দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ১, আহত ৭

দক্ষিণ লেবাননের মসাইলেহ গ্রামে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত একজন নিহত ও সাতজন আহত হয়েছেন। শনিবার ভোরে সংঘটিত এই হামলায় বেশ কয়েকটি যানবাহন ধ্বংস হয় এবং রাজধানী বেইরুতের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সাময়িকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, নিহত ব্যক্তি একজন সিরীয় নাগরিক। হামলার সময় একটি সবজি পরিবহনকারী ট্রাক ঘটনাস্থল দিয়ে যাওয়ার সময় লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন: গাজায় প্রথম দফায় মুক্তি পেলেন যারা
লেবাননের সরকারি বার্তা সংস্থা ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সি এনএনএ জানায়, শনিবার সকাল থেকে ইসরায়েলি ড্রোনগুলো রাজধানী বেইরুত ও আশপাশের আকাশে টহল দিচ্ছে।
লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন এই হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, দক্ষিণ লেবাননে আবারও বেসামরিক স্থাপনায় নির্বিচারে আগ্রাসন চালিয়েছে ইসরায়েল, যার কোনো বৈধতা নেই। তিনি আরও বলেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর এমন হামলা উদ্বেগজনক।
আরও পড়ুন: ঢাকায় আসছেন ড. জাকির নায়েক
ইসরায়েলের দাবি ও জাতিসংঘের উদ্বেগ
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, হামলার লক্ষ্য ছিল হিজবুল্লাহর অবকাঠামো পুনর্গঠনে ব্যবহৃত ভারী যন্ত্রপাতি। তবে লেবানন বলছে, এসব হামলায় সাধারণ মানুষ ও বেসামরিক সম্পদই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ফলকার টার্ক চলতি মাসের শুরুতে জানান, ২০২৪ সালের নভেম্বরের যুদ্ধবিরতির পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে কমপক্ষে ১০৩ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
বর্তমানে ইসরায়েলি বাহিনী লেবাননের অভ্যন্তরে কয়েকটি অবস্থানে মোতায়েন রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতির পর থেকেই প্রায় প্রতিদিনই লেবাননের আকাশে ইসরায়েলি হামলা বা নজরদারি চলছে। কয়েক দিন আগেই ড্রোন হামলায় দুই ব্যক্তিকে হত্যা করে ইসরায়েল, যাদের তারা হিজবুল্লাহ সদস্য বলে দাবি করেছে।
হিজবুল্লাহর অবস্থান ও রাজনৈতিক চাপ
শুক্রবার লেবানন কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা হিজবুল্লাহর প্রয়াত নেতা হাসান নাসরাল্লাহর স্মরণসভায় হামলা চালানোর একটি ইসরায়েলি ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করেছে এবং বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
হিজবুল্লাহর বর্তমান মহাসচিব নাঈম কাসেম সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা নেতার কবর জিয়ারতাকালে বলেন, হিজবুল্লাহ কখনোই তার অস্ত্র ত্যাগ করবে না।
অন্যদিকে, মার্কিন বিশেষ দূত টম ব্যারাক আল-জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করা লেবানন সরকারের দায়িত্ব, তবে তিনি স্বীকার করেন যে, সংগঠনটির রাজনৈতিক দল হিসেবে বৈধ অবস্থান বিষয়টিকে জটিল করে তুলেছে।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের তীব্র চাপে লেবানন সরকার সেনাবাহিনীকে হিজবুল্লাহ নিরস্ত্র করার পরিকল্পনা প্রস্তুতের নির্দেশ দেয়।
২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের ইসরায়েল আক্রমণের পরদিনই হিজবুল্লাহ উত্তর ইসরায়েলে রকেট হামলা চালালে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। এতে লেবাননে অন্তত ৪ হাজার মানুষ নিহত হন এবং দেশটিতে প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়। ইসরায়েলে নিহত হয় ১২৭ জন, যার মধ্যে ৮০ জন সেনা।
গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও লেবাননে ইসরায়েলের টানা হামলা পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। এদিকে জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজার যুদ্ধবিরতির পর কয়েক হাজার ফিলিস্তিনি ধ্বংসস্তূপে ফেরত গেছেন এবং জরুরি মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ চলছে।