ঢাবিতে প্রকাশনা উৎসবে গুমের শিকার স্বজনদের হৃদয়স্পর্শী পুনর্মিলন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও প্রচ্ছদ প্রকাশনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত প্রকাশনা উৎসবে গুমের শিকার ব্যক্তিরা ও তাদের স্বজনরা এক মঞ্চে মিলিত হয়েছেন। শনিবার (২৫ অক্টোবর) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ মুজিবুর রহমান হল অডিটোরিয়ামে ব্যারিস্টার মীর আহমাদ বিন কাসেম (আরমান) রচিত ‘আয়নাঘরের সাক্ষী: গুম জীবনের আট বছর’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও “গুম ফ্যাসিবাদী শাসনের নিকৃষ্ট হাতিয়ার” শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, “ফ্যাসিবাদী শাসন একসময় পুরো দেশকে বন্দি করে রেখেছিল। এখন ন্যায়বিচারের পথ খুলেছে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যারা অন্যায় করেছে, তারা বিচারের মুখোমুখি হচ্ছে। আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।”
আরও পড়ুন: ঢাবি শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ, তদন্তের উদ্যোগ বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের
ডাকসুর সহ-সভাপতি (ভিপি) সাদিক কায়েম বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যবহার করে বিরোধী মতের মানুষদের গুম-খুন করা হয়েছে। জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে ব্যারিস্টার আরমানসহ কয়েকজন গুমভুক্তভোগী ফিরে এলেও অনেকেই এখনও নিখোঁজ। ফ্যাসিবাদী রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
‘মায়ের ডাক’-এর সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, আয়নাঘরের সাক্ষী’ বইটি গুম ও নির্যাতনের ভয়াবহ বাস্তবতা উন্মোচন করেছে। আমাদের স্বজনদের জীবিত বা মৃত—এই সত্য জানার অধিকার আমাদের আছে। দীর্ঘ ১৫ বছরের নির্যাতনের সময়কার প্রতিটি ঘটনার স্বচ্ছ তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
আরও পড়ুন: উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
গুম থেকে ফেরত সাবেক ব্রিগেডিয়ার আব্দুল্লাহিল আমান আযমি বলেন, জুলাই বিপ্লব দুর্নীতি ও জুলুমের অবসান ঘটিয়ে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানায়। আমি গুম-খুনের দায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি প্রতিহিংসা নয়, ভবিষ্যতের প্রজন্মকে ফ্যাসিবাদের অন্ধ আনুগত্য থেকে রক্ষা করার জন্য।
বইয়ের লেখক ব্যারিস্টার মীর আহমাদ বিন কাসেম বলেন, “গুম থেকে ফিরে আমি দেশ ছাড়তে চেয়েছিলাম। কিন্তু নিখোঁজদের পরিবারের চোখে প্রশ্ন দেখেই থেকে যাওয়া। যারা ফিরে আসতে পারেননি, তাদের পক্ষে কথা বলাই এখন আমার দায়িত্ব। আমি বিশ্বাস করি, ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশেই আমরা মানবাধিকারের লড়াইয়ে সফল হব।
তিনি আরও বলেন, জুলাই বিপ্লব আমাদের নতুন স্বপ্ন দেখিয়েছে। আমি এমন এক বাংলাদেশের কল্পনা করি, যেখানে মতাদর্শ ও ধর্ম নয়, মানুষই হবে পরিচয়।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তরের হেড অব মিশন হুমা খান, আইনজীবী ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিকী, আন্তর্জাতিক সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান, ব্যারিস্টার আরমানের মা খন্দকার আয়েশা খাতুন ও স্ত্রী ফারহানা ফাখরুবা তাহমিনা, জাতিসংঘ মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার তাজরিয়ান আকরাম খান, প্রচ্ছদ প্রকাশনের চেয়ারম্যান রাজিফুল হাসান বাপ্পী, ডাকসুর সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক মুসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদ এবং শেখ মুজিবুর রহমান হল সংসদের ভিপি মুসলিমুর রহমান।





