নেপালের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কি

কাঠমান্ডু, নেপাল – জেন-জির আন্দোলনের ফলে কেপি শর্মা অলির সরকারের পতনের পর নেপালে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে আসতে পারেন দেশটির সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি। বিক্ষোভকারীদের পছন্দের এই প্রার্থী ভারতের উত্তরপ্রদেশের বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় (বিএইচইউ) থেকে পড়াশোনা করেছেন। তিনি নেপালের সুপ্রিম কোর্টের প্রথম এবং একমাত্র নারী প্রধান বিচারপতি ছিলেন। দুর্নীতির মামলায় এক মন্ত্রীর কারাদণ্ডসহ একাধিক ঐতিহাসিক রায়ের জন্য দেশটিতে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছেন তিনি।
নেপালের প্রবীণ আইন বিশেষজ্ঞ কার্কি দুর্নীতির বিরুদ্ধে নিজের কঠোর অবস্থানের জন্য জনপ্রিয়। দেশটিতে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞার কারণে তরুণরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ চালায়। দু’দিনের তীব্র আন্দোলনের মুখে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি পদত্যাগে বাধ্য হন।
আরও পড়ুন: খোঁজ মিলল নেপালের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলির
গত জুলাইয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য হিমালয়ান টাইমস-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কার্কি বলেছেন, তিনি এখনও বিএইচইউ-তে কাটানো সময়ের স্মৃতি মনে করে আবেগাপ্লুত হন। সেখানে তিনি শুধু পড়াশোনাই করেননি, নাচ শেখার সুযোগও পেয়েছিলেন। তিনি বলেন, বিএইচইউ থেকে চাকরির প্রস্তাব পেলেও তার গন্তব্য ছিল ভিন্ন।
নেপালের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বুধবার জেন-জি আন্দোলনের নেতারা সুশীলা কার্কিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান করার সিদ্ধান্তে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন।
আরও পড়ুন: কাতারে ইসরায়েলি হামলায় ক্ষুব্ধ ট্রাম্প, নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্ত বলে দাবি
বুধবার জেন-জি বিক্ষোভকারীরা নতুন সরকারের সম্ভাব্য নেতৃত্ব নিয়ে আলোচনার জন্য একটি ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। প্রায় চার ঘণ্টার এই বৈঠকে ৫ হাজারের বেশি সদস্য অংশ নেন এবং তাদের বেশিরভাগই সুশীলা কার্কির পক্ষে সমর্থন জানান।
জেন-জি নেত্রী রক্ষা বাম দেশটির সাংবাদিক ভদ্র শর্মাকে বলেন, “আমরা নতুন সরকারের প্রধান হিসেবে সুশীলা কার্কির নাম প্রস্তাব করেছি। সেনাপ্রধানের সঙ্গে আলোচনা শেষে আজই এ প্রস্তাবকে আনুষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হবে।”
প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাঠমান্ডুর মেয়র বালেন শাহের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ইতিবাচক সাড়া দেননি। প্রথমে তাকে নেপালের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শীর্ষ প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল।
২০১৬ সালে নেপালের প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন কার্কি। সততা এবং ব্যক্তি স্বাধীনতার জন্য নির্ভীক বিচারক হিসেবে পরিচিতি পান তিনি। ১৯৭৯ সালে বীরাটনগরে আইনজীবী হিসেবে তার পেশাজীবনের শুরু হয়।
পর্যায়ক্রমে পদোন্নতি পেয়ে ২০০৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হন এবং পরবর্তীতে ইতিহাস গড়েন। তার নিয়োগের সময় নেপালের তিনটি সর্বোচ্চ পদ—রাষ্ট্রপতি, সংসদের স্পিকার এবং প্রধান বিচারপতি—সবগুলোই নারীদের হাতে ছিল।
সদ্য পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলির নেতৃত্বাধীন সাংবিধানিক কাউন্সিল কার্কিকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল।
নেপালের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে কার্কি বেশ কিছু ঐতিহাসিক রায় দেন। দুর্নীতির দায়ে ক্ষমতাসীন সরকারের মন্ত্রী জয়া প্রকাশ গুপ্তকে দোষী সাব্যস্ত করে কারাগারে পাঠানো ঘটনাটি নেপালের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ঘটেছিল।
তিনি শান্তিরক্ষী মিশন, দুর্নীতি এবং বিতর্কিত নিজগড় ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় ঘোষণা করেছেন। এছাড়া নারীদের সন্তানের নাগরিকত্ব প্রদানের অধিকার সম্পর্কিত প্রগতিশীল রায়ও দিয়েছেন।
সুশীলা কার্কি ১৯৭৫ সালে ভারতের বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৮ সালে তিনি ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নেন।
২০১৭ সালে কিছু রায়ের কারণে সরকারের বিরাগভাজনে পরিণত হন তিনি। ক্ষমতাসীন জোট পার্লামেন্টে তার বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব উত্থাপন করে। অভিশংসন প্রস্তাবে তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব ও নির্বাহী ক্ষমতায় হস্তক্ষেপের অভিযোগ আনা হয়েছিল, বিশেষ করে পুলিশপ্রধান নিয়োগ সংক্রান্ত এক বিরোধের কারণে।