লাল নিশানা সাটিয়ে যাদুকাটা-১ বালু মহালের সীমানা নির্ধারণের কাজ সম্পন্ন

উচ্চ আদালতের নির্দেশে প্রশাসন কর্তৃক সুনামগঞ্জের সীমান্ত নদী যাদুকাটা-১ বালু মহালের সীমানা লাল নিশানা দ্বারা সম্পূর্ণভাবে নির্ধারণ করে সরেজমিনে ইজারাদারকে দখল বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, রবিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে যাদুকাটা-১ এর সীমানা বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সার্বিক সহযোগিতায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাহারুখ আলম শান্তুনু সরেজমিন এলাকায় এসে সার্ভেয়ার ও তফসিলদারের মাধ্যমে প্রতিবাদকারীদের সমন্বয়ে সীমানা বুঝিয়ে দেন ইজারাদারকে।
আরও পড়ুন: চুয়াডাঙ্গায় মদপানে ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে আরও ১
সীমানা নির্ধারণের সময় আরও উপস্থিত ছিলেন— তাহিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ দেলোয়ার হোসেন, টুকেরবাজার নৌ-পুলিশের ইনচার্জ দিলীপ বড়ুয়া, বাদাঘাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. হাফিজ উদ্দিন, লাউড়েরগড় বিজিবি ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডারসহ দুই ডজন বিজিবি সদস্য, লাউড়েরগড় বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. রইছ মিয়া, ব্যবসায়ী বিল্লাল হোসেন, লোকমান মিয়া, গোলাম রব্বানী, ইউপি সদস্য মোস্তফা মিয়া, হারুন অর রশিদ, জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।
স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) যাদুকাটা-১ এর ইজারাকৃত বালুমহাল স্থানীয় প্রশাসন সরেজমিন এলাকায় গিয়ে ইজারাদারকে বুঝিয়ে দেওয়ার সময় সাবেক ইজারাদার শ্রমিক নেতা সেলিম আহমেদ, যুবলীগ নেতা ইজারাদার রতন মিয়া ও দুষ্কৃতিকারী খোরশেদ আলমের লোকজন বাধা প্রদান করায় সীমানা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তাই আজ রবিবার (৫ সেপ্টেম্বর) উপজেলা প্রশাসন প্রতিবাদকারীদের সমন্বয়ে লাল নিশানার মাধ্যমে ইজারাদারকে বুঝিয়ে দেয়। তারা আরও বলেন, সাবেক দুই ইজারাদার কর্তৃক উচ্চ আদালতে রিট করে দীর্ঘ প্রায় পাঁচ মাস যাদুকাটা নদী বন্ধ রাখে। এতে তিনটি উপজেলার প্রায় অর্ধলক্ষাধিক নৌ-শ্রমিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী খুবই কষ্টে জীবন যাপন করেছেন। অনেক জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে উচ্চ আদালতের রায় আজ কার্যকর হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে উৎপাদনশীল করতে হলে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে: ড. মঈন খান
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশে ইজারাকৃত যাদুকাটা-১ বালু মহালের সীমানা প্রতিবাদকারীদের সমন্বয়ে উপজেলা প্রশাসন আজ সম্পূর্ণভাবে ইজারাদারকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। এতে করে নৌ-শ্রমিকদের মনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে শ্রমিকদের বলে দেব সরকার নির্ধারিত সীমানার ভেতর থেকে সনাতন পদ্ধতিতে বালু উত্তোলন করতে। যে বা যারাই এই সীমানা লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে অনুরোধ করবো।
শ্রমিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হাকিকুল ইসলাম সর্দার বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই যে প্রতিবাদকারীদের সমন্বয়ে যাদুকাটা-১ এর সীমানা পুনঃনির্ধারণ করে দেওয়ার জন্য। আমাদের বারকি শ্রমিকদের জানিয়ে দেব সরকার নির্ধারিত সীমানার ভেতর থেকে সনাতন পদ্ধতিতে বালু উত্তোলনের জন্য। কিছু সংখ্যক দুষ্কৃতিকারী লোকের কারণে দীর্ঘ প্রায় ছয় মাস যাবৎ শ্রমিকরা নদীতে বালু উত্তোলনের কাজ করতে পারেননি। এতে ব্যবসায়ী, শ্রমিক এবং ইজারাদার ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আমরা সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাই আদালতের নিষেধাজ্ঞায় ইজারাদারের গত ছয় মাসের রাজস্ব মওকুফ করার জন্য।
যাদুকাটা-১ বালু মহালের ইজারাদার নাছির মিয়া বলেন, আজ রবিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে উপজেলা প্রশাসন আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ে লাল নিশানা দিয়ে সম্পূর্ণভাবে আমাদেরকে বুঝিয়ে দেন। উল্লেখ্য, গত বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থানীয় প্রশাসন যাদুকাটা-১ এর সীমানা নির্ধারণ করতে গিয়ে সাবেক দুই ইজারাদার ফ্যাসিস্ট রতন মিয়া, সেলিম আহমেদসহ দুষ্কৃতিকারী খোরশেদ আলমের লোকজন বাধা সৃষ্টি করায় পূর্ণাঙ্গভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। আদালতের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার কারণে দীর্ঘ প্রায় ছয় মাস যাবৎ নদী বন্ধ থাকায় আমরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। তাই গত ছয় মাসের রাজস্ব মওকুফের জন্য প্রশাসনসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট আকুল আবেদন জানাই। এদিকে দুষ্কৃতিকারীরা জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানাভাবে যে অপপ্রচার চালিয়েছিলেন, তাদের প্রতি নিন্দা জানাই।
তাহিরপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাহারুখ আলম শান্তুনু বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ে আজ আমরা যাদুকাটা-১ এর সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছি।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান মানিক বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আজ আমরা লাউড়েরগড় শাহিদাবাদ গ্রামবাসীর সমন্বয়ে সম্পূর্ণভাবে যাদুকাটা-১ এর সীমানা লাল নিশানা দ্বারা নির্ধারণ করে দিয়েছি। সীমানার ভেতর থেকে ইজারাদার সনাতন পদ্ধতিতে বালু উত্তোলনে আর কোনো বাধা নেই।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া জানান, উচ্চ আদালতের নির্দেশে যাদুকাটা-১ বালু মহালের সীমানা সম্পূর্ণরূপে ইজারাদারকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।