মেহেরপুরে কর্মক্ষেত্রে বাড়ছে নারীর অংশগ্রহণ

এক সময় ছিল, যখন মেহেরপুরের নারীরা ঘরের বাইরে পর্দা সরিয়ে এক পা রাখলেই সমাজ তাদের তিরস্কারের চোখে দেখত। তাদের জীবন চলত চুলার পাশে, বাড়ির উঠোনে। সেই নারীরা আজ ছুটে চলেছেন ধানখেতে, ইটভাটায়, রাস্তা মেরামতের কাজে। এ ধরনের কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রন দিন দিন বাড়ছে। কৃষিকাজে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও দেখাচ্ছে তাদের দক্ষতা। পেঁয়াজ, কচু, মরিচ তোলা ও বাছাইয়ে নারীদের অংশগ্রহন পুরুষদের বেশি।
মেহেরপুরে নারীরা কৃষি কাজে ক্রমবর্ধমান হারে অংশগ্রহণ করছেন, যেখানে তারা বাড়ির আঙ্গিনায় সবজি চাষ, পতিত জমিতে বস্তায় আদা চাষ, এবং ফসলের মাড়াই, ঝাড়াই, ও প্রক্রিয়াজাতকরণের মতো বিভিন্ন কাজে যুক্ত হয়েছেন। গ্রাম উন্নয়ন সংগঠন এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে এই অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা নারীদের আর্থিকভাবে সচ্ছল করতে এবং গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করছে।
আরও পড়ুন: নাজিরপুরে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা
গাংনী উপজেলার ষোলটাকা ইউনিয়নের একটি রাস্তার পাশে দেখা মেলে কয়েকজন নারী শ্রমিকের। তাদের মধ্যে একজন সেফালী খাতুন, বয়স প্রায় পঞ্চাশ। হাতে কোদাল চালাতে চালাতে হেসে বললেন, আমরা মাইয়া মানুষ তাতে কি? কাজ করছি, চুরি তো করছিনা।
মুজিবনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামের শারমিন আক্তার। নিজ বাড়ির উঠানে আঙ্গুর চাষ করে বাজিমাত করেছেন। শারমিন জানান, করোনার সময় বাচ্চার দুধ কিনতে বহুজনের কাছে টাকা ধার চেয়েছিলাম। কিন্তু তেমন কেউ সাহায্য করিনি। পরে বাড়িতেই আঙ্গুর চাষ শুরু করি। গত দু বছর ধরে ফলন পাচ্ছি। আল্লাহর রহমতে এখন ভালো আছি।
আরও পড়ুন: পিরোজপুর জেলা বিএনপির নতুন কমিটিকে জামায়াতের শুভেচ্ছা
শহরের কবরস্থান পাড়ার অনেক নারী করেছেন পারিবারিক খামার। গাভি, বাছুর, এড়ে সব ধরনের গরু আছে তাদের খামারে। গুরু গুলোকে প্রতিদিন সকালে রাস্তার ধার গুলোতে জন্মানো ঘাস খাওয়াতে নিয়ে আসে তারা। সন্ধে হলেই আবার বাড়ি ফিরে যায়।
এছাড়াও মেহেরপুরের বিভিন্ন শপিংমলে নানান পদে কাজ করছেন মেয়েরা। স্বনির্ভর হতে চায় বর্তমান প্রজন্মের মেয়েরা। যেকোন কাজকে দক্ষতা অর্জন হিসেবে দেখছে তরুণীরা।
জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে জানা যায়, মেহেরপুর জেলার ১৮টি ইউনিয়নে বর্তমানে দুই হাজার নারী শ্রমিক যুক্ত আছেন কৃষি ও অবকাঠামো উন্নয়ন কাজে। মেহেরপুর মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নাসিমা খাতুন জানান, বর্তমানে নারীরা বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন, আয়বর্ধক কাজ শিখছেন। নিজেরাই উদ্যোক্তা হচ্ছে। নানা কর্মে জড়াচ্ছেন।
স্থানীয় সমাজকর্মী মাহবুবুল হক মন্টু বলেন, আগের চেয়ে গ্রামীণ নারী শ্রমিকরা অনেক বেশি সচেতন হয়েছেন। নানা কাজে তাদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। কৃষিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে। নির্মান কাজে তাদের অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মত। এতে নিজে যেমন স্বাবলম্বী হচ্ছে, পাশাপাশি গোটা আর্থসামাজিক উন্নয়নেও ভুমিকা রাখছে।