মেলিসার তাণ্ডবে ক্যারিবীয় অঞ্চলে মৃত্যু ৩০, হাইতিতেই নিহত ২৫
প্রবল শক্তিশালী হারিকেন মেলিসা ক্যারিবীয় অঞ্চলে তাণ্ডব চালিয়ে অন্তত ৩০ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। এর মধ্যে হাইতিতেই নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৫ জন। জ্যামাইকা, কিউবা ও বাহামাসেও ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ ঘটিয়েছে এই ঝড়।
হাইতির দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলীয় শহর পেতিত-গোয়েভে নদীর বাঁধ ভেঙে তীব্র বন্যায় অন্তত ২৫ জন মারা গেছেন বলে জানিয়েছে দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা।
আরও পড়ুন: পেন্টাগনকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার নির্দেশ দিলেন ট্রাম্প
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
নিহতদের মধ্যে অন্তত ১০ জন শিশু রয়েছে, আর ১২ জন এখনো নিখোঁজ।
আরও পড়ুন: গাজায় ইসরায়েলের ফের বিমান হামলা, যুদ্ধবিরতি আবারও অনিশ্চিত
সারা দেশে এক হাজারের বেশি বাড়ি প্লাবিত হয়েছে এবং ১২ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন।
গ্যাং সহিংসতা ও দারিদ্র্যের কারণে দীর্ঘদিন ধরেই বিপর্যস্ত হাইতি। দেশটিতে ১৩ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত। এখন ঝড়ের পানিতে এসব অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরও ডুবে গেছে।
স্থানীয় এক বাসিন্দা ফরচুন ভাইটাল বলেন, আমরা তো আগেই না খেয়ে বেঁচে আছি। এর ওপর যদি হারিকেন আসে, আমরা সবাই মরে যাব।
মঙ্গলবার জ্যামাইকার উপকূলে ঘণ্টায় ১৮৫ মাইল বেগে আঘাত হানে হারিকেন মেলিসা—দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড়।
রাজধানী কিংস্টন বড় ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেলেও দেশজুড়ে প্রায় ৭৭ শতাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
শুধু জ্যামাইকাতেই আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়াতে পারে বলে ধারণা দিয়েছে অ্যাকুওয়েদার।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী অ্যান্ড্রু হোলনেস ক্ষতিগ্রস্ত হাসপাতালগুলো পরিদর্শনে গিয়ে জানান, উদ্ধার ও পুনর্গঠন কাজ শুরু হলেও মানুষ এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ডেসমন্ড ম্যাকেঞ্জি বলেন, ২৫ হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে, কাউকেই ফিরিয়ে দেওয়া হবে না।
কিউবায় ব্যাপক ধ্বংস, বিচ্ছিন্ন ২ লাখ মানুষ
মঙ্গলবার রাতে হারিকেন মেলিসা কিউবার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় গুয়ামা এলাকায় ঘণ্টায় ১২০ মাইল বেগে আঘাত হানে।
ঝড়ের প্রভাবে সান্তিয়াগো প্রদেশে অন্তত ২ লাখের বেশি মানুষ যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
দেশজুড়ে ৭ লাখ ৩৫ হাজার মানুষকে আগেভাগে সরিয়ে নেওয়া হয়।
কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগেল দিয়াজ-কানেল বলেন, ঝড়টি ব্যাপক ক্ষতি করেছে। ফসল, বিদ্যুৎ ও অবকাঠামোর ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ বুধবার আবারও যুক্তরাষ্ট্রকে কিউবার ওপর আরোপিত অর্থনৈতিক অবরোধ তুলে নেওয়ার আহ্বান জানায়—যে সময় দেশটি বিপর্যয়ে জর্জরিত।
বুধবার সন্ধ্যা নাগাদ মেলিসা বাহামাস দ্বীপপুঞ্জের ওপর দিয়ে দুর্বল হয়ে ক্যাটাগরি–১ ঝড়ে পরিণত হয়।
সরকারি তথ্যমতে, ঝড়ের আগেই প্রায় দেড় হাজার মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়—যা দেশটির ইতিহাসে অন্যতম বড় উদ্ধার অভিযান।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ
বিজ্ঞানীরা বলছেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে হারিকেনগুলো আরও দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করছে এবং ঘন ঘন আঘাত হানছে।
ক্যারিবীয় দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতির দায়ে ধনী, দূষণকারী দেশগুলোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ বা ঋণমুক্তি দাবি করছে।
ক্যারিবীয় কমিউনিটি ক্লাইমেট চেঞ্জ সেন্টার এক বিবৃতিতে বলেছে, হারিকেন মেলিসার দ্রুত শক্তি অর্জন প্রমাণ করে জলবায়ু সংকট এখনই মোকাবিলা করা জরুরি।
২০২৩ সালে জাতিসংঘের উদ্যোগে গঠিত ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ তহবিল উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা-পরবর্তী পুনর্গঠনে সহায়তা করার কথা থাকলেও অর্থায়ন এখনো পর্যাপ্ত নয়।
বিশ্বজুড়ে সহায়তার প্রতিশ্রুতি
হারিকেনের ক্ষয়ক্ষতি দেখে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ হাইতি, জ্যামাইকা ও কিউবায় ত্রাণ ও উদ্ধার সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে।
জ্যামাইকার মন্টেগো বে শহরের এক বাসিন্দা বলেন, “জল আমার কোমর পর্যন্ত উঠেছিল। উদ্ধারকর্মীরা দরজা ভেঙে আমাকে ও আমার সন্তানকে বাঁচিয়েছে। বাবার লাগানো সব গাছপালা এখন নিশ্চিহ্ন।
হারিকেন মেলিসা কেবল প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, বরং জলবায়ু পরিবর্তনের এক ভয়াবহ সতর্কবার্তা। হাইতি, কিউবা ও জ্যামাইকার ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে দাঁড়াতে সময় লাগবে বহু বছর।





