শান্তিগঞ্জে ট্রাক-সিএনজি সংঘর্ষে মা-মেয়েসহ নিহত ৩, চালক আটক

সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলায় ট্রাক ও সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষে মা-মেয়েসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হচ্ছেন সুনামগঞ্জ পৌর শহরের উকিলপাড়ার বাসিন্দা, মৃত প্রণয় দাশের স্ত্রী আবাদিত কেশবা (৪০) এবং তার মেয়ে, সুনামগঞ্জের সতীশ চন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী প্রথমা চৌধুরী। এই পরিবারের কোনো সদস্যই আর বেঁচে নেই। দু’বছর আগে মারা গেছেন কেশবার স্বামী। এবার মা-মেয়ে মারা গেছেন। তারা হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার নবীপুর গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা ছিলেন। অপর নিহত সিএনজি চালক সজল ঘোষ (৫০) শহরের নবীনগর এলাকার বাসিন্দা। নিহত তিনজনই ইসকন প্রভুর ভক্ত ছিলেন।

এঘটনায় ঘাতক ট্রাকের চালককে আটক করে পুলিশে দেওয়া হয়েছে। আটককৃত চালকের নাম পারভেজ আহমদ (৩০)। তিনি দিরাই থানার ভাটিপাড়া ইউনিয়নের মৃত জালাল উদ্দিনের ছেলে। তার বর্তমান ঠিকানা সিলেটের বাদাম বাগিচা।

আরও পড়ুন: চুয়াডাঙ্গায় বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল চালকের মৃত্যু

শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে উপজেলার পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের শত্রুমর্দন বাঘেরকোনা গ্রামের পুরান বাড়ির সামনে সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে। ঘটনাস্থলে দুইজন নিহত হন। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় প্রথমা চৌধুরীকে শান্তিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রথমার মৃত্যু নিশ্চিত করেছেন শান্তিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ইকবাল হাসান। তিনি বলেন, প্রথমে একজনকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন কিছু লোক। কিন্তু ওই রোগী পথেই মারা গেছেন। পরে হাইওয়ে পুলিশ আরও দু’জনকে নিয়ে গিয়েছেন। তারা ও মৃত ছিলেন। হাসপাতালে আনার আগেই তারা মারা গিয়েছিলেন।

নিহতদের ঘনিষ্ঠজন গোবিন্দ কুমার দাশ মরদেহগুলো সনাক্ত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, সিএনজি চালক সজল ঘোষসহ নিহত সকলেই ইসকন ভক্ত ছিলেন। তিনি বলেন, "খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসে তাদেরকে দেখেছি। এটা অত্যন্ত লোমহর্ষক ও ভয়ঙ্কর সড়ক দুর্ঘটনা। আমরা এসে ঘটনাস্থলে দু’জনের মরদেহ পেয়েছি। মেয়েটাকে (প্রথমা চৌধুরী) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর মারা গেছে। তারা সকলে ইসকন ভক্ত।"

আরও পড়ুন: যাত্রাবাড়ীতে এসি বিস্ফোরণে দগ্ধ শিশুর মৃত্যু

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটের সময় সুনামগঞ্জগামী একটি দ্রুত গতির ট্রাক সিলেটমুখী সিএনজিকে বাঘেরকোনা গ্রামের সামনে সরাসরি ধাক্কা দিলে দুর্ঘটনা ঘটে। চালক নেশাগ্রস্ত ছিলেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

স্থানীয় শাহীন মিয়া ও শাহ আলম জানিয়েছেন, "আমরা ঘুমে ছিলাম। বিকট শব্দ শুনে দৌড়ে বের হয়েছি। গিয়ে দেখি ট্রাকটি পানিতে পড়ে যাচ্ছে। সিএনজি দুমড়েমুচড়ে গেছে। ভয়ঙ্কর মৃত্যু হয়েছে। একজনকে হাসপাতালে পাঠিয়েছি। পরে শুনেছি তিনিও নিহত হয়েছেন।"

খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করেছে শান্তিগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম। টিম লিডার আলমগীর জানান, খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থল এসেছি এবং দু’টি লাশ উদ্ধার করেছি।

জয়কলস হাইওয়ে পুলিশের ওসি সুমন কুমার চৌধুরী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, "দুর্ঘটনায় দুজনের লাশ উদ্ধার করেছি। শান্তিগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আরও একজন মারা গেছেন। দুর্ঘটনা কবলিত ট্রাক ও সিএনজি আমরা উদ্ধার করেছি।"

শান্তিগঞ্জ থানার ওসি আবদুল আহাদ জানিয়েছেন, ঘাতক ট্রাকের চালক ও দুর্ঘটনা কবলিত ট্রাক ও সিএনজি আটক করা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া চলমান।