এক রক আইকনের গল্প

Sadek Ali
ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্তী
প্রকাশিত: ৫:০৫ অপরাহ্ন, ১৮ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ৭:১২ অপরাহ্ন, ১৮ অক্টোবর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

বলছিলাম বাংলাদেশের রক আইকন, গিটারের জাদুকর, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গিটারবাদক ও সংগীত পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যান্ড সংগীতের অনন্য তারকা, জনপ্রিয় ব্যান্ড এলআরবি এর প্রাণপুরুষ কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী প্রয়াত আইয়ুব বাচ্চু ভাইয়ের কথা।

শনিবার (১৮ অক্টোবর) তাঁর ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী।

আরও পড়ুন: জুলাই সনদ: যাদের রক্তে লেখা ইতিহাস, তাদেরই বাদ দেওয়া কেন?

তাঁর মৃত্যুতে বাংলাদেশের সংগীত জগতে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তা কোনোদিন পূরণ হওয়ার নয়।

আমি এই প্রবাদপ্রতীম কিংবদন্তি শিল্পী শ্রদ্ধেয় আইয়ুব বাচ্চু ভাইয়ের আত্মার শান্তি কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।

আরও পড়ুন: ড. ইউনূসের তিন-শূন্য তত্ত্ব: বৈশ্বিক স্লোগান, জাতীয় নীরবতা

বাচ্চু ভাইয়ের প্রতি এই শোকগাথা কোনোদিন শেষ হওয়ার নয়।

আইয়ুব বাচ্চু ভাইয়ের গানের সঙ্গে অনেক আগে থেকেই পরিচিত থাকলেও, তাঁর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত প্রথম পরিচয় ঘটে ২০১০ সালে।

সেই সময় বিজয়ের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আমার নিজ জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সর্বকালের সবচেয়ে বড় কনসার্টের আয়োজন করেছিলাম বিজয়ের মাস ডিসেম্বর মাসে, নিয়াজ মুহাম্মদ স্টেডিয়ামে।

‘বিজয়ের কনসার্ট’ নামের সেই ওপেন-এয়ার কনসার্টে প্রথমবারের মতো ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পরিবেশন করে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যান্ডদল এলআরবি, রকস্টার মিলা, নির্ঝর এবং চট্টগ্রামের অপু।

প্রায় ৫০,০০০ মানুষের সমাগম হয়েছিল ঐ কনসার্টে।

জাতীয় পর্যায়ের এমন একটি কনসার্ট আয়োজনের পথে ছিলো শত বাধা-বিপত্তি!

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অন্যতম সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘গুণীজন সংবর্ধনা পরিষদ’-এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত সেই মেগা কনসার্টের প্রধান শক্তি ও অনুপ্রেরণা ছিলো ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন।

বিশেষ কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করতে চাই তৎকালীন জেলা প্রশাসক এবং পরবর্তীতে পূর্ণ সচিব হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত, প্রশাসনের অন্যতম চৌকস কর্মকর্তা ও লেখক শ্রদ্ধেয় মোঃ আবদুল মান্নানকে।

এছাড়া কৃতজ্ঞতা জানাই তৎকালীন দুইজন দক্ষ পুলিশ সুপার — বর্তমানে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত মোঃ মোখলেছুর রহমান ও জামিল আহমদকে।

তাদের প্রত্যক্ষ সমর্থন ছাড়া ঐ আয়োজন সম্ভব হতো না।

পাশাপাশি কৃতজ্ঞতা জানাই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও গণমাধ্যমকর্মী, আমার দীর্ঘদিনের বন্ধু সঞ্জীব ভট্টাচার্য্য, বন্ধু সুদীপ দও তনু, ছোট ভাই নারায়ণ এবং যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী (লস অ্যাঞ্জেলেসে বসবাসরত) বিচক্ষণ ইভেন্ট এক্সপার্ট, ফ্যাক্টর থ্রি সলিউশনস-এর কর্ণধার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আরেক অনুজ সাহেদ হোসেনকে।

তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় পরের বছরও মহাধুমধামে বিজয়ের মাসের কনসার্ট ‘বিজয়ানন্দ’ অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে অংশ নেয় রক আইকন আইয়ুব বাচ্চু ভাইয়ের ব্যান্ড এলআরবি, দলছুট ও হৃদয় খান।

এই দুটি মেগা কনসার্ট আজও ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীর হৃদয়ে অমলিন হয়ে আছে।

যে দুটি কনসার্ট নিয়ে এত কথা, সেই কনসার্টগুলোর সাফল্যের পেছনে বাচ্চু ভাইয়ের অকুণ্ঠ সহযোগিতা ছিলো।

তাঁর সহায়তা ছাড়া কোনোভাবেই জেলা শহরে টিকিটবিহীন ওপেন-এয়ার কনসার্ট আয়োজন সম্ভব হতো না।

তাই তাঁর কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ।

এরপর থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনে, এবি কিচেনসহ সবখানেই বাচ্চু ভাইয়ের সান্নিধ্যের স্বাদ ও সুযোগ লাভ করেছি।

আজ ১৮ই অক্টোবর — সেই নিরহংকারী, অভিমানী, শিশুসুলভ এক মেগাস্টার অফ দ্য মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি বাচ্চু সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী।

প্রতিবারের মতো এবারও মগবাজারের একটি কনভেনশন সেন্টারে বাচ্চু ভাইয়ের স্মৃতিচারণ ও স্মরণসভার আয়োজন করেছেন তাঁর দীর্ঘদিনের সুহৃদ ও সহকর্মী, প্রখ্যাত মিউজিশিয়ান শামীম ভাই, মাসুদ ভাইসহ অনেকেই।

প্রতিবছর এই অনুষ্ঠানে আমাকে আন্তরিকভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

আমি নিজেকে ধন্য মনে করি, এমন একজন গুণী মানুষের জন্মদিন কিংবা মৃত্যুদিনের স্মরণে সম্পৃক্ত হতে পারি বলে।

বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই প্রয়াত বাচ্চু ভাইয়ের সহধর্মিণী প্রিয় চন্দনা ভাবীকে —

অত্যন্ত বিনয়ী, স্নিগ্ধ একজন নারী, যিনি আজও বাচ্চু ভাইকে ভালোবাসায় সিক্ত রেখে চলেছেন একাকী !

বাচ্চু ভাই ছিলেন খোলা আকাশের মতো বিশাল, সমুদ্রের মতো গভীর।

বাংলাদেশের সংগীতাঙ্গনে তাঁর চলে যাওয়া কখনোই পূরণ হওয়ার নয়।

এই লেখাটি যখন লিখছি তখন আমি লক্ষ্মীপুর সার্কিট হাউজে, রাত সোয়া দুইটা বাজে।

মনে পড়ছে বাপ্পী খান ভাইয়ের কথায় বাচ্চু ভাইয়ের অনবদ্য সৃষ্টি—

“এখন অনেক রাত, খোলা আকাশের নিচে, জীবনের অনেক আয়োজন, তাই আমি বসে আছি, দরজার ওপাশে…”

বাচ্চু ভাইয়ের কালজয়ী গানগুলো — “সেই তুমি (চলো বদলে যাই)”, “রূপালী গিটার”, “সাড়ে তিন হাত মাটি”, “উড়াল দেবো আকাশে”, “মেয়ে”, “চাঁদ মামা”, “বাংলাদেশ”, “মাধবী”, “হকার” —

আজও আমাদের চোখ ভিজিয়ে দেয়, হৃদয় ছুঁয়ে যায়।

এই গানগুলো বেঁচে থাকবে যতদিন বাংলাদেশের সংগীতাঙ্গন সরব থাকবে।

এই মহাপুরুষ আইয়ুব বাচ্চু ভাইয়ের জন্মদিন কিংবা মৃত্যুদিন কখনোই ছোট পরিসরে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়।

রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে এই কীর্তিমান শিল্পীর স্মৃতিচারণে।

তাই আমি বারবারই বলেছি —

“বাচ্চু ভাইয়ের নামে চালু হোক ‘আইয়ুব বাচ্চু মিউজিক অ্যাওয়ার্ড’।”

এই আয়োজনে আমি ও আমার প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পাশে থাকার অঙ্গীকার করছি।

একজন চিকিৎসক হিসেবে বলতে চাই —

আইয়ুব বাচ্চু ভাই বড্ড অকালে চলে গেছেন।

দেশের সংগীতের স্বার্থে তাঁর আরও অনেক দিন বেঁচে থাকার প্রয়োজন ছিলো।

তাই সকল শিল্পীর প্রতি আমার একজন চিকিৎসক হিসাবে অনুরোধ —

স্বাস্থ্য সচেতন হোন। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন (বছরে অন্তত দু’বার)।

স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন করুন, ধূমপান ও রেডমিট (গরু, খাসি) পরিহার করুন,

প্রতিদিন অন্তত ৪০ মিনিট হাঁটুন।

আপনার স্বাস্থ্যের যত্নে ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সবসময় আপনার পাশে থাকবে — এই অঙ্গীকার করছি।

পরিশেষে একটি কথাই বলবো —

আইয়ুব বাচ্চু ভাই বেঁচে থাকবেন কোটি প্রাণে, বাচ্চু ভাই 

বেঁচে থাকবেন রূপালী গিটারের ছয়টি তারে !


লেখক- ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্তী

ব্যবস্থাপনা পরিচালক

ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা

ইউনিভার্সেল মেডিকেল সার্ভিসেস লিমিটেড, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ।