যে কারণে বৃষ্টির দিনেই খিচুড়ি খেতে ইচ্ছে হয়

ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ঋতু বর্ষাকালের শুরু হয় আষাঢ় মাস দিয়েই। আষাঢ় মানেই আবহমান বাঙলার প্রকৃতিতে বৃষ্টির আনাগোনা। আর বৃষ্টি মানেই বাসায় থাকা। বিভিন্ন রেসিপিতে খিচুড়ির স্বাদ নেওয়া। বৃষ্টির দিনে খিচুড়ি খাওয়ার চলন বাঙালির বহুদিনের।
বৃষ্টির দিনে খিচুড়ি খেতে ইচ্ছে হওয়া একটি প্রাকৃতিক প্রবণতা, যা আবহাওয়া, সংস্কৃতি এবং শারীরিক সুস্থতার মিশ্রণ। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের মতো অঞ্চলে, যেখানে বর্ষাকাল দীর্ঘ ও আর্দ্র, সেখানে খিচুড়ি হয়ে উঠেছে আরামদায়ক ও পুষ্টিকর খাবার।
আরও পড়ুন: রঙ ফর্সাকারী ক্রিমে যে ভয়ংকর ক্ষতি হচ্ছে আপনার
কেন বৃষ্টির দিনে খিচুড়ি খেতে ইচ্ছে হয়?
আবহাওয়ার প্রভাব: বৃষ্টির দিনে ঠান্ডা ও আর্দ্র আবহাওয়া শরীরকে আরামদায়ক ও উষ্ণ খাবারের দিকে আকৃষ্ট করে। খিচুড়ি, যা গরম ও পুষ্টিকর, এই আবহাওয়ার সঙ্গে মানানসই। এটি শরীরকে উষ্ণ রাখে এবং মনকে প্রশান্তি দেয়।
আরও পড়ুন: সপ্তাহে কতবার ফ্রিজ বন্ধ করা উচিত, জানেন কী?
স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর: খিচুড়ি সাধারণত চাল ও ডাল দিয়ে তৈরি হয়, যা হজমে সহজ ও পুষ্টিকর। বর্ষাকালে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ বৃদ্ধি পায়; খিচুড়ি তার সহজ হজম ক্ষমতা ও পুষ্টিগুণের জন্য এই সময়ের জন্য আদর্শ খাবার।
সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য: বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টির দিনে খিচুড়ি খাওয়ার একটি দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে। বাঙালি পরিবারের মহিলারা আকাশ দেখে আজকের মেনু ঠিক করেন—খিচুড়ি, ভাজা-পোড়া ও ভর্তা। এটি পরিবারের সদস্যদের একত্রিত করে এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে বিবেচিত হয় ।
মনোরঞ্জন ও আরাম: বৃষ্টির দিনে খিচুড়ি খাওয়ার সময় সাধারণত ঘরোয়া পরিবেশে, প্রিয় গান শুনে বা পরিবারের সঙ্গে গল্প করে খাবার গ্রহণ করা হয়। এটি একটি আরামদায়ক অভিজ্ঞতা, যা মনকে প্রশান্তি দেয়।
এই কারণে, বৃষ্টির দিনে খিচুড়ি খেতে ইচ্ছে হওয়া একটি প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক প্রবণতা, যা আমাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য উপকারী।
বৃষ্টির দিনে এই খিচুড়ি খাওয়া সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বাংলার এক লোকসংস্কৃতির ইতিহাস। শোনা যায়, ১২০০-১৮০০ সালের মধ্যবর্তী কোনও এক সময়ে বাংলায় খিচুড়ির আবির্ভাব। এটিকে ‘গরিবের খাবার’ বলা হলেও প্রথমদিকে ডাল ছিল উচ্চশ্রেণীর খাদ্য। জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে নাকি জনপ্রিয় ছিল এই পদ।
তবে ধারণা করা হয়, খিচুড়ি খাওয়া শুরু হয় বাউলদের মাধ্যমে। এটি ছিল তাঁদের প্রধান খাবার। এই ছন্নছাড়া মানুষ পথে-ঘাটে গান করতেন, আর সম্মানী হিসাবে পেতেন চাল-ডাল। এই উপকরণ দুটি দিয়ে তাঁরা ঝামেলা বিহীনভাবে দ্রুত রান্না করে ফেলতেন এই খাবারটি। এটা ছিল তাঁদের রোজকার খাবার। পরবর্তীতে এই খাবারের নামই হয় খিচুড়ি।