নরসিংদীতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ওপর হামলা, নেপথ্যে কারা?

Sadek Ali
আশিকুর রহমান, নরসিংদী
প্রকাশিত: ২:৫৫ অপরাহ্ন, ৩০ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ৮:৫২ অপরাহ্ন, ৩০ অক্টোবর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

নরসিংদীতে সড়ক ও ফুটপাত থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানের সময় জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নরসিংদী মডেল থানায় একটি অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে। 

বুধবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে নরসিংদী বড় বাজারের ফল পট্টি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

আরও পড়ুন: বরগুনা-২ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী কর্নেল হারুন আর রশিদকে ধান উপহার দিলো নুরুল ইসলাম

হামলায় পৌর প্রশাসনের দুইজন সহ চারজন গুরুত্বর আহত হয়।

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ কলিমউল্লাহ অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

আরও পড়ুন: বিলাসবহুল গাড়িতে বহন হচ্ছিল গাঁজা, বাধা দিলেন পুলিশ

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান কর্মসূচি চলাকালে পৌর প্রশাসক ও স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক  মোঃ মনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে নরসিংদী পৌরসভা মোড় থেকে বড়বাজারের সুতাপট্টির মোড় উচ্ছেদ শেষ করে ফলপট্টিতে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করলে একদল উচ্ছৃঙ্খল লোক ভুয়া ভুয়া শ্লোগান দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ওপর লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় নরসিংদী পৌরসভার ভেকুচালক টিপু সুলতান, নিরাপত্তা কর্মী সবুজ মিয়া, ছাত্র প্রতিনিধি রাকিব মিয়াসহ চারজন গুরুত্বর আহত হন। পরে পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান বন্ধ রেখে পিছু হটতে বাধ্য হন। এঘটনার পর রাত ৯টায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন, পুলিশ সুপার মোঃ মেনহাজুল আলম সহ প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। উর্ধতন কর্মকর্তারা বড়বাজার ও ফলবাজারের নেতৃত্ববৃন্দদের সাথে বৈঠকে বসেন। এসময় বড়বাজার বণিক সমিতির সভাপতি মোঃ বাবুল সরকার তার বক্তব্যে দাবি করেন এ হামলা ফল বাজারের ব্যবসায়ীরা করেনি। বহিরাগত দুষ্কৃতকারীরা এ হামলা চালিয়েছে। হামলা করে তারা ফল ব্যবসায়ীদের ফল লুট করে নিয়ে গেছে। তাই এ দায় ফল পট্টির ব্যবসায়ীরা নিতে পারেন না। অপরদিকে ফলবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুজন সাহা তার বক্তব্যে পূর্বেরজনের সাথে সুর মিলিয়ে একই কথা পুনরাবৃত্তি করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, বেলা সাড়ে ১২টার দিকে পৌর প্রশাসক মোঃ মনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে পৌর কর্মকর্তা ও আনসার মিলে প্রায় ৩০ থেকে ৪০জনের উচ্ছেদ অভিযানের একটি দল ফলবাজারে প্রবেশ করেন। এসময় হ্যান্ডমাইক দিয়ে রাস্তা দখল করে দোকানের প্রসার সাজিয়ে বসা ব্যবসায়ীদের দোকান সরিয়ে ফেলার আহ্বান জানান। ওইসময় নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসা ছিলেন ফলবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোঃ মতবর মিয়া, সাধারণ সম্পাদক সুজন সাহা, ফল ব্যবসায়ী জীবন সাহা ও বুলবুল মিয়াসহ আরও অনেকে। মাইকের ঘোষণা শুনার পর তারা তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বের হয়ে দোকানীদের বাইরে বের হওয়ার নির্দেশ দেন এবং উচ্ছেদ প্রতিরোধ করার জন্য উস্কে দেয়। তাদের উস্কানি ও মদদে দোকানীরা উচ্ছেদ কাজে বাঁধা দেয় এবং ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে উশৃংখল দোকানীরা লাঠিসোটা নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ওপর হামলা করার চেষ্টা করলে আনসার সদস্যরা তাদেরকে নির্বিত্ত করার চেষ্টা করে বর্থ্য হয়। পরে অবস্থার বেগতি দেখে পৌর প্রশাসক মোঃ মনোয়ার হোসেন ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা পিছু হটতে বাধ্য হন। এসময় হামলাকারীরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ এবং লাঠি দিয়ে পিটিয়ে উচ্ছেদ অভিযানের চার সদস্যকে গুরুত্বর আহত করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, ওইদিন ভ্রাম্যমাণ আদালতের ওপর কারা হামলা চালিয়ে ছিল তা দৃশ্যমান। অন্যকে দোষারোপ না করে সিসি ক্যামেরা ও ভিডিও ফুটেজ দেখলেই তা বের হয়ে আসবে এবং প্রকৃত অপরাধদের চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।

এদিকে সিসি ক্যামেরা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ভ্রাম্যমাণ আদালতের ওপর হামলাকারীরা সকলেই ভাসমান ফল ব্যবসায়ী। আর হামলার সময় ওইখানে উপস্থিত ছিলেন ফলবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোঃ সাধারণ সম্পাদক সুজন সাহা, ফল ব্যবসায়ী জীবন সাহা ও বুলবুল মিয়া সহ সমিতির নেতৃবৃন্দ। তাদের ইন্ধনেই এই হামলার ঘটনা ঘটে বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়। 

এদিকে নরসিংদী বাজার বণিক সমিতির সভাপতি বাবুল সরকার বলেন, জেলা প্রশাসনের অভিযানে ব্যবসায়ীরা কোনো হামলা চালায়নি। এ ঘটনার সঙ্গে কোনো ব্যবসায়ী জড়িত নয়। একদল উচ্ছৃঙ্খল ও দুর্বৃত্ত অভিযানে হামলা চালায়। আমরা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি করেছি। আমরা ব্যবসায়ীরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।

নরসিংদী পৌর প্রশাসক ও স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক মোঃ মনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা পৌর এলাকায় নিয়মিত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতেছি। সড়ক থেকে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে মাইকিং করে সতর্ক করা হয়েছে। বুধবার আমরা পৌরসভা ও জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত পৌরসভার সামনে থেকে বাজার পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করছিলাম। আমরা যখন বাজারের ফলপট্টিতে অভিযানে ছিলাম তখন কিছু উচ্ছৃঙ্খল মানুষ আমাদের দিকে তেড়ে এসে হামলা চালায়। এতে আমার পৌরসভার দুজন কর্মচারীসহ চারজন আহত হয়েছেন। মামলা দায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রতিনিধিকে জানান, গতকাল (বুধবার) রাতেই এ বিষয়ে নরসিংদী পৌরসভা কর্তৃক নরসিংদী মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। 

এ ব্যাপারে নরসিংদী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন বলেন, নরসিংদী বাজারের ঘটনার প্রেক্ষিতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। এ সময় ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন তারা হামলার সঙ্গে জড়িত নন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের ওপর দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়েছে। এ হামলার ঘটনায় একটি মামলা দায়েরের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এ ঘটনার পর সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হলধর দাস বলেন, সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশ ও জেলা প্রশাসন কঠোর হলে হয়তো পরবর্তীতে পুলিশ ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের ওপর এ ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনা ঘটত না। শুধু গ্রেপ্তার করলেই হবে না, সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার নিশ্চিত করে সেটা জনগণের সামনে তুলে ধরলে অপরাধীরা ভয় পাবে এবং অপরাধ প্রবণতা কমে আসবে।