৩৫) নামে দুই ভাইকে। পরিবার সূত্রে জানা যায়, চাচা মামুন মিয়ার বাড়ির ব্যবহৃত টিউবওয়েলের পানি ওলিউরদের বাড়ির উপর দিয়ে প্রবাহিত হতো। এ নিয়ে দুই পরিবারের মাঝে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে চাচা মামুন ও তার দুই ছেলে দিদার ও বিদ্যুৎ ছুরি, বল্লম, শাবল নিয়ে তাদের উপর হামলা করে। এসময় দিদার ও বিদুৎতের ছুরিকাঘাতে ঘটনাস্থলেই তারা মারা যান।
আরও পড়ুন: পিরোজপুর জেলা বিএনপির নতুন কমিটিকে জামায়াতের শুভেচ্ছা
সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক এর জেলা সম্পাদক সাংবাদিক হলধর দাস বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি শুধু নরসিংদী জেলা নয়, সারা দেশেই একই চিত্র। বিশেষ করে ৫ আগস্টের পর পুলিশ বাহিনীর মনোবল দুর্বল হয়ে পড়েছে। অপরাধপ্রবণতাও বেড়েছে। তাই এখনই অপরাধ কমাতে না পারলে, মানুষ নিজের হাতে আইন তুলে নেবে। মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তাহলে আমরা কি "জোর যার মুল্লুক তার" রাজ্যে ধাবিত হচ্ছি?
বিজ্ঞ আইনজীবী আরিফুল ইসলাম বলেন, নরসিংদী জেলায় আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। মানুষের নিরাপত্তা দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মনন্তর গতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাদের এই গতির ফলে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ফলে অপরাধীরা একের পর এক হত্যা ও রাহাজানির মত ঘটনা ঘটাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি আরও সক্রিয় ও বলপ্রয়োগ করে তাহলে এসব অপরাধ রোধ করা সম্ভব। পাশাপাশি অপরাধ নির্মূল ও রোধ করতে হলে সামাজিক বন্ধন বৃদ্ধি করতে হবে এবং সেই সাথে মাদক, অস্ত্র ও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করতে হবে।
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনার বিষয়ে সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা পুলিশ সুপার পুলিশ সুপার মোঃ মেনহাজুল আলম বলেন, এসব হত্যাকাণ্ডের বেশীরভাগই পারিবারিক। তবে সকল হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে পুলিশ কাজ করছে। এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় থানায় নিয়মিত মামলা দায়ের করা হচ্ছে। তদন্ত কাজ চলছে। অপরাধী যেই হোক না কেন, তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা চেষ্টা করছি, আইন শৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ধরে রাখতে। এরপর কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে যায়। আমরা কিন্তু বসে নেই, আমাদের পুলিশ কাজ করছে।