বিশ্ববাজারে কমছে নিত্যপণ্যের দাম

Shakil
বাংলাবাজার রিপোর্টার
প্রকাশিত: ১২:৩৯ অপরাহ্ন, ০৪ অক্টোবর ২০২২ | আপডেট: ৭:১১ পূর্বাহ্ন, ০৫ নভেম্বর ২০২২
ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

বিশ্ববাজারে গমসহ ৪টি নিত্যপণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধকালে খাদ্যশস্য রফতানির জন্য কৃষ্ণসাগরের বন্দরগুলো খুলে দিতে জাতিসংঘ-সমর্থিত একটি চুক্তি সইয়ের সুফল পেতে শুরু করেছে সমগ্র বিশ্ব। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। এই চুক্তির প্রভাবেই দেশের বাজারে সরবরাহ বাড়ছে। দাম কমতে শুরু করেছে গম, চিনি, ভোজ্যতেল ও মসুর ডালের।

ইতোমধ্যেই সরকারের গণমুখী উদ্যোগের কারণে দাম কমছে সব ধরনের চাল,ভোজ্যতেল বিশেষ করে সয়াবিন ও পামঅয়েলের। স্থিতিশীল রয়েছে মসুর ডালের দাম। ব্যবসায়ীদের আপত্তি থাকলেও সরকারের পক্ষ থেকে কমানো হয়েছে চিনির দাম।  বাণিজ্য মন্ত্রণালয সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

আরও পড়ুন: ভারতে মানবাধিকার লঙ্ঘন অব্যাহত, পদক্ষেপ সীমিত: যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদন

জানা যায়, রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যকার যুদ্ধের প্রভাবে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা ও দুর্ভিক্ষের পদধ্বনির মাঝেই খাদ্যশস্য রফতানির জন্য কৃষ্ণসাগরের বন্দরগুলো খুলে দিতে সম্মত হয়েছে ওই দুই দেশ। গত ২২ জুলাই জাতিসংঘ-সমর্থিত চুক্তিটি সই করেছে রাশিয়া ও ইউক্রেন। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে। এর ফলে খাদ্যশস্য পরিবহন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা কেটে যাচ্ছে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজার পর্যবেক্ষণকারী সংস্থাগুলোর তথ্য বলছে, ইতোমধ্যে বিশ্ববাজারে গমের দাম কমেছে ৩ থেকে ৪ শতাংশ। দেশেও পাইকারি পর্যায়ে দাম কমার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। দুই-একটি ব্র্যান্ডের আটা-ময়দার দামও কমেছে।  ৫০ কেজির প্রতি বস্তা আটার দাম ২ হাজার ১শ’ টাকা থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭শ’ টাকা। দেশের খুচরা বাজারে এর পুরোপুরি সুফল পেতে আরও কিছু দিন সময় লাগবে। দেশে গম আমদানির অন্যতম উৎস রাশিয়া ও ইউক্রেন। সবশেষ ভারত থেকে গম আমদানি বন্ধের পর স্থানীয় বাজারে লাফিয়ে বাড়তে থাকে আটা-ময়দা এবং এ দিয়ে তৈরি পণ্যের দাম।

আরও পড়ুন: গাজা পুরোপুরি দখলে ইসরায়েলের অভিযান শুরু, ২৪ ঘণ্টায় নিহত ১২৩

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন রাষ্ট্রীয় বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবি’র হিসাব বলছে, এক বছরে আটা-ময়দার দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ৫৬ ভাগ। গত সপ্তাহেও বেড়েছে এই দুটি পণ্যের দাম।

অপরদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে কমতে শুরু করেছে গমের দাম। আগস্টে (২৬ আগস্ট) আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন গমের দর ছিল ৩৬৫ দশমিক ৯৭ ডলার। সেপ্টেম্বরে সেই গম বিক্রি হয়েছে ৩৫৬ দশমিক ৭৮  ডলার দরে। যদিও একবছর আগে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন গম বিক্রি হয়েছে ৩৩৮ দশমিক ৭৮ ডলার দরে। এক বছরের ব্যবধানে গমের দাম ৮ দশমিক ০৩ শতাংশ বাড়লেও গত আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরে দমের দাম কমেছে ২ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

খাদ্য বিভাগের গত আগস্টের তথ্য বলছে, বর্তমানে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৭৬০ টন গম মজুত রয়েছে দেশের সরকারি খাদ্য গুদামগুলোতে। তবে গত বছরের একই সময়ে গমের মজুত ছিল ২ লাখ ৪০ হাজার ৪১০ মেট্রিক টন। চলতি অর্থবছরের ৩ আগস্ট পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনও গম আমদানি না হলেও বেসরকারিভাবে আমদানি হয়েছে ৪২ হাজার ৯৯০ টন গম। গত ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২১-২০২২ অর্থবছরে সরকারিভাবে ৫ লাখ ৪৬ হাজার ১২০ টন গম আমদানি হয়। একই সময়ে বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি হয়েছে ৩৪ লাখ ৬৫ হাজার ৯৯০ টন গম।

এদিকে চলতি বছরে ১ এপ্রিল থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সরকারিভাবে ১ লাখ ৫০ হাজার টন গম সংগ্রহের কথা বলা হলেও মাত্র ২০ টন গম সংগ্রহ করতে পেরেছে খাদ্য অধিদফতর। কিন্তু গত বছর একই সময়ে ১ লাখ ৩ হাজার ২১২ টন গম সংগ্রহ করেছিল খাদ্য বিভাগ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসে ৬৩ হাজার ৪০০ টন গম আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়।

খাদ্য বিভাগ বলছে, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারদর অনুযায়ী, জাহাজীকরণের আগে রাশিয়া ও ইউক্রেনের গম টনপ্রতি ৩৬২ দশমিক ৫০ ডলার, আমেরিকান গম ৩৪১ ডলার। যাবতীয় আমদানি খরচ মিলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রতি কেজি রাশিয়ান গম ৪০ টাকা ৭৩ পয়সা, ইউক্রেনের গম ৪০ টাকা ৫৪ পয়সা এবং আমেরিকান গমের দাম পড়ে ৪০ টাকা ৪০ পয়সা।